গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি কার স্বার্থে?
আবারো গ্যাসের দাম বাড়ছে।দ্বিতীয় ধাপে গ্যাসের এই দাম বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার এ আদেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে দামবৃদ্ধিতে আইনগত কোনো বাধা থাকলো না। তবে ৫ জুন এ নিয়ে আদালতে শুনানি হবে। গত ১ মার্চ থেকে প্রথম দফায় বর্ধিত মূল্য কার্যকর হয়। এবং আজ ১ জুন থেকে দ্বিতীয় দফায় বর্ধিত মূল্য কার্যকর হবে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের পক্ষ থেকে দুই ধাপে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। ওই বিজ্ঞপ্তিতে আটটি গ্রাহক শ্রেণিতে দুই ধাপে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। দুই ধাপে গ্যাসের দাম গড়ে ২২.৭৩ শতাংশ বেড়েছে। প্রথম ধাপে আবাসিক খাতে দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকা এবং এক চুলার জন্য ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা ১ মার্চ থেকে কার্যকর হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে দুই চুলার জন্য ৯৫০ টাকা এবং এক চুলার জন্য ৯০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা ১ জুন থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। এক চুলায় ৫০ শতাংশ এবং দুই চুলায় ৪৬.১৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া প্রথম দফায় গৃহস্থালিতে মিটারভিত্তিক গ্যাসের বিল প্রতি ঘনমিটার সাত টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা ১০ পয়সা করা হয়। দ্বিতীয় দফায় এটি বেড়ে দাঁড়াবে ১১ টাকা ২০ পয়সায়। এই বৃদ্ধি স্বাভাবিকভাবেই জীবনযাত্রার ব্যয় আরো বাড়াবে। এতে যে ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগ চরমে উঠবে সেটি বলার অপেক্ষা রাখেনা।
আমরা বরাবরাই দেখেছি ভর্তুকির কথা বলে মূল্যবৃদ্ধির শর্টকাট পথে সরকার এগোয়। দুর্মূল্যের বাজারে এমনিতেই জনসাধারণের নাভিশ্বাস উঠেছে। এই অবস্থার মধ্যে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হলে তা হবে তাদের জন্য ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’। অধিকাংশ যানবাহন এবং ট্রাক, লরি এখন গ্যাসচালিত। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে যাত্রীভাড়া বাড়বে। বাড়বে পণ্য-দ্রব্য বহনের খরচও। এর ফলে নিত্যপণ্যের বাজার আরও অস্থির হবে। এই বৃদ্ধির কুফল মানুষজনকে নানা ভাবে ভোগাবে।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি ও শুল্ক সংগ্রহের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। অথচ এ খাতের উদ্ধৃত্ত অর্থ দিয়েই তা করা সম্ভব। এছাড়া ভর্তুকি কমানোর বিষয়টিও অনেক সময় সামনে নিয়ে আসা হয়। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ভর্তুকি কমানোর জন্য মূল্যবৃদ্ধির শর্টকাট রাস্তায় চলে। অথচ দুর্নীতি কমানো, সিস্টেমলস বন্ধ করাসহ নানাবিধ উপায়ে আয় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সেটি করা গেলে জনসাধারণকে আর বাড়তি পয়সা গুণতে হতো না। খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে দাম বাড়ালে শেষ পর্যন্ত এর সুফল পাওয়া যায় না। ভোক্তা অধিকারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলে মূল্যবৃদ্ধির এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের দিকে যেতে হয় না। আমরা আশা করবো জনসাধারণের সার্বিক দুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তারও আগে চলমান গ্যাস সংকট দূর করতে হবে। জনহিতকর সরকারের এটিই দায়িত্ব।
মনে রাখা প্রয়োজন গ্যাস প্রাকৃতিক সম্পদ। এর মজুদ অফুরন্ত নয়। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলতে পারছেন না কতদিনের গ্যাস মজুদ আছে। তাছাড়া বাসাবাড়িতে ও শিল্পকারখানায়ও চাহিদামত গ্যাস সংযোগ দেওয়া যাচ্ছেনা। এখনো জ্বালানি নীতিও ঠিক হয়নি অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার নিয়ে। মূল্যবান গ্যাস প্রাইভেটকারের জ্বালানি হবে, গণপরিবহনে ব্যবহৃত হবে, চুলায় জ্বলবে, নাকি শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত হবে। তাছাড়া গ্যাস সরবরাহের পদ্ধতিই বা কি হবে পাইপলাইনের মাধ্যমে-নাকি সিলিন্ডারে- ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই বিষয়গুলোর দিকেও নজর দিতে হবে। এখন থেকেই কাজ করতে হবে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।
এইচআর/আরআইপি