ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বাড়ছে শিশু ধর্ষণ

প্রকাশিত: ০৪:০৫ এএম, ২৩ মে ২০১৭

আচ্ছা, শিশুদের প্রতি আপনার অনুভুতি কি? হ্যাঁ ,আপনাকেই বলছি। শিশুদের প্রতি কি মমত্ব অনুভব করেন? বিরক্তি? নাকি...কাম? আমাকে ছিঃ চিৎকার দেবার আগে আশে পাশে চোখ বুলান। কালো কালো কাপড়ে ঢাকা কিছু অবয়ব দেখবেন, তাদের দেহ তো বটেই, চোখ নাক মুখ অপ্রকাশ্য। দিনে দিনে তাদের সংখ্যা বাড়ছে। যে উদ্দেশ্যে তাদের এই রূপান্তর সেটা থেকেও তাদের নিস্তার নেই। নিস্তার নেই তাদের সন্তানদেরও। বরং বেশি করে আক্রমণ সেই শিশুটির উপরেই নেমে আসার এখন প্রবল আশঙ্কা।

সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া শিশু ধর্ষণের ক্রমবর্ধমান হার তাই বলে। কোথায় লুকাবো আমরা? কোথায় লুকাবো আমাদের বাচ্চাদের? বাচ্চার জন্য খাবার আনতে গেলে, বাচ্চা মাকে খুঁজতে গেলে, স্কুল, মাদ্রাসা, উপাসনালয়, মার্কেট, বাসে, ট্রেনে, কয়টা জায়গায় খেয়াল রাখব ওদের? প্রত্যেকদিন খবরের কাগজে ধর্ষণের বীভৎসতা আর রাস্তাঘাটে সৌদিপ্রেমী নারীদের দেখে বড় অসহায় লাগে।

এখন পুরুষ মানেই সন্দেহ, পুরুষ মানেই খারাপ, পুরুষ মানেই যে কোন উপায়ে নারীর ক্ষতি সাধনের কেউ। সত্যি কি তাই? আমি তো এখনও তা বিশ্বাস করতে পারি না। আমার চারপাশে কত ভাল এবং আলোকিত পুরুষ বিদ্যমান। কিন্তু অন্ধকার ঘরে সাপ মানে সারা ঘরে সাপ। তাই কি বিশ্বাসের জায়গাটা দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে? কিন্তু তাহলে কেন বাড়ছে যৌন নিগ্রহ, ধর্ষণ, পেডফিলিয়া।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১২ সালে ৮৬ জন, ২০১৩ সালে ১৭৯ জন, ২০১৪ সালে ১৯৯ জন, ২০১৫ সালে ৫২১ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ চিত্র থেকেই স্পষ্ট- প্রতিবছরই শিশু ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ৬৮৬টি শিশু ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ইভ টিজিং, যৌন হয়রানীসহ বিভিন্ন ধরনের যৌন নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে। ২০১৫ সালে সারা দেশে ৭২৭টি শিশু যৌন নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। তবে তাদের জরিপ অনুসারে ২০১৫ সাল থেকেই শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন ও নিপীড়ন আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪তে সর্বমোট ২২৪টি শিশু যৌন নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছিল।

মানবাধিকার ও আইন সহায়তাকারী বেসরকারি সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বিভিন্ন গণমাধ্যম পর্যলোচনা করে নারী ও শিশু নির্যাতনের নানা ঘটনা সংরক্ষণ করে। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ৭২৪টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৬ বছরের কম বয়সী শিশু ৬২ জন, ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী ১৭৮ জন এবং ১৩ থেকে আঠারো বছর বয়সীর সংখ্যা ২৫১ জন। অর্থাৎ ধর্ষণের শিকার হওয়া প্রায় সবাই অপ্রাপ্তবয়স্ক। আসক-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ পর্যন্ত মোট ২৭ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। যাদের ২০ জনই অপ্রাপ্তবয়স্ক। এ রকম বিভিন্ন সংস্থার হিসাবেও একথা স্পষ্ট যে ধর্ষণের মতো নির্মম ঘটনার শিকার হওয়াদের অধিকাংশই শিশু।

আগে মাদ্রাসা বা আবাসিক হোস্টেলে শিশু ধর্ষণের শিকার হত। এখন পথে ঘাটে দেদারসে ঘটছে ছেলে শিশু ধর্ষণের ঘটনা। সমাজতাত্ত্বিকরা ভাল বলতে পারবেন, একটা সমাজ কতখানি অসুস্থ হলে এ রকম ঘটনা রোজ ঘটতে পারে। শিশুর প্রতি এতটাই কামনা যে তার জননেন্দ্রিয় চিরে কাজ সম্পন্ন করার ঘটনা ঘটে, না হলে মেরে ফেলা যায়। মুখে, পায়ুপথে পুরুষের যৌনতৃষ্ণা একটা শিশুকে কেন মেটাতে হবে, তাকে কেন হাসপাতালে শুয়ে কাতরাতে হবে, তাকে সংবাদ মাধ্যমে ব্লার চেহারা নিয়ে কেন আসতে হবে, কেন কোন ন্যায় বিচার না পেয়ে বাবা মেয়ে বেছে নেবে ট্রেনের ধারালো চাকা।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের কাছের পুরুষটি এই কর্ম করে থাকেন। তো কাকেই বা বিশ্বাস করবেন?

শোনেন, আপনি যদি পেডোফাইল হয়ে থাকেন, দয়া করে গোপনে চিকিৎসা করান। একটা বাচ্চার জীবন নষ্ট করবেন না। আপনার কামনা সাময়িক, একটা শিশুর জীবন সেই বীভৎস বীর্যে নষ্ট করবেন না। তার দৈহিক যন্ত্রণা হয়ত একটা সময় সে কাটিয়ে উঠবে কিন্তু যে মানসিক ক্ষতি তার হবে সারাজীবনেও সে তা কাটিয়ে উঠতে পারবে কি না সন্দেহ। আর আইন প্রণেতাদের বলছি, তাদের কাছের শিশুটির যদি বাংলাদেশে কিছুদিন হলেও থাকার ইচ্ছে থাকে তাহলে এই পুংলিঙ্গধারীদের , যারা শিশুকে স্নেহ নয়, কামনা উদ্রেককারী ভাবেন তাদের একটা ব্যবস্থা যে করতেই হবে! নইলে এদেশ একটি পরিত্যক্ত ভূখণ্ড হয়ে থাকবে যেখানে উত্থিত পুংদণ্ড নিয়ে থাকবে শুধু পুরুষ। মনে রাখবেন, নারী মায়ের জাত। সে তার সন্তানের নিরাপত্তার জন্য পেরিয়ে যেতে পারে যেকোন দূরত্ব। তা সে দেশ হোক বা জঙ্গলের আইন।

লেখক : সঙ্গীতশিল্পী, লেখক।

এইচআর/জেআইএম

আরও পড়ুন