ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন কবে?

সম্পাদকীয় | প্রকাশিত: ০৪:০৪ এএম, ২৮ জুলাই ২০১৭

সরকারি ভূমি অফিসের ঘুষ, দুনীতি বন্ধে জেলা প্রশাসকদের কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ডিসিদের সঙ্গে ভূমি মন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। ডিসি সস্মেলনের তৃতীয় দিন অর্থাৎ সমাপনী দিনের প্রথম বৈঠক হয় এ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। ভূমিমন্ত্রী বলেন, যারা ঘুষ নেয় তারা তো অন্যায় করে। কবির ভাষায় বলতে হয়, অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা তারে তৃণসম দহে। ভূমি অফিসের ঘুষ বন্ধ করতে আমি ডিসিদের কঠোর নির্দেশ দিয়েছি।

মন্ত্রীর এই নির্দেশনা অত্যন্ত বাস্তবানুগ ও সময়োপযোগী। ভূমি অফিসের দুর্নীতি সর্বজনবিদিত। মন্ত্রী নিজেও এ ব্যাপারে অবগত। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী তা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমি জানি- একটা নকশা তুলতে ৩/৪ দিন ঘুরতে হয়। এর পর দালালের হাতে কিছু পয়সা দেয়া হয় সেটা পাওয়ার জন্য। পরে হয়তো দেখা যায়, কোনো নকশাই নেই। এ জন্য আমরা সব কিছু ডিজিটালাইজেশন করছি। এটা করা হলে কোনো ঘুষ-দুনীতি থাকবে না। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার আধুনিক ভূমি ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করেছে। এই ভূমি ব্যবস্থপনা সঠিকভাবে বাস্তবায়নে নির্দেশ দিয়েছি। এটা বাস্তবায়নে যাতে কোনো অনিয়ম না হয় সে নির্দেশও দিয়েছি। এই আধুনিক ব্যস্থাপনা বাস্তবায়ন হলে ঘুষ দুর্নীতি থাকবে না।

জনপ্রশাসনের দক্ষতার উপরই আসলে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি নির্ভর করে। আমাদের দেশে সচিবালয় কেন্দ্রিক যে এককেন্দ্রিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তাতে উন্নয়ন অগ্রগতির মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে তা। কাজেই এখানকার কাজের গতিশীলতা, দক্ষতা, অনিয়ম দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশই আসলে দেশের উন্নতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে। এ জন্য প্রশাসনকে দলমতের ঊর্ধ্বে ওঠে কাজ করতে হবে। মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বও অনেক। গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে জনকল্যাণমুখি কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রয়োজনীয় সংস্কার, জনপ্রশাসনে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং শক্তিশালী দুর্নীতি দমন কৌশল বাস্তবায়নে তৎপর রয়েছে সরকার। এটি খুবই আশাব্যঞ্জক।

এছাড়া সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করাটাও জরুরি। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে মানুষের ন্যায় বিচার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। এ জন্য বিভিন্ন আইন প্রণয়ন, সংস্কার ও এবং তা যুগোপযোগী করা জরুরি। এছাড়া মানুষ যাতে যথা সময়ে বিচার বিচার পায় সেজন্য বিচার বিভাগের জনবলবৃদ্ধিসহ অন্যান্য সমস্যাদি সমাধান করতে হবে। জনগনের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। এলক্ষ্যে সরকারকে নিরন্তর সচেষ্ট থাকতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দুর্নীতিমুক্ত রাখা অত্যন্ত জরুরি। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা কিংবা উন্নয়নের জন্যও সম্ভাব্য সকল উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এভাবে মানুষের মধ্যে একটি নিরাপত্তা বোধ সৃষ্টি করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকলে দেশিবিদেশি বিনিয়োগও বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা সম্ভব হয় না।

এছাড়া মানুষের আয় বাড়াতে হবে। এ জন্য বেকারত্ব হ্রাস ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। সকল ধরনের ধর্মীয় মৌলবাদ এবং জঙ্গিবাদ থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে হবে। এ জন্য শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে হবে। কূপমণ্ডুকতা এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ ব্যবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে। ক্ষুধা-দারিদ্র এবং বৈষম্যমুক্ত সমাজ ব্যবস্থায়ই আসলে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারে। এ জন্য উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি বিদ্যুত ব্যবস্থার কাঙ্খিত উন্নয়ন করতে হবে। দেশের মানুষের প্রতি অঙ্গীকার এবং সদিচ্ছা থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে ওঠে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

এইচআর/এমএস

আরও পড়ুন