ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

চিকুনগুনিয়া জ্বর : জনসচেতনতা কাম্য

প্রকাশিত: ০৬:৪০ এএম, ২১ মে ২০১৭

হঠাৎ করে উচ্চমাত্রার জ্বরের সাথে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা (জয়েন্ট পেইন), শরীর ব্যথা, বমি, মাথাব্যথা, অবসাদ ইত্যাদিতে এখন আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। এর পেছনে মশার কামড়ই মূলতঃ দায়ী। কারণ, যে ভাইরাসের আক্রমণে এমন শারীরিক অসুস্থতা সুষ্টি হচ্ছে সে ভাইরাস এডিস গোত্রের অন্তর্ভুক্ত দু’ধরনের মশার মাধ্যমে এক শরীর থেকে আর এক শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে এডিস গোত্রের এ মশারা (এডিস ইজিপটি এবং এডিস এলবোপিকটাস) কামড়ানোর পরে যদি অন্য কোন সুস্থ মানুষকে কামড়ায় তাহলে তা সুস্থ মানষের শরীরে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে।

আপনারা অনেকেই হয়ত জানেন, বেশ ক’বছর যাবৎ বর্ষা মৌসুমে হঠাৎ করে প্রচন্ড জ্বর সহ অন্যান্য শারীরিক উপসর্গ দেখা দিলে মনে করা হতো আক্রান্ত ব্যক্তি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু এখন ডেঙ্গু জ্বরের সাথে অতি সম্প্রতি শুরু হয়েছে চিকুনগুনিয়া নামক জ্বরের প্রাদুর্ভাব। মনে রাখতে হবে, এডিস ইজিপটি কিন্তু ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া উভয় জ্বর সৃষ্টির জন্যই দায়ী। এ কারণে এ দু’জ্বরের উপসর্গেও এত মিল দেখা যায়।

চিকুনগুনিয়া রোগটি ১৯৫২ সালে প্রথম আফ্রিকা মহাদেশের দেশ তানজানিয়াতে দেখা দেয়। তবে, ১৮২৪ সালে আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে একই রকম উপসর্গের জ্বরের অস্তিত্বের কথাও জানা যায়। যাই হোক, এ জ্বর এখন কিন্তু আফ্রিকা, এশিয়া এবং আমেরিকা মহাদেশের মোট ৬০ টি দেশে বিরাজমান।

এ জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিরও প্রচণ্ড জ্বরসহ শারীরিক নানা উপসর্গ (নিবন্ধের শুরুতেই বলেছি) অনেকটাই ডেঙ্গু জ্বরের মতোই হয়ে থাকে। তবে, জ্বরের সাথে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা (জয়েন্ট পেইন) থাকলে ধারণা করা যায় যে ব্যক্তিটি চিকুনগুনিয়া নামক জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। সাথে ‍চিকুনগুনিয়া এন্টিবডি পজেটিভ থাকলে এ জ্বর সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সহজতর হয়।

তবে ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরে যেমন প্লাটিলেট সংখ্যা কমে গিয়ে রক্তক্ষরণের কারণে জীবনহানির আশংকা তৈরি হয়; চিকুনগুনিয়া জ্বরে তা হয় না। ফলে এ জ্বর হলে আতংকিত হওয়ার কোন কারণ নেই। অন্যান্য ভাইরাল জ্বরের মতোই এক সময় এটা আপনা আপনি ভালো হয়ে যায়। তবে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা অনেক সময় এত তীব্র হয় যে, যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁটাচলা করা খুব কষ্টসাধ্য হয়। সামনে কিছুটা ঝুঁকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে হয়। এ কারণে একে ‘ল্যাংড়া জ্বর’ও বলা হয়ে থাকে। ধীরে ধীরে এ অবস্থার উন্নতি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান। তবে এমন উপসর্গ সারতে অনেক ক্ষেত্রে কিন্তু দীর্ঘদিন লেগে যেতে পারে।

এ রোগ যেহেতু ভাইরাস দ্বারা হয়ে থাকে, মনে রাখতে হবে, তাই এর সঠিক কোন চিকিৎসা নেই। তবে, আক্রান্ত ব্যক্তিকে দেখে এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসক শুধু হয়ত জ্বর কমানোর ওষুধ  দেন। তবে, এ সময়ে প্রচুর তরল খাবার, পানি এবং স্বাভাবিক খাবার গ্রহণ এবং পরিপূর্ণ বিশ্রাম নেয়া খুবই জরুরি।

সাধারণত আক্রান্ত মশা কামড়ানোর ৩ থেকে ৭দিনের মধ্যে এ রোগ দেখা দেয়। এ জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি ডাক্তারের সাথে পরামর্শক্রমে বাসাতেই থেকে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারেন। মনে রাখার নিমিত্তে আবারও বলছি, এ জ্বর হলে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। তবে জ্বরের সাথে যদি যদি আগে থেকেই শারীরিক অন্য জটিলতা থেকে থাকে, রোগী যদি ছোট বাচ্চা বা বয়োঃবৃদ্ধ হয়ে থাকেন তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জটিলতা এড়াতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াও লাগতে পারে।

সাধারণত ভারী বৃষ্টিপাতের পরে বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানিতে এ মশার বংশ বিস্তার যেহেতু ব্যাপকহারে হয় সেহেতু বর্ষাকালে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ যত তাড়াতাড়ি সমাধা করা যায় ততই মঙ্গল। তাছাড়া বাসাবাড়িতে যেন কোনভাবেই পানি জমে না থাকে সে ব্যাপারেও সতর্কতা কাম্য। বিকাল বেলা কিংবা সন্ধ্যার সময়ও এ মশা কিন্তু বেশি কামড়ায়। ফলে রাতের মতো দিনের বেলায়ও মশারি টাঙিয়ে ঘুমানোই উত্তম।

যেহেতু এ রোগ প্রতিরোধের কোন টিকা আজ অবধি আবিষ্কৃত হয়নি এবং যেহেতু এটা  মশাবাহিত রোগ; সেহেতু সবার আগে মশা নিধন খুবই জরুরি। সেই সাথে মশার কামড় থেকে নিজেকে বাঁচাতে হবে। তাহলেই এ জ্বরের হাত থেকে  পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হবে। তবে, আবারও বলছি, এ জ্বরে আক্রান্ত হলেও কিন্তু আতংকিত হওয়ার কিছুই নেই।সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে প্রচারণার মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টিই হতে পারে এ রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উল্লেখযোগ্য পন্থা।

লেখক : চিকিৎসক।

এইচআর/এমএস

আরও পড়ুন