ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

টাওয়ার হ্যামলেটসে মেয়র নির্বাচন, লুৎফুরের পর এবার কে

প্রকাশিত: ০৭:০৪ এএম, ১০ জুন ২০১৫

ব্রিটেনের একটা আলোচনাবহুল দিন আগামীকাল অর্থাৎ ১১ জুন। এবং তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি কমিউনিটির জন্যে। কারণ ঐ দিনটা বাঙালি কমিউনিটির জন্য ছিলো অপ্রত্যাশিত। প্রত্যাশিত না হলেও তা-ই হয়েছে। ব্রিটেনের ইতিহাসের প্রথম বাঙালি বংশোদ্ভুত নির্বাচিত মেয়রের কোর্টের রায়ের মধ্য দিয়ে অপসারিত হবার পর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচিত মেয়র অপসারণের পর বাঙালি কমিউনিটিতে এর প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে ব্যাপক। যা হয়েছে তাতে মেয়র বিরোধী গ্রুপ বিশেষত লেবার পার্টির জন্যে এ এক বিরাট বিজয়। কারণ নির্বাচিত মেয়র লুৎফুর রহমানের জনপ্রিয়তা এতই বিশাল হয়েছিলো যে, তার বিকল্প কাউকে চিন্তাই করা যেতো না টাওয়ার হ্যামলেটস এ। এক সময়ের লেবার পার্টির নেতা নির্বাচিত কাউন্সিলার লুৎফুর পার্টির সাথে চ্যালেঞ্জ করে আদালত পর্যন্ত গড়িয়ে নিজেকে নিয়ে এসেছিলেন এমন পর্যায়ে যে, লুৎফুর হয়ে উঠেছিলেন বাঙালি কমিউনিটির আশার জায়গা। সেকারণেই হয়ে উঠেছিলেন বাঙালি তথা টাওয়ার হ্যামলেটস এর জনগণের অবিসংবাদিত নেতা।

কিন্তু কেন জানি অত্যন্ত বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ হওয়া সত্ত্বেও ত্রুটি ছিলো তার। সেজন্যেই হয়ত নিয়তি তার পিছু ছাড়েনি । আদালতই রায় দিয়ে দেন। কিন্তু লুৎফুরের মেয়র পদ থেকে অপসারিত হওয়া, কোর্টের ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচনে আবারও না দাঁড়ানো নিয়ে অনেক কিছুই হয়েছে। গার্ডিয়ানসহ  মূলধারার গণমাধ্যমে তার পক্ষে নিবন্ধ লেখা হয়েছে। বিপক্ষ শক্তিতো বগল বাজিয়েছে। দু’একটি পরিচিত মিডিয়াতো এক হাত নিয়েছে তার। কিছু কিছু রাজনৈতিক কথা-বার্তা এসেছে তার মেয়র থাকাকালীন সময় নিয়ে। কমিউনিটিতে যে কথাটি প্রচলিত ছিলো, বিশেষত তথাকথিত প্রগতিশীল বলে খ্যাত বাংলাদেশি রাজনীতিবিদরা তাকে মৌলবাদীদের মদদপুষ্ট বলেছেন। এবং প্রয়োজনে তিনি এদের সহযোগিতা করেছেন বলে অপপ্রচার আছে। সে জন্যেই আমার একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়, ভোটের রাজনীতিতে লুৎফুর যে ভোট পেয়েছিলেন তা-কি শুধুই মৌলবাদী গোষ্ঠির? নিশ্চয়ই না।  বিএনপি’র কথা বাদই দিলাম, এমনকি আওয়ামীলীগের যুক্তরাজ্য কমিটির অনেকেই লুৎফুর রহমানের সাথে ছিলেন, আজও লুৎফুরের শুভাকাঙ্খী হিসেবে তার সাথেই কাজ করে যাচ্ছেন। সেজন্যেই বলি ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হওয়া লুৎফুরকে যদি বলা হয় মৌলবাদীদের ভোটে নির্বাচিত মেয়র তাহলে গোটা কমিউনিটিকেই অপমান করা হবে। এবং যারা এটা করেছেন, তারা ইচ্ছে করেই তাকে মৌলবাদী বানিয়েছেন কিংবা তাকে মৌলবাদীদের প্রতি ঝুকিয়ে দিয়েছেন।

২.
এবার রাবিনা খান দাঁড়িয়েছেন। নিঃসন্দেহে রাবিনা লুৎফর রহমানের পছন্দের প্রার্থী। কমিউনিটির অগণন মানুষের পছন্দের প্রার্থী রাবিনা খান। বলতেই হয়, টাওয়ার হ্যামলেটস এর বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের প্রতিটি কমিউনিটিকে তিনি ভালেই জেনেছেন। সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমানের সাথে কাজ করেছেন তিনি। লুৎফুর হয়ত সেজন্য তাকেই তার পছন্দের তালিকায় রেখেছেন। এবং এরই মধ্যে তিনি তার প্রজ্ঞা কিংবা যোগ্যতার প্রকাশও ঘটিয়েছেন।

কমিউনিটি আগের মতোই বিভক্ত। লেবার পার্টি তার প্রার্থী জন বিগসকে নিয়ে মাঠে শেষ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আর বাঙালি কমিউনিটি রাবিনাকে নিয়েই চালাচ্ছে তার শেষ ক্যাম্পেইন। মজার বিষয় হলো  লুৎফুরের সময়ে সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষটি যখন দলবদল করে লেবার দলের হয়ে জন বিগসের পক্ষে কথা বলতে সভার আয়োজন করলেন, তখন দেখা গেলো বিস্ময়কর কাণ্ড। মানুষ ঐ সভায়ও রাবিনা খানের পক্ষে শক্তিশালী বক্তব্য রাখেন। মূলধারার কিছু কিছু গণমাধ্যম তার বিরুদ্ধে গেলেও কমিউনিটি যে রাবিনার পক্ষেই কথা বলছে তা স্থানীয় বাংলা পত্র-পত্রিকা খুললেই দেখা যায়। এমনকি টিভিগুলোতেও রাবিনারই কথা উঠে আসছে বেশি। আমার কাছে আরও বিস্ময় ঠেকেছে এবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের পাশাপাশি কবি-সাহিত্যিকরা পর্যন্ত ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছেন। রাবিনাকে এখন পর্যন্ত মৌলবাদী বলতে না পারলেও লুৎফুরের প্রার্থী হিসেবে চালিয়ে দিয়ে মৌলবাদী বানানোর চেষ্ঠা হয়ত চলছে। কিন্তু তা কি হালে পানি পাবে?


অনেকই বলে থাকেন, মূলধারার বাইরে গিয়ে কিছু করা যায় না। কিন্তু এ কথাটি ভুল প্রমাণ করেছিলেন লুৎফুর। তিনি এ কমিউনিটিকে যা দিয়েছেন, তা যুগ যুগ ধরে মনে রাখবে মানুষ। হাউজিং, টাওয়ার হ্যামলেটস এর শিক্ষা-চিকিৎসা প্রভৃতি ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। আর সেজন্যেই হয়ত বাধ্য হয়ে এমনকি জন বিগস পর্যন্ত তার প্রচারণায় বলতে বাধ্য হয়েছেন সে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হবে। আর রাবিনাতো লুৎফুরেরই পছন্দের, হয়ত তারই মনোনীত। তাদের লক্ষ্যতো একটাই। অতএব রাবিনাকেতো কমিউনিটি সহায়তা দিতেই পারে। তাছাড়া মূলধারার বাইরে গিয়ে কি কেউ নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারেন না? গ্রীন পার্টির লিডার ক্যারেলিন লোকাসকে তো তার এলাকার মানুষ ঠিকই জনপ্রতিনিধি (এমপি) বানায়। জর্জ গ্যালওয়েকে ঐ টাওয়ার হ্যামলেটস এর মানুষই এমপি বানিয়েছিলো। লেবার পার্টির সাথে বিদ্রোহ করে কেন লিভিংস্টনও লন্ডন মেয়র হয়েছিলেন। এরই ধারাবহিকতায় লুৎফুর রহমানও টাওয়ার হ্যামলেটস এর মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। সুতরাং এসব মূলধারারকে ইসু্য বানিয়ে কমিউনিটিকে কি কোনোরকম বিভ্রান্তিতে ফেলা যাবে? সেটা মনে হয় হবে না। কারণ জনগণ তাদের নেতা নির্ধারণ করে নেতার কমিটমেন্ট দিয়ে, অতীত দিয়ে । অন্যদিকে লেবার পার্টিতে কি একজনও বাঙালি প্রার্থী হবার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন নেতা কিংবা কর্মী নেই যারা আসলেও এই কমিউনিটির স্পন্দন বুঝতে পারেন। আমার মনে হয়েছে এমন কোনো নেতা সৃষ্টি হতে পারেন নাই যারা জন বিগসের বিকল্প হতে পারেন। সেজন্যে প্রার্থীও হতে পারেন নি। খুব স্বাভাবিকভাবেই তাই রাবিনার পক্ষে এবারও একটা ভোট প্রবাহ বয়ে যেতে পারে ১১ জুন। শুধু বাঙালিই নয়, ভিন্ন কমিউনিটির হাজার হাজার মানুষ যারা লুৎফুরের সময়ে বিভিন্নভাবে উপকৃত হয়েছেন, তারাও এবার রাবিনার পক্ষে দাঁড়িয়েছে বলেই মনে হয়েছে।

৩.
মাত্র ক‘দিন আগে পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়ে গেলো। রাজনীতিতে খুবই পরিপক্ষ রোশনারা আলীকে শুধু লেবার পার্টির কারণেই টাওয়ার হ্যামলেটস কিংবা বেথনাল গ্রীণ-বো সংসদীয় এলকার মানুষ ভোট দেয় নাই। ভোট দিয়েছে রোশনারার রাজনৈতিক বিচক্ষণতার কারণেই। তরুণ এমপি হিসেবে রোশনারা যেমন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, ঠিক তেমনি কমিউনিটির স্পন্দন বোঝে সময়ে সময়ে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন, কাজ করেছেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কমিউনিটির মানুষের। সেজন্যেই রোশনারার বিজয়ও হয়েছে । এবং এটা প্রত্যাশিতও ছিলো।


তিনজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত মানুষ এবার ব্রিটেনের পার্লামেন্ট এমপি হয়েছেন মাত্র গত মাসে। এই তিনজনই নারী। মানুষ আস্থা রেখেছে বাঙালি ঐ নারীদের উপর। সেই আস্থা নিয়েই রাবিনাও কি এগিয়ে যাচ্ছেন, তা আমরা জানি না। টাওয়ার হ্যামলেটস ও কি সেই ধারাবাহিকতায় একজন নারীর শক্ত নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে? এ প্রশ্নটির উত্তরের জন্যে মাত্র একটা দিন অপেক্ষা করতে হবে আমাদের।



এইচআর/এমএস