ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

রোহিঙ্গা বিপদে চালের আপদ : রুখতে হবে রঙিলা কূটচাল

মোস্তফা কামাল | প্রকাশিত: ০৪:২৪ এএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

একদিকে প্রাণিজগতের সদস্য রোহিঙ্গা নামের মানুষগুলোকে নিয়ে নানা সমীকরণ। আরেকদিকে জড় জগতের অন্যতম উপাদান চাল নিয়ে নানা অংক। একসঙ্গে এই সমীকরণ ও অংকে আক্রান্ত বাংলাদেশ। দুয়ের সঙ্গেই প্যাঁচানো দেশি-বিদেশি নানা হিসাব। সরাসরি এর জের ভুগতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোনো পক্ষ না হয়েও বাংলাদেশের ঘাড়েই আছড়ে পড়েছে সমস্যাটি। এমনকি পারলে বাংলাদেশকে প্রথম পক্ষই বানিয়ে দেয়ার কূটচালের আয়োজনও ব্যাপক।

নেহায়েত মানবিক কারণেই বাংলাদেশে ঠাঁই জুটেছে মিয়ানমার থেকে প্রাণ রক্ষার আশায় ঢুকে পড়া রোহিঙ্গাদের। গোটা বিষয়টিকে মানবতার বিবেচনায় নিয়ে বোঝার সাথে প্রশংসার পাল্লাও ভারি বাংলাদেশের। এরইমধ্যে বিশ্বজুড়ে বিশেষ উচ্চতায় আলোচিত আমাদের এই দৃষ্টান্ত। কিন্তু মানবিকতার বিপরীতে এই রোহিঙ্গাদের নিয়ে স্বার্থবাদী ক্রিয়াকর্মও কম নয়। রীতিমতো ধরিবাজিও চলছে। নানা রং ও মোড়কে চলছে দুস্কর্ম। রাজনীতি, অর্থনীতির সাথে বর্ণালি নানা কূটনীতিও। বৈশ্বিক নানা শক্তির বাইরে দেশীয় নানা মহলের কারসাজিও ব্যাপক। অসহায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার নামে মতলববাজি। বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়ার নামে ঘাটে ঘাটে তাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা এমনকি গহনাগাটি হাতিয়ে নেয়ার দুঃখজনক তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না অবৈধ শরণার্থী ক্যাম্প বসিয়ে প্রতারণাও। আশ্রয় দেয়ার মানবতার মোড়কে কক্সবাজারসহ আশপাশের অঞ্চলে পাহাড়-গাছগাছালি কাটা, সরকারি জায়গা-সম্পত্তি দখলের দুস্কর্মের প্রতিযোগিতাও কম নয়। রোহিঙ্গাদের পাল্লা ভারি করে আয়ত্বে নেয়া, তাদের বেপরোয়া-রংবাজ করে গড়ে তোলার একটা বাণিজ্য তো চলে আসছে আগে থেকেই।

গোটা বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেয়া হলে সামনে ভয়াবহ বিপদের শঙ্কা থেকেই যায়। তাই বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে নেয়া প্রতিটি পদক্ষেপে সর্বোচ্চ দূরদৃষ্টি জরুরি। সার্বক্ষণিক নজরদারি। সুনির্দিষ্ট জায়গার বাইরে রোহিঙ্গাদের বিচরণ বিপদ ডেকে আনতে পারে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের চলমান রেজিস্ট্রেশনে টুকটাক অসচেতনতা আপদের সাথে ভয়ানক বিপদ নিশ্চিত করবে। সেই নমুনা এরইমধ্যে দৃশ্যমান। জন্মসনদ, ভিজিএফ কার্ড, কক্সবাজারের বাইরে বিভিন্ন অঞ্চলে ঢুকে পড়ার পুরো কৃতিত্ব রোহিঙ্গাদের একার নয়। এর সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নিলে এ অপকর্ম চলতেই থাকবে। রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের সুযোগ সন্ধানীদের ব্যাপারে কঠোর হওয়ারও বিকল্প নেই।

এরমধ্যেই চাল নিয়ে যোগ হয়েছে আচমকা চালবাজি। এ বিষয়ে ন্যূনতম ধারণা না থাকা ব্যক্তিবিশেষও ক্যাচালে জড়াচ্ছেন। তাদের অবিবেচক প্যাঁচাল পরিস্থিতিকে আরো ঘোলাটে করে দিচ্ছে। পাইকারি বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। কিন্তু কী এর রহস্য? কারা এই চালবাজ? বাজারে তো চালের কোনো কমতি বা ঘাটতি নেই। প্রচুর চাল রয়েছে চাতালেও। ভাসাভাসা তথ্যের কচলানিতে দোকানদার, মজুতারদার, আড়তদার, পাইকার, সরকার, মিলমালিক পাল্টাপাল্টি দোষারোপ। এই সুযোগে আরো চালবাজির সুযোগই তৈরি হতে থাকে। চালের অবৈধ মজুদ হয় আরো জোরদার। মোটা চাল ছেঁটে মিনিকেট তৈরির পুরনো প্রতারণাটিও জমে ওঠে নতুন করে।

বাংলাদেশে চাল রফতানি করতে ভারত সরকারের অপারগতার গুজবও বিশ্বাসযোগ্য করে ছড়িয়ে দেয়া হয়। কিছুটা দেরিতে হলেও সরকার ঢিল ছুঁড়েছে চালবাজির হেডকোয়ার্টারে। অভিযান চলছে তাদের আড়ত, গুদামসহ মজুদখানায়। এর কিছুটা সুফল মিলতে শুরু করেছে। পাইকারি বাজারে চালের দাম কিছুটা কমেছে। রাজধানীর বাতামতলী ও বাবুবাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দাম আরও কমবে। অভিযান অব্যাহত রাখলে চালের দাম চড়ানোর এ আপদ শিগগিরই শিথিল হয়ে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট বুঝদাররা। সেইসাথে নিশ্চিত করতে হবে খোলাবাজারে চাল বিক্রি বাড়ানো।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন।

এইচআর/আইআই

আরও পড়ুন