হাতিরঝিলের বিষফোঁড়া ভাঙতেই হবে
তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) বহুতল ভবন ভাঙার জন্য সর্বশেষ আরও ৭ মাস সময় দিয়েছেন উচ্চ আদালত। গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ শুনানি শেষে আদেশ দেন। আদেশে আদালত বলেন- শেষবারের মতো এ সময় দেয়া হলো। এর ফলে ৭ মাসের মধ্যেই ভেঙে ফেলতে হবে বিজিএমইএ ভবন। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ মূলত এই নীতির ওপর ভিত্তি করেই বিজিএমইএ ভবনটি নির্মিত হয়েছিল। আমরা আশা করবো, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিজিএমই ভবন ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দিয়েছিলেন। তারপর হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে ২০১৩ সালের ২৩ মে লিভ টু আপিল দায়ের করেন বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। আপিল বিভাগের রায়ে বলা হয়, ভবন ভাঙার সব ব্যয় বিজিএমইএকেই বহন করতে হবে। এছাড়া এই ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ফৌজদারি অপরাধের বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়। ওই ভবনের জায়গাসহ রাজধানীর কাওরান বাজারের বেগুনবাড়ি-হাতিরঝিল প্রকল্পের মূল পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে হবে বলে আদালত রায়ে বলেন।
২০১০ সালের ২ অক্টোবর রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেল সংলগ্ন হাতিরঝিলে স্থাপিত এই ভবন নিয়ে একটি ইংরেজি দৈনিকে ‘নো প্ল্যান টু ডিমোলিশ আনঅথোরাইজড বিজিএমইএ বিল্ডিং সুন’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তার পর দিন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ডিএইচএম মনির উদ্দিন প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের দৃষ্টিতে আনেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে (সুয়োমোটো) ভবনটি ভাঙার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এ রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ভবন ভাঙার বহুল কাঙ্ক্ষিত রায়ের পর এখন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর বিজিএমইএ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে (রিভিউ) আবেদন করেছিল। আইনের নানা পথ পেরিয়ে এখন শেষ বারের মত ৭ মাস সময় পেল বিজিএমই কর্তৃপক্ষ।
দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন বিষফোঁড়ার মতো। পরিবেশবিদরা তো বটেই খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুবার জনস্বার্থে এই ভবন ভেঙে ফেলার বিষয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু এক অদৃশ্য শক্তির জোরে ভবনটি টিকে থাকে। এখন আদালত ভবনটি ভেঙে ফেলতে শেষ বারের মত ৭ মাস সময় দিয়েছেন । এই সময়ের মধ্যে ভবন ভেঙে ফেলার কোনো বিকল্প নেই। এর আগে রায় দেয়ার সময় আদালত বলেছেন, ‘হাতিরঝিলের লেককে কেন্দ্র করে সৌন্দর্য বর্ধনের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এই ভবনের কারণে সেই সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। এটি একটি বিষফোঁড়া। আদালত এও বলেছেন, সরকারি একটি সংস্থার জমি আরেকটি সংস্থা কীভাবে বিজিএমইকে বরাদ্দ দেয়? জলাধার আইন অনুযায়ীও লেক দখল করে ভবন গড়ে তোলা অবৈধ।’ অবৈধ দখলদারদের নিবৃত্ত করতে হলে বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার কোনো বিকল্প নেই। দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে এটাকে একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। অন্যদেরও এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
এইচআর/এমএস