ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

চালের দামে স্বস্তি ফিরবে কবে?

সম্পাদকীয় | প্রকাশিত: ০৩:৫৮ এএম, ০৫ অক্টোবর ২০১৭

আমাদের দেশে কোনো জিনিসের দাম একবার বাড়লে আর সহজে কমেনা। এই প্রবণতা এবার দেখা যাচ্ছে চালের ক্ষেত্রে। চালের দাম কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না সরকার। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।এমনকি ওএমএসের চালের দামও বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। চালের দাম বাড়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষজন। খোদ খাদ্যমন্ত্রী বলছেন, সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। তাহলে এই সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়ার দায়িত্ব কার? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ করছেটা কি?

ঈদের পর মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছিল কেজিপ্রতি ১০ টাকা। এরপর সরকারের নানা উদ্যোগে বাজারে চালের দাম কমতে শুরু করে। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, শিগগিরই আগের দামে ফিরে আসবে চাল। কিন্তু সে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বাজারে মোটা চালের দাম কিছুটা কমেছে। কিন্তু সেই তুলনায় সরু চালের দাম কমেনি। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চাল কেজিতে দাম কমেছে দুই থেকে তিন টাকা। তবে অন্যান্য চালে কেজিতে দাম কমেছে মাত্র এক থেকে দুই টাকা। পাইকারি বাজারে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা মোটা চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২১০০ থেকে ২৩০০ টাকায়। খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি এ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৬ টাকায়। কয়েকদিন ধরে মোটা চালের দাম কিছুটা কমেছে। কিন্তু খুব বেশি নয়, এখনও বাজার সেভাবে স্বাভাবিক হয়নি। দাম বাড়ছে না, কমছেও না। ৫০ কেজির ভালোমানের মিনিকেট চাল বস্তাপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩১০০ থেকে ৩২০০ টাকায়। নাজিরশাইল ৩৫০০ থেকে ৩৬০০ টাকায়, বিআর আটাশ ২৭০০ থেকে ২৯০০ টাকায়, পাইজাম ২৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত তিন দিনে এসব চালের বস্তায় গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কমেছে।

চালের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, দেশে চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণে চালের মজুত রয়েছে। দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। অবৈধ মজুতদার, আড়তদার, মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছেন। সম্প্রতি সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। খাদ্যমন্ত্রী মজুতদার, আড়তদার এবং মিল মালিকসহ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখনই ভালো হয়ে যান, সময় আছে। আপনারা যেভাবে চালের দাম বাড়াচ্ছেন, সিন্ডিকেট করে দেশে চালবাজি শুরু করেছেন, চাল নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন, একটা বিভ্রাট সৃষ্টির চেষ্টা করছেন তা কোনো অবস্থাতেই বরদাস্ত করা হবে না। চাল নিয়ে সংকট সৃষ্টি ও সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চালের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা হয়ে যাবে। এটা হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর মিল মালিক, আমদানিকারক ও চাল ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সাথে বৈঠক হয়েছে। কিন্তু এরপরও অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। এদিকে বেড়েছে ওএমএসর চালের দামও। ওএমএসে আগে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করা হতো। দাম বাড়িয়ে এবার দ্বিগুণ করা হয়েছে। প্রতি কেজি ৩০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে খোলা বাজারে ১৭ টাকা কেজিতে আটা বিক্রি করা হচ্ছে। ওএমএসের চালের দামও যদি বাড়ে তাহলে মানুষজন যাবে কোথায়?

চালের দাম বৃদ্ধির জন্য যে কারণই থাকুক না কেন তা দূর করতে হবে। যারা চালবাজি করছে তাদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও কিভাবে বাড়ে চালের দাম? নিয়ন্ত্রণহীনভাবে আর কতদিন চলবে চালের বাজার। অনেক মিল মালিকদের কালো তালিকাভুক্ত করা হল। কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি তো হয়নি। শুধু চাল নয় যে কোনো উসিলায় দ্রব্যমূল্য বাড়ানো একটি দুর্ভাগ্যজনক প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো ব্যবস্থায়ও গড়ে উঠেনি। টিসিবিকে সক্রিয় করে বাজারে একটি প্যারালাল সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখার কথা বলা হয় সবসময়। কিন্তু আজো টিসিবিকে সেই মাত্রায় কার্যকর করা যায়নি। অনেকদিন ধরেই চালের বাজার অস্থিতিশীল। চালের দাম বাড়লে তা সীমাহীন দুর্ভোগ সৃষ্টি করে ভুক্তভোগীদের। তাই অবিলম্বে চালের মূল্য স্বাভাবিক ও স্বস্তিদায়ক রাখতে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ।

এইচআর/আরআইপি

আরও পড়ুন