ভুয়া চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য বন্ধ করুন
চিকিৎসা পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু জীবন বাঁচানোর শেষ এই আশ্রয়স্থলের ওপর ভরসা রাখাও দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। ভুয়া চিকিৎসক, ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অনেকেরই জীবন দিতে হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের কাছে ভুয়া চিকিৎসকের বিষয়টি রীতিমত আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। ভেজালের ভিড়ে আসল চেনাই যেন দায়। বড় বড় সাইন বোর্ড লাগিয়ে, তাতে নামের শেষে দেশ বিদেশ থেকে পাওয়া বড় বড় ডিগ্রির কথা উল্লেখ করে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক খুলে বসে রমরমা ব্যবসা করা হচ্ছে। কিন্তু এসব নামীদামী ক্লিনিকের অনেক চিকিৎসকেরই নেই প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট, প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা। এমনকি অনেকের চিকিৎসা বিদ্যার কোনো সার্টিফিকেটই নেই। এ অবস্থায় মানুষের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। যাতে এইসব ভুয়া চিকিৎসক চিকিৎসার নাম করে মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলতে না পারে।
এটা আশার কথা যে দেশে চিকিৎসকদের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) স্বীকৃতিপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রেশনধারী চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় ৮৯ হাজার। এর মধ্যে এমবিবিএস ৮১ হাজার ১৮৫ ও ডেন্টাল ৭ হাজার ৪৮৪ জন চিকিৎসক রয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে আসল চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের পরিচয়ে দেশজুড়ে ভুয়া চিকিৎসকের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। এক শ্রেণির প্রতারক চক্র আসল চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও উচ্চ শিক্ষার ডিগ্রি তাদের নিজের নামের পাশে লিখছেন। ভুয়া হয়েও বড় ডাক্তার পরিচয়ে চেম্বার ও হাসপাতালে রোগী দেখে দেদারছে প্রতিদিন বিপুল অঙ্কের টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সম্প্রতি খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব) সহ বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযানকালে এমন বেশ কিছ সংখ্যক ভুয়া চিকিৎসককে আটক করা হয়েছে।
দেশের প্রচলিত আইনানুসারে যে কোন এমবিবিএস/ বিডিএস (ডেন্টাল) চিকিৎসককে সরকারি বেসরকারি কিংবা ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখতে হলে তাদের কাছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এর বৈধ রেজিস্ট্রেশন নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেক চিকিৎসকই এটা মানছেন না। এর সুযোগ নিচ্ছে ভুয়া চিকিৎসকরা।
ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযান চলে মাঝেমধ্যে। দু’একজন ধরা পড়লেও যৎসামান্য শাস্তির কারণে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। এবং আবার একই ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। এ জন্য ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান চালানো এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
ভুয়া চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় একের পর এক রোগী মৃত্যুর অভিযোগের ঘটনাও অনেক বেড়েছে। দেশের প্রথম শ্রেণির অনেক হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকও এমন অভিযোগের তালিকা থেকে বাদ পড়ছে না। এতে চিকিৎসক ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সাধারণ মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না। রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের মনে সৃষ্টি হচ্ছে আতঙ্ক। চিকিৎসক ও রোগীর পারস্পরিক সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি হচ্ছে। ভুল চিকিৎসার অভিযোগে ভাঙচুর, শারীরিক আঘাত-প্রতিঘাত এবং মামলা-মোকদ্দমার মতো ঘটনাও ঘটছে।
সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবার মানবৃদ্ধির ওপর স্বাস্থ্যখাতের অগ্রগতি নির্ভর করে। এ কারণে ভুয়া ডিগ্রি, পদবি ব্যবহারকারী এবং ভুল চিকিৎসা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার নিয়ে শৈথিল্য দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।
এইচআর/এমএস