তথ্যপ্রযুক্তির দিনকাল
প্রায় এক বছর হলো দেশের সফটওয়্যার ও সেবা খাতের একমাত্র বাণিজ্য সংগঠন বেসিস-এর সভাপতির দায়িত্ব নিলাম। ১৫ জুলাই এর বর্ষপূর্তি। আমার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট কোন বাণিজ্য সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব নেয়া একদমই নতুন নয়। সেই ৯২ সালে প্রথম বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সাথে যুক্ত হই। প্রথমে সাধারণ নির্বাহী সদস্য ও পরে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর ৯৬ সালে প্রথম সেই সমিতির সভাপতি হই। সেই সময়ে ৯৭ সাল পর্যন্ত সভাপতি ছিলাম। এরপর ২০০৮, ০৯, ১০, ১১, ১২ ধারাবাহিকভাবে ও ১ বছর বিরতির পর এপ্রিল ১৩- মার্চ ১৪ সময়কালে আবার সেই সমিতির সভাপতি ছিলাম।
সভাপতি হিসেবে সেই সময়ে যে অভিজ্ঞতা পেয়েছিলাম তাতে প্রচুর চ্যালেঞ্জ ছিলো। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ এই শিল্প সফলতার সাথে মেকোবেলা করে। ৯৭ সালে জেআরসি কমিটির রিপোর্ট পেশ, ৪৫টি সুপারিশ প্রদান ও ২৮টি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এই শিল্প তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে। ৯৮-৯৯ সালে কম্পিউটারের ওপর থেকে শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহারের পর থেকে এই শিল্প অসাধারণ গতিতে সামনে পা বাড়ায়। ঘটনাচক্রে এই ঘটনাগুলোর আবর্তনের কেন্দ্রে ছিলাম আমি। ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০১ থেকে ২০০৮ সময়কালটা প্রচণ্ড মন্দায় গেলেও বেসরকারি খাত তাকেও দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করেছে। ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করার পর ০৯ সালে স্বর্ণকন্যা শেখ হাসিনার সরকার অসাধারণ আন্তরিকতার সাথে এই খাতকে সর্বাত্মক সহায়তা করেছে। যেহেতু এই সময়েও আমি বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সাথে প্রায় ৬ বছর যুক্ত ছিলাম সেহেতু সরকারের আন্তরিকতার বিষয়টি আমার নজরে পড়েছে। বস্তুত ১৭ সালের বাংলাদেশ ডিজিটাল রূপান্তরের অসাধারণ অগ্রগতির দেশ।
মজার বিষয় হলো; এক বছর আগে বেসিসের সভাপতি হবার পর অনুভব করলাম যে সময়টি আগের মতো নেই। বিসিএস এর কাজ ছিলো কমদামে দেশে কম্পিউটার আনা ও জনগণকে কম্পিউটারের বিষয়ে সচেতন করা। বেসিসের পরিধিটা একেবারেই ভিন্ন। এমনকি জন্মের সময় আমরা যে বেসিসকে যে কাজের জন্য গড়ে তুলবো বলে মনে করেছিলাম এখন আর সেই অবস্থাটি বিরাজ করেনা। বেসিসের জন্মের সময় ৯৮-৯৯ সালে সহ সভাপতি এবং ২০০৩-০৪ সালে পরিচালক থাকার পর এবার ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই থেকে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের একটি নতুন চিত্র দেখতে পাচ্ছি। ১৫ জুলাই ১৭ পর্যন্ত এই কমিটির এক তৃতীয়াংশের মেয়াদ থাকার কথা ছিলো। তবে ডিটিওর নির্দেশনা অনুসারে নির্বাহী কমিটির মেয়াদ দুই বছর করার ফলে এই মেয়াদ ৬ মাস বাড়তে পারে বা এক বছর বাড়তে পারে এবং সর্বোচ্চ ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই শেষ হতে পারে।
হিসাব করলে তথ্যপ্রযুক্তির বাণিজ্য সংগঠনের এই পথ চলা ছোট বা সংক্ষিপ্ত নয়। নিজেকে যদি এই কথাটি বলে বোঝাতে চাই যে কেমন মনে হচ্ছে নতুন দায়িত্ব পেয়ে, তবে এটি মনে হতেই পারে যে, চ্যালেঞ্জটি মোটেই কম নয়। সেই ৮৭ সালে এই জগতে প্রবেশ করে কেবল স্রোতের বিপক্ষেই চলতে থেকেছি। মানুষ যখন কম্পিউটারকে বাইনারি যন্ত্র হিসেবে আমার সামনে তুলে ধরেছে আমি তখন সেটাকে প্রকাশনার যন্ত্র বানিয়েছি। বহু বছর আমি কম্পিউটার বিক্রেতার সম্মানও পাইনি। সফটওয়্যার বানিয়েছি কিন্তু সফটওয়্যার নির্মাতার মর্যাদা এখনও পাইনি। এখনও এমন ধারণা বিরাজ করে যে সফটওয়্যার বিক্রি করা একটি মহা অপরাধ। মেধাজাত সম্পদ তৈরি করাও যেন বিশাল অপরাধ। আমি আমার কপিরাইট ও প্যাটেন্ট করা সফটওয়্যার নিজের দাবি করলে আমাকে কাগু-ছাগু, স্টিভ জব্বারসহ কুৎসিৎ গালি দেয়া হয়। নোংরা ছবি ও মিথ্যা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়া হয়। আর আমার মেধাসম্পদ যারা চুরি করে তারা নায়কে পরিণত হয়। তবুও দেশের প্রথম কম্পিউটার মেলা, প্রথম রপ্তানি টাস্কফোর্স, শুল্ক ও ভ্যাটমুক্ত আন্দোলন, তথ্যপ্রযুক্তিসহ সম্প্রচার-অনলাইন নীতিমালাসমূহ ও কপিরাইট আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা সম্প্রচার আইনসহ নানা আইন প্রণয়নসহ এমন কোন মুহূর্ত যায়নি যাতে নিজে সরাসরি যুক্ত হইনি।
আমি লক্ষ্য করেছি এক সময়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা যখন এটাকে প্রোগ্রামিং-এর যন্ত্র বানাতে চেয়েছে আমি তখন সেটিকে ছবি আকার-ভিডিও সম্পাদনার যন্ত্র বানিয়েছি। এরপর বাণিজ্য সংগঠনের হাত ধরে আমরা যতো পারলাম সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করে আসছিলাম। বিসিএস ও বেসিস এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফরম হিসেবে কাজে লেগেছে। যদি এসব সংগঠন না জন্মাতো তবে কম্পিউটার এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবেই আবদ্ধ থাকতো। এখন সেটি দেশের প্রতিটি নাগরিককে স্পর্শ করছে। এমন একটি অবস্থায় মোট ৯ জন পরিচালককে নির্বাচিত করে বেসিস সদস্যরা দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অন্যতম প্রধান এই সংগঠনটির মাধ্যমে কেবল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথাই ভাবছেনা, ভাবছে ৪১ সালের জ্ঞানভিত্তিক সমাজের কথাও। এই এক বছরে বেসিস নিয়ে যে কাজগুলো আমাকে করতে হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ হলো;
১) রাষ্ট্রভাষা বাংলায় বেসিস-এর যাবতীয় যোগাযোগ করা২) জাতির জনক ও সরকার প্রধানকে বেসিস-এর সম্মানের জায়গায় স্থাপন করা। ৩) বেসিস কেবল ইভেণ্ট ব্যবস্থাপনা করে তেমন একটি ধারণাকে বদলানো। ৪) বেসিস এর নিজস্ব আয়োজন যেমন সফটএক্সপো সফলভাবে সম্পন্ন করা। ৫) বেসিস সদস্যদেরকে সক্রিয় করা। ২৪টি স্থায়ী কমিটির সহায়তায় সেই কাজটি সুন্দরভাবেই সম্পন্ন হচ্ছে। ৬) সরকারের সাথে বেসিস এর সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করে সমাধান করা। এর মাঝে ছিলো বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সমস্যা, কর ও ভ্যাট বিষয়ক সমস্যা এবং নানা খাতে নানা ধরনের সংকটে পতিত সদস্যদেরকে সহায়তা করা। এই সময়ে সরকারের সাথে চলমান কাজগুলো করার পাশাপাশি যেটি সবচেয়ে বড় অর্জন সেটি হচ্ছে রপ্তানিতে শতকরা ১০ ভাগ নগদ সহায়তা পাওয়া। ৭) বেসিস এর সংঘবিধি সংশোধন ও সেই আলোকে এই প্রতিষ্ঠানটিকে আরও সচল করা। ৮) বেসিস-এর প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে গতিশীল করা ও এর দ্বিতীয় স্তরটিকে আরও সুবিন্যস্ত করা। ৯) সরকারের আইন ও নীতিসমূহ হালনাগাদ করার পাশাপাশি সরকারি প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে সহায়তা করা এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়টি নিশ্চিত করা।
অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তিতে আমাদের দেশটিও সামনে চলার পথে নানা স্তরের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। যেভাবে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত সামনের দিকে পা বাড়াচ্ছে তাতে এখনই মূল্যায়ন করার সময় যে এই খাতের চ্যালেঞ্জগুলো কি কি? বিষয়গুলো এতো ব্যাপক যে প্রতিটি প্রসঙ্গ নিয়ে অনেক বড় করে একটি থিসিস লেখা যায়। কিন্তু আমি বিষয়গুলোকে একটি ছোট প্রেক্ষিতে ক্যাপসুল আকারে পরিবেশন করছি। সবাই জানেন যে, বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সংস্থাটি ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স। এর সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটির পুর্বপুরুষকে তিনি তার প্রথম শাসনকালে গড়ে তুলেছিলেন। এই আমলে তার নাম বদলেছে। এই টাস্কফোর্সের একটি সহায়ক কমিটি আছে, সেটির নাম ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সং নির্বাহী কমিটি। এটিও উচ্চ পর্যায়ের কমিটি-কারণ এর সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব। দেশে তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশে বিশেষত আন্তঃ মন্ত্রণালয় বিষয়ক জটলা ছাড়াতে এর চাইতে শক্তিশালী সংস্থা আর হতে পরেনা। আমরা এই টাস্কফোর্সের সভা চাই। খুব সঙ্গতকারণেই এই গুরুত্বপূর্ণ টাস্কফোর্সের সভায় আমরা তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে চাই।
আমাদের সবারই মনে থাকার কথা যে গত ৬ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে গত ৮ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে এবং ২৭ মার্চ ২০১৭ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব জনাব মো. আবুল কালাম আজাদ ও কামাল আব্দুল নাসেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দুটি সভায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে করণীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। উক্ত তিনটি সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং এতদবিষয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের পরবর্তী সভা আহ্বান করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। উল্লেখিত বিষয়গুলো একাধিক বা ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে যুক্ত বিধায় ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স এর মূল কমিটির সভায় এই বিষয়গুলো আলোচিত হতে পারে।
যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হতে পারে সেগুলো নিন্মরুপ:
ক ) মেধাস্বত্ব: ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হচ্ছে মেধাস্বত্ব। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মেধাস্বত্ব বিষয়ক আইনগুলো আপডেট করা নেই। কপিরাইট আইন ২০০০ সালের। এতে ডিজিটাল সম্পদের সুরক্ষার সঠিক উপায় নেই। প্যাটেন্ট আইন ২০১১ সালের। সেটি সফটওয়্যারের চাহিদা মেটাতে পারেনা। এজন্য আইন প্রণয়ন ও তার প্রয়োগ জরুরি একটি বিষয়। কিন্তু বিষয়গুলো সেভাবে আগাচ্ছে না। এই বিষয়ে সংস্কৃতি ও শিল্প মন্ত্রণালয় ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আমরা মেধাস্বত্বে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছি: ১) কপিরাইট আইন সংশোধন ২)প্যাটেন্ট অ্যান্ড ডিজাইন আইন প্রণয়ন। ডিজিটাল রাইটস বিষয়ক আইন প্রণয়ন বা কপিরাইট আইনে তার অন্তভুর্ক্তিকরণ। ২৭ মার্চের সভায় প্রসঙ্গটি আলোচিত হলেও বহুদিন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে এখনও কোন পদক্ষেপ নেয়নি। অবশেষে ১২ জুলাই কপিরাইট আইন সংশোধন কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং তাতে এটি প্রতীয়মান হয় যে এবার হয়তো আইনটি সংসদ অভিমুখে যাত্রা করবে। তবে প্যাটেন্ট আইনের কোন খবর নাই এখনও।
খ ) নীতিমালা: আমরা মনে করি কিছু নীতিমালা বিষয়ক আলোচনা হওয়া জরুরি। বিদ্যমান তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালাকে হালনাগাদ করা ছাড়াও কিছু নতুন নীতিমালা প্রণীত হতে পারে। আমরা তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা আপডেট করার দাবি জানিয়ে আসছিলাম। ২৭ মার্চ এর সভায় এটি আলোচিত হবার পর তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এই বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে। আশা করি এটি অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হবে। এই বিষয়ক একটি সেমিনার আমাদেরকে আশান্বিত করেছে। ই-কমার্স নীতিমালা প্রণয়ন ছাড়াও এই বিষয়ক জটিলতা নিরসন, ডিজিটাল সার্ভিসেস নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাংলা ভাষার প্রমিতকরণ মানগুলো প্রয়োগ করার বিষয়টি খুবই জরুরি। এই খাতে আলোচ্য বিষয় হতে পারে; ১) তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা অবিলম্বে নবায়ণ ২) ই-কমার্স নীতিমালা প্রণয়ন ও ই-কমার্স সংক্রান্ত অন্যান্য জটিলতা নিরসন। ৩) ডিজিটাল সার্ভিসেস (ভ্যালু এডেড সার্ভিসেস) নীতিমালা প্রণয়ন ৪) ডিজিটাল রূপান্তরের সকল পর্যায়ে প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ও নীতিমালা প্রণয়ন। সরকার তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার সমৃদ্ধকরণ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে এই চ্যালেঞ্জটি মোকাবেলা করতে সহায়তা করবে বলে আশা করি।
গ) ইন্টারনেট বিষয়ক: ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল অবকাঠামো ইন্টারনেট। কিন্তু ইন্টারনেট যেমনি সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় নেই তেমনি ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইদথ নেই। চ্যালেঞ্জ হলো; ইন্টারনেটের মূল্য হ্রাস ও যথেষ্ট গতি প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ
ঘ) শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর: ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর। এজন্য যেমনি ক্লাশরুমগুলো ডিজিটাল করা প্রয়োজন তেমনি শিক্ষার্থীদের হাতে ডিজিটাল যন্ত্র প্রদান করা প্রয়োজন। এর চাইতেও বড় কাজ শিক্ষার কাগজের উপাত্তকে ইন্টার্য়্যাকটিভ মাল্টিমিডিয়া বা ডিজিটাল কনটেন্টে রূপান্তর করা। এর জন্য একটি পথ নকশা থাকতে হবে এবং কাজগুলো সমন্বিত করতে হবে। নির্বাহী কমিটির সভায় সেই নির্দেশনা দেয়া হলেও এখনও তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ডিজিটাল ক্লাশরুম গড়ে তোলা, ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে ডিজিটাল যন্ত্র প্রদান ও ডিজিটাল উপাত্ত উন্নয়ন করতে হবে এবং এজন্য পথ নকশা তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমার জানা মতে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ডিজিটাল শিক্ষার প্রচলনে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে ডিজিটাল শিক্ষায় শিক্ষত করার জন্য একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ডিজিটাল ল্যাব করছে। শিক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও ডিজিটাল ক্লাশরুম করছে। কিন্তু এই কাজগুলো সমন্বিত নয়। টাস্কফোর্স নির্বাহী কমিটির সভায় একটি পথ নকশা তৈরির কথা বলা হলেও তার কোন নমুনা আমরা দেখতে পাইনা।
ঙ) দেশীয় হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশ: ২০১৫ সালের ৬ আগস্টে অনুষ্ঠিত ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স এর সভায় প্রধানমন্ত্রী দেশে ডিজিটাল যন্ত্র বানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সেই আলোকে এবারের বাজেটে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দেশীয় সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার উৎপাদনের ক্ষেত্রে মাইলফলক অগ্রগতি সাধন করবো বলে আশা করি।
চ) তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ: দেশে ব্যাপকহারে বিনামূল্যে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও নতুন প্রকল্পের অধীনে আরও প্রশিক্ষণ হবে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের এসব প্রশিক্ষণ সমন্বিত হওয়া উচিত। একেকজন একেক রকম প্রশিক্ষণ দিলে তার সুফল জাতি পাবেনা। এজন্য একটি সমন্বিত মানব সম্পদ উন্নয়ন পথনকশা তৈরি করা দরকার। বিচ্ছিন্নভাবে মানবসম্পদ তৈরি করা যাবেনা সেটি আমাদেরকে বুঝতে হবে।
রপ্তানি সহায়তা: ১৭-১৮ সালে একটি মাইলফলক কাজ করা হয়েছে। সেটি হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি রপ্তানিতে শতকরা ১০ ভাগ রপ্তানি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। আমি দৃড়ভাবে বিশ্বাস করি যে এর ফলে আমরা ১ বিলিয়ন বা ৫ বিলিয়নের যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছি সেটি সময়ের আগেই অতিক্রম করে যাবো।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে তথা ২০২১ সাল নাগাদ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে উপরোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া আবশ্যক বলে মনে করি।
ঢাকা, ১৩ জুলাই ১৭
লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার-এর জনক ।
এইচআর/এমএস