কে নেবে এই মৃত্যুর দায়?
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাশিমপুরের নয়াপাড়া এলাকায় সোমবার রাতে মাল্টি ফ্যাবস লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে ১০ জন নিহত ও কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। এতসংখ্যক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা দেখিয়ে দিল এদেশে শ্রমিকের জীবন এখনো কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ। যারা মারা গেছেন তারা শ্রমিক। অনেকেই আছেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এই পরিবারগুলোর দায়িত্ব কে নেবে? এই মৃত্যুর দায়ভারই বা নেবে কে?
ঈদের ছুটির পর কারখানাটি মঙ্গলবার খোলার কথা ছিল। তবে সোমবার ডাইং ইউনিটের বয়লার সেকশনটি চালু ছিল। নিচতলায় ২৫-৩০ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে হঠাৎ করে বিকট শব্দে বয়লারটি বিস্ফোরণ ঘটলে চারতলা ভবনের নিচতলা ও দুতলার দুই পাশের দেয়াল, দরজা-জানালা ও মেশিনপত্র উড়ে যায় এবং বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে। এ সময় কারখানার সামনের রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী বেশকিছু সাধারণ মানুষ আহত হন। বিস্ফোরণের ফলে আশেপাশের কারখানার ভবনগুলো কেঁপে ওঠে এবং দরজা-জানালার কাঁচ ভেঙে যায়। এতে আশেপাশের শ্রমিক এবং সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কারখানা স্থাপনের অনুমতি দেওয়া থেকে শুরু করে পরিদর্শন, পরিচালনা সব স্তরে শতভাগ সততা নিশ্চিত না করতে পারলে কর্মপরিবেশ কখনো নিরাপদ হবে না। পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে আইনের শাসন। অপরাধ করে পার পাওয়া গেলে, শ্রমিকদের ঝুঁকির মধ্যে রেখে মুনাফা বৃদ্ধির সুযোগ অসৎ ব্যবসায়ীরা নেবেই। আর এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আমাদের দেশে শ্রমিকের জীবন মান ও কর্মপরিবেশ নিয়ে এমনিতেই নেতিবাচক ধারণা রয়েছে বহির্বিশ্বের। এ ধরনের দুর্ঘটনা সেখানে আরো ভুল বার্তা দেবে।
বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগেও বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বয়লার বিস্ফোরণে। কিন্তু কারখানার নিরাপত্তায় তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মুনাফার দিকে যতোটা মনোযোগ থাকে নিরাপত্তার দিকে তারা ততোটাই উদাসীন থাকেন। এটা কাম্য হতে পারে না। গাজীপুরের ঘটনায় তদন্ত করে দেখতে হবে কোথায় কি গাফিলতি ছিল। নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে, তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। আহতদের সুচিকিৎসাও নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
এইচআর/আরআইপি