ভারত সফর ফলপ্রসূ হোক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নানা দিক থেকেই গুরুত্ববাহী। চারদিনের দ্বিপক্ষীয় সফরে আজ শুক্রবার দুপুরে তিনি নয়াদিল্লি পৌঁছাবেন। তিনি এমন এক সময়ে ভারত সফর করছেন যখন দুটি দেশেরই সম্পর্ক এক নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। এখন মোদির ক্ষমতাকালে এটিই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম ভারত সফর। এই সফর নিয়ে দুই দেশের মধ্যেই উচ্চাশার সৃষ্টি হয়েছে। অভিন্ন বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা ছাড়াও এই সফরে দুই দেশের মধ্যে ৩৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফর সাফল্য বয়ে আনুক এটিই প্রত্যাশা।
গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় ভারত সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বেশ কিছু বিষয়ে ধারণা দেন। ৩৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এ চুক্তি বা সমঝোতা স্মারকের বেশিরভাগই বর্ডার হাট স্থাপন, তথ্য ও সম্প্রচার, বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট ও মহাকাশ গবেষণা, ভূ-তাত্ত্বিক বিজ্ঞান, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা, ভারত কর্তৃক প্রদেয় তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি), কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্পর্কিত।
এছাড়া স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দুই প্রধানমন্ত্রী বিরল-রাধিকারপুর রুটে মালামাল পরিবহনকারী রেল চলাচল, খুলনা-কলকাতা রুটে যাত্রীবাহী বাস ও রেল চলাচল এবং ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বাংলাদেশে অতিরিক্ত ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রীদ্বয় যৌথভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর হিন্দু সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করবেন। অনুষ্ঠান শেষে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করবে দুই দেশ।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনা হচ্ছে তিস্তা চুক্তি নিয়ে। এই সফরে তিস্তা চুক্তি হবে কিনা তা নিয়ে কোনো পক্ষই স্পষ্ট করে কিছু বলছে না। তিস্তা চুক্তির অনেকটাই নির্ভর করছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি শেখ হাসিনার সম্মানে দেয়া নৈশভোজে টেলিফোন করে মমতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে নরেন্দ্র মোদির দেয়া মধ্যাহ্ন ভোজেও অংশ নেয়ার কথা রয়েছে মমতার। এই প্রেক্ষাপটে একটি আশাবাদের সৃষ্টি হয়েছে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে।
ভারতের সাথে রয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে এ দেশের মানুষ। এছাড়া দুই দেশের মানুষের সাথেও রয়েছে ভাষা, সংস্কৃতির এক আত্মিক বন্ধন। বাংলাদেশের বহু মানুষ ভারতে চিকিৎসা নিতে যায়। ভারতের টিভি চ্যানেল বাংলাদেশে একচেটিয়া চলে। ভারতের সাথে রয়েছে ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্পর্ক। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে এসেও দুই দেশের সম্পর্কের কথা স্মরণ করেছেন। এবং প্রতিবেশি দেশ হিসেবে একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার কথাও বলেছেন। নরেন্দ্র মোদির সময়েই স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর ও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। ছিটমহল বিনিময়ের পর ৬৫ বছরের লাঞ্ছনার অবসান হয়েছে। নিঃসন্দেহে এগুলো এক বিরাট ঐতিহাসিক অর্জন। এই ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে হবে। আমরা আশা করবো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর ফলপ্রসূ হবে। এবং দুটি ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ বিভিন্ন বিষয়ে ঐতিহাসিক সিদ্ধাতে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।
এইচআর/পিআর