এরশাদ এখনও বিশ্ব বেহায়াই
স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তুখোড় নেতা ছিলেন মিন্টু আনোয়ার। পরে কিছুদিন সাংবাদিকতা করে এখন গার্মেন্টসে থিতু হয়েছেন। মা মারা যাওয়ায় মিন্টু ভাইয়ের সংসার ছিল বাবা-ছেলের। তিনি সারাদিন টইটই করে বেড়াতেন আর বাবার বকা খেতেন। তার কাছ থেকে শোনা গল্প। নব্বইয়ে উত্তাল আন্দোলনের সময় একবার ঢাকার বাইরের এক জনসভায় দুই হাত ওপরে তুলে এরশাদ বলেছিলেন, এই দেখেন আমার হাতে রক্তের কোনো দাগ নেই। এরশাদের সেই বক্তব্যের ছবি আমিও টিভিতে দেখেছিলাম। আমার স্পষ্ট মনে আছে, ক্রিকেট খেলার আম্পায়াররা যেভাবে দুই হাত ওপরে তুলে ছক্কার সিগনাল দেন, এরশাদ সেভাবেই তার হাত ওপরে তুলে রক্ত যে নেই তা দেখিয়েছিলেন। যেন খুনির হাতে রক্তের দাগ লেগে থাকে!
এরশাদের এমন ভণ্ডামির হাজারটা উদাহরণ বাংলার মানুষের মুখে মুখে। ক্ষমতায় থাকতে এরশাদ দুয়েকদিন সাইকেল চালিয়ে অফিসে এসে দারুণ প্রচারণা নিয়েছেন। তিনি হুট করে কোনো মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে চলে যেতেন। গিয়ে সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলতেন, ‘কাল রাতে স্বপ্নে দেখলাম, আপনাদের সাথে নামাজ পড়ছি।’ অথচ বৃহস্পতিবার রাতে দেখা এরশাদের স্বপ্নটি কিভাবে যেন আগেই ফাঁস হয়ে যেতো তার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কাছে। তারা এক সপ্তাহ আগে থেকেই ঐ মসজিদ নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলতো। বলছিলাম মিন্টু ভাইয়ের বাবার গল্প। এরশাদ যখন টিভিতে দুই হাত তুলে বলছিলেন, আমার হাতে রক্তের কোনো দাগ নেই। তখন মিন্টু ভাইয়ের বাবা হাতে থাকা পেপারওয়েট ছুঁড়ে টিভি ভেঙ্গে ফেলেছিলেন। গত ২৯ জুন জাতীয় সংসদে এরশাদ যখন দাবি করছিলেন, তাকে স্বৈরাচার বলা হলেও তিনি আসলে স্বৈরাচার নন। তিনি ক্ষমতা নিতে চাননি, বাধ্য হয়েছেন। এ কথা শুনে আমারও মিন্টু ভাইয়ের বাবার মত অনুভূতি হয়েছিল। ইচ্ছা হচ্ছিল টিভি বরাবর জুতা ছুঁড়ে মারি। আমি খুবই অবাক হয়েছি, কষ্ট পেয়েছি সংসদে কেউ এরশাদের এই মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করেননি। জুতা না হোক, কেউ অন্তত একটা ফাইলও ছুঁড়ে মারতে পারতেন। অথচ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অনেক বাঘা বাঘা সৈনিক এখন সংসদে আছেন, সেদিনও ছিলেন নিশ্চয়ই।
৮২ সালে এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণের সময় আমি স্কুলের ছাত্র। আর ৯০ সালে এরশাদের পতনের সময় আমি ইউনিভার্সিটিতে। ৮৫ থেকে ৯০- এই ৫ বছর; আমার যৌবনের উত্তাল ৫টি বছর আমি ব্যয় করেছি এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে। আন্দোলন করতে গিয়ে অনেক হয়রানির শিকার হয়েছি, লেখাপড়ার ক্ষতি হয়েছে। তবুও প্রয়োজনের সময় প্রতিবাদ করতে পেরেছি বলে, এরশাদের অবৈধ শাসনকে মেনে নিইনি বলে; স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে আমি গর্বিত। এ গর্ব আমার সারাজীবনের। এ গর্বের সাথে একটা আফসোসও আছে। ৯০এর নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত আমি ঢাকাতেই ছিলাম। তখন আমি যাত্রাবাড়ির এক মেসে থাকতাম। প্রতিদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেতাম আন্দোলনে অংশ নিতে। হঠাৎ একদিন আম্মা এসে আমাকে কিরা কসম দিয়ে কুমিল্লা নিয়ে গেলেন। যাওয়ার আগে আমি খালি পুরানা পল্টনের সিপিবি অফিস থেকে কিছু লিফলেট নিতে পেরেছিলাম কুমিল্লার আন্দোলনকারীদের জন্য। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের আমার শুরুটা হয়েছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকেই। আমার মনে আছে, ৬ ডিসেম্বর এরশাদের পতনের চূড়ান্ত ঘোষণা শোনার পর আমি লুঙ্গি পড়েই মিছিলে শামিল হয়েছিলাম। এক দৌড়ে চলে গিয়েছিলাম কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে। তার কিছুদিন আগেই কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খান জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাই সেদিন সবার ক্ষোভ ছিল তার প্রতি। বিক্ষুব্ধরা তার ঠাকুরপাড়ার বাসার দিকে যেতে চাইছিল। সিনিয়র নেতারা অনেক কষ্টে আমাদের নিবৃত করেছিলেন। তখন সিনিয়র নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ হলেও এখন বুঝি তারা ঠিক কাজটিই করেছিলেন। সেদিন বিক্ষুব্ধ জনতাকে না ঠেকালে মাটির সাথে মিশে যেতো আফজল খানের বাড়ি। এখন মতিঝিলের যুব ভবন তখন ছিল আল্লাওয়ালা ভবন। এই ভবনটিই ছিল জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। নব্বইয়ের ১০ অক্টোবর এই ভবন থেকে ছোড়া গুলিতেই শহীদ হয়েছিলেন জেহাদ। আমি সেদিন দিনভর আটকা পড়েছিলাম তার খুব কাছেই তখনকার আউটার স্টেডিয়ামে। এরশাদ পতনের পর আল্লাওয়ালা ভবনের কাঠামোটা ছাড়া আর সবকিছু খুলে নিয়েছিল বিক্ষুব্ধ জনতা।
১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর রাতে নিমেষেই খালি হয়ে গিয়েছিল মন্ত্রীপাড়া। সবাই লুকিয়ে চুরিয়ে পালিয়েছিলেন। সেই রাতে আমরা কখনোই ভাবিনি এরশাদ বা তার মন্ত্রিসভার কেউ আবার বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পাবেন। এরশাদ যে আবার এমপি হবেন, মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হবেন- এমনটা আমরা দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। পতনের পর প্রথম ৫ বছরই এরশাদের খারাপ কেটেছে। অনেকগুলো মামলা মাথায় নিয়ে জেলে ছিলেন। তারপর প্রথমে আওয়ামী লীগের সাথে সমঝোতা করে মুক্ত হন। মুক্তির আগের সময়টায় এরশাদ সংসদ ভবন এলাকায় বিশেষ কারাগারে বদলে যাওয়া একটি ভবনে ছিলেন। তার মুক্তির সময়টায় আমি রিপোর্টার হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলাম। সংসদ লবিতে মুক্তি পরবর্তী প্রথম সংবাদ সম্মেলনেও উপস্থিত ছিলাম। অনির্ধারিত সেই সংবাদ সম্মেলনে আমি এরশাদের হাত ছোঁয়া দূরত্বে ছিলাম। বারবার আমার হাত খুব নিশপিশ করছিল। পেশার কারণে পারিনি। আমার খুব গ্লানি হয়েছিল সেদিন।
মূলত জাতীয় পার্টির তখনকার মহাসচিব আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর চেষ্টায় এরশাদ মুক্তি পেয়েছিলেন। মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছিলেন মঞ্জু। কিন্তু কয়েকদিন পর বিএনপির সাথে মিলে চারদলীয় ঐক্যজোট গড়ে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে জাতীয় পার্টি। মন্ত্রিসভা থেকে মঞ্জুর পদত্যাগ প্রশ্নে ভেঙে যায় জাতীয় পাটি। চারদলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের প্রথম বৈঠক হয়েছিল ২৯ মিন্টো রোডে বিরোধী দলীয় নেতার বাসভবনে। আমি সেদিনও রিপোর্টার হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলাম। বৈঠকে যোগ দিতে এরশাদ যখন ২৯ মিন্টো রোডে পৌঁছান, তখন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অগ্রসেনানী আমানউল্লাহ আমান দ্রুত মূল গেটে পৌঁছে এরশাদকে অভ্যর্থনা জানাতে সামনের ফুলের বাগান দলে ছুটে গিয়েছিলেন। সেই দৃশ্য দেখে নিজের জন্য নয়, আমানউল্লাহ আমানের জন্য লজ্জায় আমার মাথা হেট হয়ে গিয়েছিল। আমানউল্লাহ আমান সেদিন শুধু বিরোধী দলীয় নেতার বাসভবনের সামনের ফুলবাগানই তছনছ করেননি, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের একজন কর্মীর হৃদয় ভেঙ্গেও তছনছ করে দিয়েছিলেন।
তারপর থেকেই এরশাদ বাংলাদেশের রাজনীতির একজন ভাড়। জাতীয় পার্টি রাজনৈতিক পার্টি নয়, যেন একটি যাত্রা দল। আদর্শের কোনো বালাই নেই। আজ বিএনপির সাথে তো কাল আওয়ামী লীগের সঙ্গী। পেন্ডুলাম পার্টি। তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা দুই বড় দলের সাথে জোট গড়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এরশাদ নিজেকে জায়েজ করে নিয়েছেন। এখন আর কোনো দলেরই এরশাদের বিরুদ্ধে কথা বলার নৈতিক অধিকার নেই। ৮৩এর মধ্য ফেব্রুয়ারির আন্দোলনে জাফর-জয়নাল-দীপালি সাহাদের আত্মদান, ৮৭এর ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবস, ৯০ ১০ অক্টোবর জেহাদ দিবস, ২৭ নভেম্বর ডা. মিলন দিবস, ৬ ডিসেম্বর এরশাদের পতন দিবস পালন এখন প্রহসন মনে হয়। ময়েজউদ্দিন, রাউফুন বসুনিয়াদের জীবন মনে হয় বৃথাই গিয়েছিল।
পতনের পর এরশাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছিল। রাডার কেনায় দুর্নীতি, রাষ্ট্রপতি হিসেবে পাওয়া পুরস্কার আত্মসাত ইত্যাদি অনেক হাস্যকর মামলা হয়েছিল। তবে এসব কারণে তো আমরা এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করিনি। আমরা প্রথম দিন থেকেই এরশাদকে প্রত্যাখ্যান করে আসছি, কারণ এরশাদ নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে বন্দুকের মুখে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। আর হঠাৎ এক সকালে মনে হলো আর বন্দুক নিয়ে বঙ্গভবনে চলে গেলেন; ব্যাপারটা অমন সরল নয়। ক্ষমতা গ্রহণের জন্য চতুর এরশাদ দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার নিঁখুত বাস্তবায়ন করেছেন। সেনাবাহিনীতে জিয়ার উত্তরসূরি হিসেবে সবচেয়ে যোগ্য ছিলেন জেনালের মঞ্জুর। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে অনেক সচেতন ও মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জুরকে নিয়ে জিয়া কিছুটা ঝুঁকি ফিল করে থাকবেন। তাই তাকে ঢাকার বাইরে পাঠিয়ে এরশাদকে সেনাপ্রধান বানান জিয়াউর রহমান। জিয়া ভেবেছিলেন এরশাদ নারী আর কবিতা নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। তার জন্য কখনো হুমকি হবে না। কিন্তু জিয়া চিনতে ভুল করেছিলেন ধূর্ত এরশাদকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে থেকে মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রধানের দায়িত্ব পালন করা এরশাদ ৮১ সালে এক ঢিলে অনেক পাখি মেরেছেন। জিয়াকে হত্যা করেছেন। জিয়া হত্যার দায় দিয়ে জেনারেল মঞ্জুরকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছেন। এরপর জিয়া হত্যার বিচারের নামে প্রহসন করে মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। সব মিলিয়ে এক ধাক্কায় সেনাবাহিনী পরিষ্কার। তারপর ক্ষমতা গ্রহণের পটভূমি তৈরি করতে নানা নাটক। দুর্নীতির নানা গল্প।
যুব প্রতিমন্ত্রী আবুল কাশেমের বাসা থেকে সন্ত্রাসী গালকাটা কামালকে গ্রেপ্তার করিয়ে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারকে ব্যর্থ প্রমাণ করে নিয়ে নিলেন ক্ষমতা। এরশাদ ক্ষমতা নিয়েছিলেন মাত্র ৩৫ বছর আগে। বাংলাদেশের কোটি মানুষের স্মৃতিতে এখনও আছে সেই দিনগুলি। সেই এরশাদ যখন এখন পবিত্র সংসদে দাঁড়িয়ে নির্বিকার চিত্তে মিথ্যাচার করেন, যখন বলেন, ‘আমার কোনো দোষ ছিল না। দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে আমাকে ক্ষমতা নিতে হয়েছিল। বিচারপতি সাত্তার নির্বাচন করবেন। আমি সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলাম, নির্বাচনের জন্য তাকে সাহায্য করেছিলাম। কিন্তু এক বছরের মাথায় তিনি বললেন, ‘আমার মন্ত্রিসভার সব সদস্য দুর্নীতি পরায়ণ। আমি দেশ পরিচালনায় অপারগ। সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাই। আমরা প্রস্তুত ছিলাম না, কারণ দেশ পরিচালনা করা সহজ ব্যাপার নয়। এটা আমি উপলব্ধি করি। আমি ক্ষমতা নিতে চাইনি। কিন্তু কোনো উপায় ছিল না, বাধ্য হয়ে এই দায়িত্ব আমাকে গ্রহণ করতে হয়েছিল। দায়িত্ব নেওয়ার সময় আমি বলেছিলাম, নির্বাচন দিয়ে শৃঙ্খলা ফিরে আসার পর আবার ব্যারাকে ফিরে যাব। আমি আমার কথা রেখেছিলাম। ১৯৮৪ সালে নির্বাচন দিয়েছিলাম। ওই নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণ করলে আমি ব্যারাকে ফিরে যেতে পারতাম। দুঃখের বিষয় তখন বিএনপি, জামায়াত, আওয়ামী লীগ কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। এখানে আছেন মেনন সাহেব, ইনু সাহেবও অংশগ্রহণ করেননি। এর ফলশ্রুতিতে আমাকে ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি সৃষ্টি করতে হয়েছিল।’
তখন লজ্জা লাগে, কষ্ট লাগে। আমি খালি ভাবছি, এরশাদ কি নিপুণভাবে মিথ্যাচার করতে পারেন। ৬ ডিসেম্বর পালিত হয় স্বৈরাচার পতন দিবস হিসেবে। আর জাতীয় পার্টি দিবসটি পালন করে ‘গণতন্ত্র রক্ষা দিবস’ হিসেবে। আমার ভয় আরো কয়েকবছর বাঁচলে এরশাদ হয়তো নিজেকে গণতন্ত্রের মানসপুত্র দাবি করবেন।
হাসানুল হক ইনুর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা আছে। কারণ এরশাদের বিরুদ্ধে অনেক হাস্যকর মামলা হলেও জেনুইন মামলাটি করেছিলেন তিনিই। সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করার অভিযোগে দায়ের করা মামলাটির কিছু হয়নি। তবু কেউ একজন এরশাদের আসল অপরাধটি চিহ্নিত করেছিলেন, তাতেই তার প্রতি কৃতজ্ঞতা। সেই হাসানুল হক ইনু এখন তথ্যমন্ত্রী। এরশাদ যখন সংসদে দাঁড়িয়ে মিথ্যাচার করছিলেন, তখন হাসানুল হক ইনু সংসদে ছিলেন কিনা জানি না। থাকলেও তিনি বা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের নেতাদের কেউ প্রতিবাদ করেননি। সংসদের বাইরেও কোনো জোরালো প্রতিবাদ হয়নি। জেনারেল মঞ্জুর হত্যার দায়েও এরশাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা আছে। এরশাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো এখন তাকে পোষ মানানোর অস্ত্র। এরশাদ যখনই বিপ্লবী কথাবার্তা বলেন, তখনই একটা মামলার তারিখ পড়ে। আর এরশাদ আবার সুরসুর করে গৃহপালিত বনে যান।
রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই, এই নোংরা কথাটি বলে বলে আমাদের রাজনীতিবিদরা অনেক কিছু জায়েজ করে নেন। কিন্তু আমরা যারা এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আমাদের যৌবন ব্যয় করেছি, তাদের কাছে এরশাদ সবসময়ই স্বৈরাচার। এরশাদের জন্য ৮২ সালে যতটা ঘৃণা ছিল, ৯০এ যতটা ছিল, এখনও ততটাই আছে। পটুয়া কামরুল হাসান মৃত্যুর আগে এরশাদের একটি কার্টুন একে লিখেছিলেন, ‘দেশ আজ বিশ্ব বেহারায়ার খপ্পরে।’ এরশাদ তখনও যেমন বিশ্ব বেহায়া ছিলেন, এখনও ততটাই বেহায়া।
১০ জুলাই, ২০১৭
এইচআর/পিআর