ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বিদ্যুতেও উল্টোযাত্রা : দামে নয়ছয়

মোস্তফা কামাল | প্রকাশিত: ০৪:১৫ এএম, ০৩ অক্টোবর ২০১৭

চালের পরপরই চড়েছে আটা-ময়দার বাজার। ঊর্ধ্বগতির রেশ আশপাশে আরো অনেক কিছুতেই। বাড়তি দামের ব্যাপারে অজুহাতের অন্ত নেই। আপাতত যোগ হচ্ছে বিদ্যুত। সেই তোড়জোর ব্যাপক। সিদ্ধান্ত আগেরই। শুধু ঘোষণা বাকি। ২০০৯ সালে এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে দাম বেড়েছে অন্তত সাতবার। আর পাইকারি পর্যায়ে পাঁচবার। কোনোবারই কোনো মহল থেকে ততো আপত্তি বা প্রতিবাদ আসেনি।

এবারো তেমনই হবে। বাম-আধাবামরা লাল ব্যানার নিয়ে তোপখানা রোড এলাকায় দু’একটা চক্কর দেবে। বড় কোনো প্রতিবাদ হবে না। এ ব্যাপারে সরকারও নিশ্চিত। পদক্ষেপ এগুচ্ছে সেভাবেই। কিন্তু বেচারা জনগণ? আতঙ্কগ্রস্ত ভোক্তাশ্রেণি। জনস্বার্থে সরকারকে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার মৃদু আহ্বান জানানো হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। এ আহ্বানের পেছনে যুক্তিও ব্যাপক। কিন্তু তাতে কি? সাধারণ মানুষ এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হলেও বিক্ষুব্ধ নয়। কারণ, এ নিয়ে সরকারের সাথে বার্গেইন করার মতো রাজনৈতিক শক্তি-সামর্থে মহাশূন্যতা।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগে নয়-ছয় বোঝানোর একটি সংস্কৃতি অনেকদিনের। এ খাতের হিসাব ও তথ্য প্রচারে সরকারগুলো শুভঙ্করের ভেল্কিবাজিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে আসছে। সরকারকে বিদ্যুতে লোকসান দিতে হয় বলে একটি ধারণা ও প্রচারণা বহুদিনের। হিসাবের নয়ছয়ে বিদ্যুৎ থেকে সরকার শুধু নেয়। দেয় না। হিসাবে দেখা যায়, বর্তমানেই বিদ্যুতের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল বাবদ নেয় ২৬ পয়সা। ভর্তুকির টাকার সুদ বাবদ ২১ পয়সা। পাইকারী বিদ্যুতের দামের পার্থক্য ৫ পয়সা।

সরকার ৪.৯০ টাকা দাম ঠিক করলেও হিসাব দেখায় ৪.৮৫ টাকা। প্রতি ইউনিটে এই ৫ পয়সা মানে বছরে ২৭০ কোটি টাকা। তা যায় কোথায়? ফার্নেস অয়েলের দাম অন্তত ১৪ পয়সা কমানো সম্ভব। এছাড়া ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিক্রিতে উদ্বৃত্ত্ব ৮ পয়সা। পাওয়ার ফ্যাক্টর জরিমানা বাবদ আদায় করা হয় ৪ পয়সা। তাহলে মোট দাঁড়ায় ৭৮ পয়সা। অর্থাৎ সরকার যা বাড়াতে চায় এক পয়সাও দাম না বাড়িয়ে তার চাইতেও ৬ পয়সা অর্থাৎ বছরে ৩২১ কোটি টাকা বেশি আদায় করা সম্ভব। সাদামাটা হিসাবেই পরিষ্কার, সরকার চাইলে বিদ্যুতের দাম আরো কমাতে পারে। এরপরও একতরফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানো জনগনের উপর বোঝা চাপানোরই নামান্তর। খাড়ার ঘায়ে মরলেও এই মরাদের পাশে কেউ নেই।

বরাবরের মতোই দাম বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারের অজুহাত দুটি। লোকসান কমানো ও উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি। এ অজুহাতেও বেশ ফাঁকজোক। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানির দাম বাড়েনি। তারওপর বিশ্ব বাজারে জ্বালানির দাম কমছে। বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদকদের মধ্যে জ্বালানি আমদানির লাইসেন্সপ্রাপ্তরা জ্বালানি তেল আমদানি করছেন আন্তর্জাতিক দামে। এতে তাদের উৎপাদন খরচ কম পড়ছে। আর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসি থেকে জ্বালানি ক্রেতাদের উৎপাদন খরচ হচ্ছে অনেক বেশি। এই দ্বিচারিতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে নানা কথা হলেও আজ পর্যন্ত সমন্বয়ের উদ্যোগ নেই।

এছাড়া, বিদ্যুতের দাম আসলে কতো বাড়ানো হয় বা হয়েছে তা নিয়ে বরাবরই চালিয়ে দেয়া হয় উল্টাপাল্টা তথ্য। সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রকৃত তথ্য জানা সম্ভব হয় না। অথবা জানতে দেয়া হয় না। বুঝতে দেয়া হয় না দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি প্রকারান্তরে এক ধরনের রাষ্ট্রীয় চাঁদাবাজি। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার নীরব সাফল্যও।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন।

এইচআর/জেআইএম

আরও পড়ুন