ওষুধের মূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখুন
জীবন রক্ষার জন্য ওষুধ অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু সেই ওষুধের মূল্য যদি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে তাহলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবে মানুষজন। বাস্তবতা হচ্ছে উচ্চ দ্রব্যমূল্যের বাজারের ন্যায় ওষুধের বাজারেও এখন আগুন। কোম্পানিগুলো যে যার মতন দাম রাখছে। ইচ্ছে হলেই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের। হৃদরোগ, কিডনির রোগ, গ্যাস্ট্রিক-আলসার, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ অনেক রোগের ওষুধের মূল্যই সম্প্রতি কয়েকগুণ বেড়েছে। বেড়েছে অ্যান্টিবায়োটিক এবং বিভিন্ন ধরনের ভিাটামিনের দামও। এছাড়া নাপা/প্যারাসিটামলের মতো অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধের দামও বেড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সাধারণ মানুষজনের ভোগান্তির কোনো সীমা থাকবে না। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
আন্তর্জাতিক বাজারে ওষুধের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে ওষুধের দাম বাড়ানোর কথা বলে কোম্পানিগুলো। কিন্তু এই প্রেক্ষিতে দাম যে হারে বাড়া উচিত সে হারে বাড়ছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে। অন্যদিকে মানহীন ও ভেজাল ভেজাল ওষুধে বাজার সয়লাব। মানহীন ও ভেজাল ওষুধ খেয়ে রোগ সারার বদলে আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে দেশে ওষুধের উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত কোন স্তরেই সরকারি পরীক্ষাগারে মান নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয় না। বিপণনের পর অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠান। তখন ওষুধের মান জানা যায়। এর আগ পর্যন্ত পরীক্ষাহীন, মান না জানা ওষুধই ব্যবহার করে মানুষজন। এভাবেই ওষুধ কোম্পানিগুলো এদেশের মানুষকে রীতিমত গিনিপিগে পরিণত করেছে। এক হিসাব দেখা যায়, প্রতিবছর ১২ হাজার আইটেম ওষুধ বাজারে আসছে। কিন্তু ওষুধ প্রশাসনের যে লোকবল ও যন্ত্রপাতি রয়েছে তাতে তারা মাত্র সাড়ে তিন হাজার আইটেম ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করতে পারে। বাকি ৭০ শতাংশ ওষুধের মান যাচাইহীন অবস্থায় রয়ে যায়। বাজারে যে ভিটামিন পাওয়া যায় তাতে ১৮টি খনিজ সম্পদ আছে বলে উল্লেখ করা হলেও এর ছিটেফোটাও আছে কিনা পরীক্ষার অভাবে তা জানা সম্ভব নয়।
ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তরকে ২০১০ এর ১৭ জানুয়ারি অধিদপ্তরে রূপান্তর করা হয়। কিন্তু এর তেমন কোন উন্নতি হয়নি। নেই ওষুধের মানযাচাই ও পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতিও। এ অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ১৯৯১ সালে তৎকালীন সরকার আটটি নির্দেশনাসহ একটি নির্দেশনা জারি করে। যেসব কোম্পানি জীবন রক্ষাকারী অত্যাবশ্যকীয় ১১৭টি ওষুধের মধ্যে কমপক্ষে ৬০ ভাগ ওষুধ তৈরি করবে সেসব কোম্পানি ওইসব ওষুধের মূল্য নির্ধারণসহ অন্যান্য সুযোগসুবিধা পাবে। কিন্তু বেশিরভাগ কোম্পানি তা না করেও ওষুধের মূল্য নিজেরাই নির্ধারণ করে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। দেশের জনগণের অর্থনৈতিক জীবনমানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করলে সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘব হবে-এমন কথা বলেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখতে চায় মানুষজন। ওষুধের মান এবং মূল্য দু’টোই যাতে ঠিক থাকে সেটি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কোনো বিকল্প নেই।
এইচআর/এমএস