স্বপ্ন দেখি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রও মেসে থাকবে না
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আবার প্রাণস্পন্দন ফিরে পেতে যাচ্ছে নতুন ক্যাম্পাসকে ঘিরে। বর্তমান ৯-১০ চিত্তরঞ্জন এভিনিউ থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে বুড়িগঙ্গার অপরপাশে নতুন ক্যাম্পাসের জন্য জমি দেখা হয়েছে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজের অর্থে কেনা স্থান থেকে এটি অতি নিকটবর্তী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত দিক নির্দেশনায় অতি দ্রুত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন সংকট দূরীকরণের জন্য কেরানিগঞ্জে ২৫০ একর জমি দেখা হয়েছে। নিঃসন্দেহে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের জন্য এটি বিশাল এক সুসংবাদ। আমরা অনেক আশার ভেলায় ভাসতে ভাসতে এবার খানিক নতুন চরের দিশা পেয়েছি বৈকি। আমাদের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান এবার শক্ত হাতে পোড় খাওয়া অভিজ্ঞ মাঝির ন্যায় হাল ধরেছেন। এবার হয়তো আমরা সফলতার মুখ দেখবো।
সেই শুরু থেকেই দেখে আসছি জবি'র উন্নয়নের জন্য মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান স্যারের আপ্রাণ প্রয়াস। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট নিরসনসহ একটি সুসমন্বিত পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস নির্মাণে স্যার কী না করেছেন? সাততলা ভবন সম্প্রসারণ, ছাত্রীহল নির্মাণে তদারকি, পূর্বাচলে জমি চেয়ে চিঠি, পুরাতন জেলখানার জমির জন্য সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নিজস্ব প্যাডে আবেদন; জবি'র জন্য কারো দিকে চেয়ে না থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজের টাকায় জমি ক্রয়। এ সবই করেছেন জবি'র উন্নয়নের স্বার্থে। স্যারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে দেখেছি- শুধু জমির অভাবে অনেক বড় বড় প্রকল্প পাশ না হওয়ার ব্যর্থতায় মুষঢ়ে যেতে। তবে তিনি কোনদিন হতোদ্যম হননি। একেকটা প্রকল্প তৈরির পেছনে যে কত শ্রম-ঘাম-সময় ব্যয় হয়, তা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। বারবার জবি'র প্রকল্প ব্যর্থ হয়েছে- পুনরায় তিনি নতুন করে তৈরি করেছেন।
একথা অস্বীকার করার উপায় নেই, মাত্র বর্তমান সাত একর জায়গা বহুমূল্য হলেও একটি পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার জন্য তা কিছুই নয়। আর আমি হলপ করে বলতে পারি, আগামী দশ বছরের মধ্যে পুরাতন ঢাকা গ্যাস-পানি ও সুয়ারেজের অপ্রতুলতায় পরিত্যক্ত হবে। আর আমরা জানি, ঢাকা উত্তরের দিকে প্রসারিত হতে হতে এখন আর জায়গা নেই। আজকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও একদিন শহরের প্রান্তেই অবস্থিত ছিল। কিন্তু আজ আমরা কী দেখছি, প্রান্ত থেকে প্রাণকেন্দ্রে চলে এসেছে। এতে অবস্থানগত গুরুত্ব বাড়লেও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য কিন্তু ব্যত্যয় হয় অবশ্যই।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ ও গবেষণার জন্য যদি সুন্দর পরিবেশ দেয়া যায়, একদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বে স্বতন্ত্র আসন করে নিতে পারবে আশা করি। মাননীয় উপাচার্যের বর্তমান মেয়াদ পর্যন্ত প্রায় তিনশ'র মতো তরুণ শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন- যার অধিকাংশই নিজ নিজ বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সারির মেধাবী শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্য থেকে প্রতি বছর ৪০/৫০ জন শিক্ষাছুটি নিয়ে উন্নত দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য গমন করছে। তাঁরা যখন স্ব স্ব বিভাগে ফিরে আসবেন এবং একই সাথে নতুন ক্যাম্পাসে পূর্ণাঙ্গ আবাসিক ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা পাঠগ্রহণ ও গবেষণার সুযোগ পাবে- ভাবা যায় কেমন হবে তখন অবস্থা!
আবার উচ্চশিক্ষা শেষে ফিরে আসা শিক্ষকগণ যখন তাঁদের শিক্ষার্থীদের ঐসব দেশে এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রি লাভের জন্য সুপারিশ করবে- তখন আমাদের কে দাবায়ে রাখে! একটি উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের মূল যে ভিত্তি, তার মেধাবী শিক্ষক, মাননীয় উপাচার্য তা গড়ে দিয়েছেন গত পাঁচ বছরে- নতুন মেয়াদে গড়ছেন তিনি ভৌত অবকাঠামোর উন্নতি সাধন। এখন যেটি প্রয়োজন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে আপন পরিচয়ে উদ্ভাসিত হতে সেই জায়গা সংকট নিরসন- তা নিরলস পরিশ্রমে তিনি করে যাচ্ছেন।
যাই হোক, অবশেষে নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় নতুন প্রকল্প কেরানিগঞ্জে ২৫০ একর জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা করা হচ্ছে। মাননীয় উপাচার্য স্যার প্রতিদিন কিছু না কিছু অগ্রগতির প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। অশুভ বুদ্ধি ও চেতনা যদি প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে তবে যে আশার আলো প্রজ্জ্বলিত হয়েছে- কামনা করি অচিরেই এটি সফলতার মুখ দেখবে।
স্বপ্ন দেখি, একদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রও মেসে থাকবে না- আর কোন শিক্ষার্থী জন্ডিস, টাইফয়েডে আক্রান্ত হবে না; অস্বাস্থ্যকর গুমোট বদ্ধ রুমে থেকে মানসিক পীড়নে তাদের দিন কাটাবে না। একটি উন্মুক্ত অনাবিল শান্ত-সুন্দর, সবুজ-শ্যামল পরিবেশে তাদের উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত হবে। পাখ-পাখালির কূজন ও নির্মল প্রান্তরে তাঁদের নিঃশ্বাস বায়ু উন্নত জীবনমান ও বোধ দান করবে। তারা সবসময়ের মতো দেশ ও জাতির সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ ও সহকারী প্রক্টর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
এইচআর/পিআর