ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

শব্দের ব্যবহার হোক শুদ্ধতায়, সম্মানে

ঈহিতা জলিল | প্রকাশিত: ০৪:১৭ এএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

একজন লেখক যখন লেখেন সে কখনও এই আশা নিয়ে লেখেন না যে তাঁর লেখা সবার ভালো লাগবে, সবাই তাঁর সাথে একমত হবেন। আমার ধারণা লেখকরা তাদের মনের আনন্দে লেখে। লেখাটাই তাদের এক টুকরো নিজস্ব আকাশ। হয়তো ব্যতিক্রম আছেন। আমি বেশিরভাগের কথা বললাম।লেখকের লেখার সঙ্গে আপনার দ্বিমত থাকতেই পারে, লেখককে আপনি অপছন্দ করতেই পারেন। এসবই আপনার সামাজিক অধিকার। কিন্তু লেখককে অপমান করার কোন অধিকার আপনার নেই। লেখক যেমন লেখার মাধ্যমে তাঁর মত প্রকাশ করছে আপনিও আপনার লেখা দিয়েই মত প্রকাশ করুন। লেখককে বাজে কথা বললে সে হয়তো আপনাকে কখনই কিছু বলবে না কিন্তু সে ভেবে নিতেই পারে আপনার পরিবার আপনাকে ভব্যতার শিক্ষা দেননি। তাই ভাষার প্রয়োগের আগে একবার একটু পিছন ফিরে নিজের পরিবারের মুখটি ভেবে নেবেন।

এই বিষয়টি নিয়ে লিখবো বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম। সম্প্রতি আমি একটি বিষয় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলাম যে, যে কোন লেখায় মন্তব্যকারীদের মধ্যে, একটা বড় অংশ থাকে যারা যে ভাষায় লেখককে আক্রমণ করেন, তা কোন সুস্থ মানুষের পক্ষে করা সম্ভব না। আরেক পক্ষ আছেন তাঁরা লেখাটি খুঁটিয়ে পড়েন না। তার আগেই একটা মন্তব্য করেন। অথচ একটু ভালো করে লেখাটি পড়লেই তাঁরা তাদের প্রশ্নের উত্তর পেতে পারেন। আবার দেখা যায় লেখার সাথে কোন সম্পর্ক নেই এমন সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক কোন মন্তব্য করে বসেন।

আবার কেউ কেউ নিজেকে মনস্তাত্বিক ভাবেন। মনে করেন যিনি লিখছেন তিনি বুঝি তাকে আক্রমণ করেই লিখেছেন। আচ্ছা যে মানুষটিকে আপনি চিনেন না, জানেন না শুধু মাত্র তাঁর লেখার বিষয়টি আপনার পছন্দ হয়নি বলে আপনি তাকে যা নয় তাই বলবেন। একবার ভেবে দেখেছেন তাঁকে ছোট করতে যেয়ে আপনি নিজে কি একটুও ছোট হচ্ছেন না! যাকে বলছেন সে আপনার চাইতে বয়সে বড়ও হতে পারে। আপনার পরিবার নিশ্চয়ই আপনার বয়সে বড় যিনি তাকে শ্রদ্ধা করতে আর ছোটকে স্নেহ করতে শিখিয়েছে। কেন নিজের পারিবারিক শিক্ষাকে খাটো করছেন।

শুনুন পাঠক হওয়াও কিন্তু কঠিন। একজন সত্যিকারের পাঠক যিনি, তিনি অনেক পড়েন, জানেন, তাঁর ভাষা কখনও অন্যের অসম্মানের কারণ হতে পারেনা। আমি এই অন্তর্জালের দুনিয়ায় না আসলে বুঝতেই পারতাম না মানুষ এতো ঝগড়া করতে পারে! আমি ভেবেছিলাম মানুষ এখন অনেক ব্যস্ত অত সময় কোথায় এতো কথা বলার। না, দেখলাম, আমার ধারণা একেবারেই ভুল। মানুষের অঢেল সময়। এবং তা শুধু অহেতুক ঝগড়া করবার জন্য। রাস্তায় একটা মানুষ পড়ে থাকলে আমরা মুখ ঘুরিয়ে চলে আসি কিন্তু ফেসবুকে আমরা একেকজন বাঘের বাচ্চা। পান থেকে চুন খসলেই হলো, শুরু হয়ে যাই কোন মাফ নাই! যার যার ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, ট্যাব, স্মার্টফোনের আড়ালে আমরা সব রয়েল বেঙ্গল টাইগার। মন্তব্য করতেই হবে এমন তো না। ভালো না লাগলে এড়িয়ে যান। ইগনোর করতে শিখুন। আর না হয় লেখনির মাধ্যমে ভদ্র ভাষায় নিজের মনের ভাব প্রকাশ করুন।

আপনি হয়তো খুব ভালো মানুষ, কিন্তু আপনার লেখা একেকটা নোংরা শব্দ, অসম্মানজনক শব্দ অন্যপাশের মানুষটিকে কতটা প্রভাবিত করতে পারে তা কি একবারও ভেবে দেখছেন? আর আপনার করা মন্তব্য দেখে আপনার পরবর্তী প্রজন্ম কি শিখছে তা কি ভেবেছেন কখনও! সম্পূর্ণ অপরিচিত একজন মানুষকে দুইদিনের পরিচয়ে তাঁর সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া অন্যায়। কাউকে সহজে মাথায় তোলাও ঠিক না, আবার মতে মিললো না তাই ছুঁড়ে ফেলে দিলাম তাও ঠিক না। সৃষ্টিকর্তা আমাদের মুখ দিয়েছেন ভালো শব্দের ব্যবহারের জন্য। আমাদের শিক্ষা যেনো আমাদের ভালো কাজে লাগে। মানুষের উন্নতির জন্য লাগে।

একটা অক্ষর দিয়ে অনেক শব্দ হয়। আমরা যেনো ভালো শব্দ বুঝি, ভালো শব্দ ভাবি, ভালো শব্দ বলি। ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করবেন। দিন শেষে নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকবেন।

লেখক : সাংবাদিক।

এইচআর/এমএস

আরও পড়ুন