শেখ হাসিনা : আমাদের অভিভাবক
আজ জাতির অভিভাবক দেশরত্ন শেখ হাসিনার জন্মদিন। আজ সারা বিশ্বে আপনার নাম গভীর ভালোবাসার সাথে উচ্চারিত হচ্ছে। আপনি আজ শোষিত মানুষের শেষ আশ্রয়। মাননীয় নেত্রী সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়, খাবার, চিকিৎসা থেকে শুরু করে যা দিয়েছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
আপনার মত করে কোন দেশ বা রাষ্ট্রপ্রধানরা ভাবেন নি। এত বড় দায়িত্ব নিতে কুতুপালং এ আপনি যেদিন গেলেন সেইদিন সেখানে থাকা মিয়ানমারের নির্যাতিত-নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিসহ উপস্থিত লক্ষ লক্ষ মানুষ এবং দেশ বিদেশের সাংবাদিকরা দেখলো এক মহান নেতাকে। আপনি কাঁদলেন তাদের সাথে। আপনাকে দেখে কেঁদে উঠল লক্ষ মানুষ। এই কান্না ছিল খুশির, নির্ভরতার, আবেগের, স্বস্তির। আপনাকে দেখে সমস্বরে নির্যাতিত-নিপীড়িতরা মা মা বলে ডেকে উঠল। আপনি সেখানে বললেন, 'মিয়ানমারে যা ঘটেছে তা মানবাধিকার লঙ্ঘন'। অশ্রুসজল চোখে বললেন, 'এই ঘটনা দেখে চোখের পানি ধরে রাখা যায় না। মানুষ মানুষের মত বাঁচবে, ১৬ কোটি জনগোষ্ঠিকে খাওয়াতে পারলে ১০ লাখ মানুষকেও খাওয়াতে পারবো'।
মাননীয় নেত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে আপনি বললেন, 'আপনি তো আগেই বলেছেন শরণার্থীদের আপনার দেশে ঢুকতে দেবেন না, তাহলে আপনার কাছে আমার কি চাওয়া থাকতে পারে।' এমন সাহসী উচ্চারণ করলেন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বসেই। আপনার মত এমন সাহসী নেতৃত্ব সারা বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। আপনি আজ সারা বিশ্বের সকল শোষিতের নেতা। গোটা বিশ্ব আপনাকে ‘মাদার অব হিউমিনিটি’ বলে আখ্যায়িত করেছে। নির্যাতিত-নিপীড়িতদের জন্য আপনি ছাড়া আপনজন আর কেউ নেই।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতই আপনার নেতৃত্ব বলিষ্ঠ, উদার ও আধুনিক। আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আপনার একান্ত প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। এদেশের দুঃখী মানুষের দুঃখ বিদায় নিয়েছে। এদেশের মানুষ আজ সুখি সমৃদ্ধ জীবন পেয়েছে। আপনার নেতৃত্বে মাথাপিছু আয় বেড়েছে, বেড়েছে প্রবৃদ্ধি। আজ বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। অর্থনীতির প্রতিটি সূচক আজ সাক্ষী দিচ্ছে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে, ইনশাআল্লাহ্। বাংলাদেশের জন্য এমন আপন মানুষ আর কেউ নেই। আপনার তুলনা আপনি শুধু নিজেই।
আপনাকে কোন বিশেষণ দিয়ে বিশেষায়িত করার ধৃষ্টতা আমার নেই। একজন অভিভাবক আপনি। তাই তো আমরা দেখেছি বাংলাদেশের দর্শকরা যখন ক্রিকেট নিয়ে মাঠে, টেলিভিশনে জিতবো না হারবো শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় থাকে, আপনি তখন ছুটে যান স্টেডিয়ামে খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিতে। খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুমে আপনাকে দেখতে পাই। ফুটবল মাঠেও আপনাকে দেখা যায়। আপনি একজন অভিভাবকের মতই সব জায়গায় আছেন। আপনাকে দেখা যায় পেট্রোল বোমায় ক্ষত বিক্ষত মানুষের পাশে। আপনাকে দেখা যায় বন্যার্তদের পাশে। আপনি তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে অভয় দেন। আপনার কথায় নতুন উদ্যমে আবারও জীবন শুরু করে মানুষ। একজন মায়ের মত মায়ের স্নেহ নিয়ে আপনি দাঁড়িয়েছেন ছোট্ট শিশু মুক্তামনির পাশে। আপনি দাঁড়িয়েছেন দুস্থ শিল্পীদের পাশে। আপনি মুক্তিযোদ্ধাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল। আপনি আছেন সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে। এজন্যই আপনি জননী।
উদাহরণ দিতে গেলে কলমের কালি ফুরিয়ে যাবে কিন্তু আপনার মহত্ত্বের কথা শেষ হবে না। আপনার নোবেল প্রাইজ পাওয়া নিয়ে কথা উঠেছে খুব। আলোচনার টেবিলে চলছে কথা। আমাদের নোবেল পুরস্কারের দরকার নেই। আমাদের নোবেল ওয়ার্কারের দরকার, যা আপনি করে যাচ্ছেন, মাননীয় নেত্রী। আপনিই আমাদের নোবেল পুরস্কার। আপনি এ জাতির জন্য এক পুরস্কার। শান্তির জন্য নোবেল তো অনেকেই পেয়েছেন। কিন্তু কতজন আপনার মত নোবেল কাজ করতে পারে?
চলতি মাসে জাতিসংঘে বড় বড় দেশগুলোর সামনে আপনি সুষ্পষ্ট ভাষায় বাংলাদেশের হয়ে যা বলেছেন তা সারা বিশ্বে প্রশংসনীয়। আপনি যে কারো রক্তচক্ষুকে ভয় পান না, তা বার বার বুঝিয়ে দিয়েছেন এবং জাতিসংঘে ওআইসি দেশভুক্ত দেশগুলির সামনে রোহিঙ্গাদের স্বার্থে যে ছয় দফা প্রস্তাব করেছেন তাতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে বাংলাদেশের অবস্থান এবং মিয়ানমারকে কি করতে হবে। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে যখন সারা বিশ্বের নেতৃবৃন্দ সমাধান খুঁজতে দিশেহারা, আপনি তখন দিয়েছেন সমাধানের উপায়। আপনার দূরদর্শিতা, মেধা ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে আজ গোটা বিশ্ব রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে আছে। আপনার পরিশ্রম আর একক নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আমরা গর্ব করে বলতে পারি বাংলাদেশ আজ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ানের দেশ না।
আজ আপনার জন্মদিন, বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমীনের কাছে এই প্রার্থনাই থাকবে তিনি যেন আপনাকে শত আয়ু দেন। অনেক বছর বেঁচে থাকুন আমাদের মাঝে। কারণ আমাদের এক শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ নেই।
লেখক : ডাইরেক্টর, রেডিও ঢোল, এফএম ৯৪.০, ফাউন্ডার, দ্যা লাভলি ফাউন্ডেশন।
এইচআর/আরআইপি