ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

মানবতাবাদী শেখ হাসিনার জন্মদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

শফী আহমেদ | প্রকাশিত: ০৬:৪৫ এএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আওয়ামী লীগ সভাপতি, মানবিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭১তম জন্ম দিন আজ। ১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। আমরা বাঙালি জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এই মানবিক প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাই।

১৯৭৫ সালের পনেরো আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের পরাজিত শক্তির নীল-নকশায় এবং ক্ষমতালিপ্সু কুচক্রীদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে নৃশংসভাবে সপরিবারে নিহত হন। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে সামরিক শাসনের যাঁতাকলে বাঙালি জাতি নিষ্পেষিত হতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর নিজের হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ উপদলীয় কোন্দলে জর্জরিত হয় এবং একাধিকবার ভাঙ্গনের মুখে পড়ে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দলের নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বজনহারা বাংলায় আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। এরপর একে একে কেটে গেল ৩৫ বছর। শেখ হাসিনা মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত মোকাবেলা করে আজ উঠে এসেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। বাঙালি জাতিকে নিয়ে গেছেন উন্নয়নের মহাস্বোপানে। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আজ শুধু নিজ দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে।

কীভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনা অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠলেন আমরা সে আলোচনায় আসি। দেশ ও মানুষের জন্য তাঁর চ্যালেঞ্জের সাফল্য তাঁকে দেশের মধ্যেই নয়, আন্তর্জাতিক দুনিয়াতেও প্রবল আত্মবিশ্বাসের জায়গায় উঠিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-সামরিক শাসনের কবল থেকে গণতন্ত্র মুক্তি। ১৯৮১ সালে খুনি জিয়া খুন হয়ে যান এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে। প্রতিষ্ঠিত হয় একেবারেই দুর্বল, ষড়যন্ত্রকারীদের ক্রীড়নক বিচারপতি ছাত্তারের পুতুল সরকার। সেই সরকারকে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে জেনারেল এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি হয়ে সামরিক শাসন জারি করেন। জাতির বুকে আবারও চেপে বসে সামরিক শাসনের জগদ্দল পাথর। ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত ধারাবাহিক ছাত্র-গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর স্বৈরশাসক এরশাদের পতন হয়। এই আন্দোলন সংগ্রামে দেশরত্ন শেখ হাসিনার দূরদর্শী অবিচল নেতৃত্ব জনগণকে গণতন্ত্র মুক্তির পথ দেখায়।

১৯৯১ সালে তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা হয়। স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি তথা বিএনপি সরকার গঠন করে। নব্বইয়ের আন্দোলনের সকল অর্জন বিএনপি সরকার জলাঞ্জলি দেয়। কিন্তু আমাদের নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই অব্যাহত রাখেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেন। ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত মেয়াদে সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্য হচ্ছে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু এবং জজ আদালতে এর বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করা। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা সহিংসতার অবসান ঘটিয়ে পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদন করা। ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি ন্যায্যতার ভিত্তিতে সম্পন্ন করা। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা। এর বাইরেও অনেক উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে, যা এই স্বল্পপরিসরে লেখা সম্ভব নয়। জাতির দুর্ভাগ্য এই যে, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর ২০০১ সালে নীল-নক্সার নির্বাচনে পুনরায় বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতাসীন হয়।

বেগম জিয়ার পুত্র তারেক রহমান হাওয়া ভবনখ্যাত বিকল্প ক্ষমতাকেন্দ্র গড়ে তুলে দেশের মানুষকে এক অবর্ণনীয় দুর্যোগের মধ্যে ফেলে দেয়। ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার জন্য বিচারপতিদের বয়স বাড়িয়ে সংবিধান সংশোধন করা হয়। এর বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, চোদ্দ দল, মহাজোট তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। আন্দোলনের মুখে ইয়াজউদ্দিন সরকারকে হটিয়ে সেনা সমর্থিত মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকার গঠিত হয়। শুরু হয় ছদ্মবেশী সামরিক শাসন। ২০০৬ সালে নির্বচান স্থগিত হয়ে যায়। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে বাধা দেয়; কিন্তু সকল বাধা উপেক্ষা করে জনগণের টানে দেশে ফিরে আসেন। এরপর তাঁকে কারান্তরীণ করা হয়। জনগণের আন্দোলনের চাপে সেনা সমর্থিত সরকার জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিয়ে, ২০০৮ সালে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।

নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত বক্তব্য অনুযায়ী একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা এখনও অব্যাহত আছে। কোন কোন বিচারের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন এবং রায় কার্যকর হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা সর্বোচ্চ আদালত থেকে রায় হওয়ার পর হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সমুদ্র বিজয় সম্ভব হয়েছে, দেশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুলে দিয়েছেন উন্নয়নের মহাসড়কে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিয়ে আগুন সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে দেশে এক ভীতিকর পরিস্থিতির জন্ম দেয়। সারাবিশ্বে আল কায়েদা, নব্য সন্ত্রাসী আইএস ও বিভিন্ন নামে যে জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটেছে এই জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে, যা কি না সারাবিশ্বে সমাদৃত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সাফল্য ঈর্ষণীয়। কিছুদিন আগে চীনা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন, বিভিন্ন স্মারক ও ২৭টি চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-চীনের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে এসেছেন। এই সফরে চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং ১৩ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করেন। পারস্পরিক সহযোগিতা ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ-চীন ঐকমত্য হয়। বাংলাদেশ এক চীন নীতির প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন ঘোষণা করে। একই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের গোয়ায় ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সামিটে যোগ দিতে ভারতে যান। সেখানে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য নানাবিধ বিষয় উপস্থাপন করেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জঙ্গীবাদ নিরসনে বাংলাদেশের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এও কম সাফল্য নয়।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসের শুরুতে অকাল বন্যায় সুমামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলা প্লাবিত হয়ে যায়। এতে করে ওইসব এলাকার মানুষের ফসল, গৃহপালিত পশু এমনকি ভিটেমাটি বন্যার পানিতে ভেসে যায়। হাওর এলাকার মানুষের এই বিপর্যয় দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরেজমিনে যান। নেত্রকোণা ও সুনামগঞ্জের মানুষের সঙ্গে মিশে তাদের ভাগ্যন্নোয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। ভয়াল এই বিপর্যয় থেকে এখনো হাওরের মানুষের উন্নয়ন না ঘটলেও প্রধানমন্ত্রীর ভালবাসা পেয়ে তারা আপ্লুত।

এটি শেষ হতে না হতেই উত্তরাঞ্চলে দেখা দেয় ভয়াল বন্যা। এতে করে উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবনে নেমে আসে দূর্বিসহ যন্ত্রণা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানেও যান। তাদের পাশে দাঁড়ান। সহায়তার আশ্বাস দেন। সে অনুযায়ী উভয় অঞ্চলে আজও বানভাসী মানুষের জীবনমান উন্নয়নের সরকারী সহায়তা অব্যাহত আছে। বর্তমানে যোগ হয়েছে মিয়ানমার সরকার কর্তৃকসৃষ্ট রোহিঙ্গা সমস্যা। মিয়ানমারের সেনারা রোহিঙ্গাদের যারপর নাই অত্যাচার করে, নাফ নদীর নীল পানিতে রোহিঙ্গাদের রক্তের লাল প্রবাহ তৈরি করে বাংলাদেশের দিকে চাপিয়ে দিচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের উখিয়া অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। ওরা শুধু রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করেনি, বৃদ্ধ-শিশুসহ সকল বয়সের মানুষকে নারকীয় কায়দায় হত্যা করেছে। ধর্ষণ করেছে রোহিঙ্গা নারীদের। এই বর্বরতার দিকে তাকিয়ে মানবিক বিবেচনায় শেখ হাসিনা সরকার ওদের আশ্রয় দিয়েছে। একই সঙ্গে এই গণহত্যা বন্ধের জন্য বিশ্বজনমত গড়ে তোলেন।

জাতিসংঘের ৭২তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে যে মূল ৬টি বিষয় তুলে ধরেছেন এতে করে বিশ্বের সমগ্র দেশের মানুষ ও মানবতা জাগ্রহ হয়েছে। শেখ হাসিনার মানবিক মূল্যবোধের প্রশংসা হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব এন্থনিও গুতারেস ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সতর্ক করেছেন। প্রথমে ভারত, চীন ও রাশিয়া ভিন্ন মত পোষণ করলেও ইতোমধ্যে ভারত ও চীন রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ পাঠিয়েছে। আশা শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সহায়তায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্ষণ হবে। এতস বিবেচনায় দেশরত্ন শেখ হাসিনা এখন শুধু বাংলার জনগণের নেত্রী নন, সারাবিশ্বেও সমাদৃত সফল রাষ্ট্রনায়কদের কাছে একজন সফল মানবিক নেত্রী। এজন্যই শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী অপ্রতিরোধ্য এক জীবন্ত কিংবদন্তির নাম।

কিন্তু আমাদের জন্য কষ্টের কথা হল—আমেরিকায় সফররত আমাদের প্রাণের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসুস্থ হয়ে যান। হঠাৎ পেটে ব্যথা অনুভব করলে তাঁকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন এবং গলব্লাডারে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী ২৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় রাত ৮টায় সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। সফল অস্ত্রোপচার শেষে একদিন পর প্রধানমন্ত্রী তাঁর আবাসস্থলে ফিরে আসেন। বর্তমানে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বিশ্রামে আছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন। আগামী ৫ অক্টোবর তিনি দেশে ফিরবেন। আমরা প্রত্যাশা করি তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন এবং দেশকে অপ্রতিরুদ্ধ গতিতে এগিয়ে নিতে নেতৃত্ব দিয়ে যাবেন।

লেখক : স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের নেতা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা।

এইচআর/আরআইপি

আরও পড়ুন