ড্রাইভিং লাইসেন্সে শিক্ষার শর্ত ও জেল-জরিমানার বিধান
‘সড়ক পরিবহন আইন- ২০১৭’ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনটি পাস হলে এবং যথাযথভাবে কার্যকর করা গেলে লোকজন এর ইতিবাচক ফল পাবে এমনটি বলা যায় নিশ্চিত করেই। বিশেষ করে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। আর দুর্ঘটনাও কমে আসবে। সেই সাথে কমবে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হারও।
গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনটির ব্যাপারে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। এতে বলা হয়- ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে। আর লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। এ আইন কার্যকর হলে হেলপার বা শ্রমিক গাড়ি চালাতে পারবেন না। এছাড়া পরিবহনে সংরক্ষিত নারী আসনে বসতে না দিয়ে কেউ ওই আসনে বসলে তাকে এক মাসের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। অন্য গাড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট গাড়িচালকের তিন বছরের জেল এবং ২৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে। প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালালে, সেক্ষেত্রে দুর্ঘটনা না হলেও চালকের দুই বছরের জেল বা দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। গতিসীমা লঙ্ঘন করলেও একই শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ও নিহতের ঘটনা ঘটলে দণ্ডবিধির আওতায় বিচার হবে। এই আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এ আইনে আমলযোগ্য অপরাধে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় দায়ীকে আটক করতে পারবে। হেলপারেরও লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নেশাজাতীয় দ্রব্য বা মদ পান করে কেউ গাড়ি চালালে তিন মাসের কারাদণ্ড এবং ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা। ফুটপাত দিয়ে মোটরসাইকেল চালালে তিন মাস কারাদণ্ড এবং ৩৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে এই আইনে। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন বা এরকম কোনো ডিভাইস ব্যবহার করলে এক মাসের জেল বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন চালক।
সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে এই আইনটি খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। গরু-ছাগল চিনলেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যাবে-এই অধ্যায়েরও সমাপ্তি ঘটবে। একজন চালককে রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় অনেক কিছু বিবেচনায় রাখতে হয়। কাজেই তার শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা বাঞ্ছনীয়। এছাড়া দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো। যদি জেল-জরিমানার ভয় থাকে তাহলে সংশ্লিষ্টরা এক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত হবে। হেলপারের লাইসেন্স থাকার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। নেশাদ্রব্য খেয়ে গাড়ি চালানোর শাস্তিও যুক্তিযুক্ত। ফুটপাতে কোনো অবস্থায়ই কোনো ধরনের যান চলতে পারবে না। এসব বিষয় নিশ্চিত করতে আইনটির বাস্তবায়ন জরুরি। সড়কে যে হারে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে তাতে এই আইন বাস্তবায়ন হলে তা একটি ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
এইচআর/জেআইএম