আফতাব হত্যার দৃষ্টান্তমূলক রায়
সাংবাদিক আফতাব আহমেদ হত্যা মামলার রায়ে পাঁচ জনের ফাঁসির আদেশ হয়েছে। এটি স্বস্তির বিষয়। তার মতো একজন খ্যাতিমান প্রবীণ সাংবাদিককে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যার বিষয়টি আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। আদালতও রায়ের পর্যবেক্ষণে এমনটিই বলেছেন। হত্যা মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে ২ জন পলাতক আছে। তাদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এই রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার ৪নং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুর রহমান সরদার সাংবাদিক আফতাব হত্যা মামলায় তার গাড়িচালকসহ পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় বিচারক পর্যবেক্ষণে বলেন, সাংবাদিক আফতাব আহমেদ জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রবীণ ফটো সাংবাদিক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ও পরবর্তীতে অসংখ্য দুর্লভ ছবি ধারণ করেন। ফটোগ্রাফিতে তার বিশেষ অবদানের স্বীকৃত স্বরুপ ২০০৬ সালে তিনি রাষ্ট্রীয় একুশে পদকপ্রাপ্ত হয়ে বিরল সম্মানে ভূষিত হন। দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকল্পে এ ধরনের ডাকাতিসহ খুনের মামলায় আসামিদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
সবদিক বিবেচনা করে বিচারক আফতাব আহমেদের গাড়িচালক আসামি মো. হুমায়ুন কবির, মো. বিল্লাল হোসেন, হাবিব হাওলাদার, মো. রাজু মুন্সি (পলাতক) ও মো. রাসেল (পলাতক) এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত ডাকাতি অনুষ্ঠানকালে ভিকটিম আফতাব আহমেদকে খুনের অপরাধে পেনাল কোডের ৩৯৬ ধারায় অভিযোগের অপরাধ সুনির্দিষ্ট এবং সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় দোষী সাব্যস্থ করে প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ প্রদান করেন। অপর আসামি সবুজ খানকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন।
২০১৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর পশ্চিম রামপুরা ওয়াপদা রোডে ৬৩ নম্বরের নিজ বাসায় খুন হন ফটো সাংবাদিক আফতাব আহমেদ। পরদিন সকালে তার হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। চার তলার ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় আফতাব আহমেদ একাই বসবাস করতেন। আফতাব আহমেদ হত্যার বিচার সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই জরুরি ছিল। এ ধরনের কৃতী মানুষ কেবল অর্থ-সম্পদের লোভে খুন হবেন-এটা মেনে নেয়া যায় না। অর্থ লোলুপতা মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে তার প্রমাণ যেন আফতাব আহমেদ হত্যাকাণ্ড। এই মামলার রায় অপরাধীদের এই বার্তা দিচ্ছে যে অপরাধ করলে তাকে আইনের হাতে বাঁধা পড়তে হয়। এই রায় থেকে তাই সংশ্লিষ্টদের শিক্ষা নিতে হবে। গ্রেফতার করতে হবে পলাতক আসামিদের। মামলার চূড়ান্ত পরিণতি পেতে আরো আইনি ধাপ পার হতে হবে। সেগুলো শেষ করে আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও জননিরাপত্তা রক্ষায় আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এইচআর/আরআইপি