ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে বঙ্গবন্ধুকে চেনা

প্রকাশিত: ০৭:১৯ পিএম, ১৬ মার্চ ২০১৭

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের প্রায় পুরোটা সময় কেটেছে সংগ্রাম ও আন্দোলনের মধ্যদিয়ে। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি অর্জন করেছেন অসংখ্য সাফল্য, যার চূড়ান্ত প্রাপ্তি বাংলাদেশ। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের কাজ তাঁর হাত দিয়েই শুরু হয়েছিল। পাশাপাশি বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা এবং বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বীকৃতি লাভের মতো অর্জনগুলো এসেছিল তাঁর হাত ধরেই। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও তিনি নতুন দেশের নানা সমস্যা মোকাবেলা করেছিলেন দূরদর্শী রাজনৈতিক চেতনা, স্বভাবসুলভ মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে।

ধর্মের নামে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর শোষণের শিকার বাঙালির মুক্তির জন্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। স্বাধীনতার এক বছরের মধ্যেই তিনি দেশে একটি সংবিধান প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়েছিলেন বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে।

অবিভক্ত ভারত থেকে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৮ বছর তিনি আন্দোলন করেছেন শোষণ, বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে। নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপসহীন। যেখানেই শোষণ ও বৈষম্য সেখানেই অধিকারহীনদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এ কারণে নদীবেষ্টিত গোপালগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেও তিনি হয়ে উঠেছেন এ উপমহাদেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদের একজন। শুধু তাই নয়, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মহাত্মা গান্ধী, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও শামসুল হকের মতো সর্বজনবিদিত নেতাদের সাহচর্য পাওয়া এ নেতার পরিচিতি ছিল বিশ্বব্যাপী।

বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ থেকে জানা যায়, সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তিনি যোগ দিয়েছিলেন স্বদেশী আন্দোলনে। এরপর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা মোকাবেলা, দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের খাদ্য ও বস্ত্র সংস্থান এবং গরিব ছাত্রদের লেখাপড়ার সুব্যবস্থা ও পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তাঁর ছিল স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। রাজনীতি ছিল তার রক্তধারায় মজ্জাগত। তাই শৈশব থেকেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। স্কুলছাত্র অবস্থায়ই তিনি অধিকারের লড়াইয়ে লিপ্ত ছিলেন।

mujib১৯৩৯ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্যে এসে প্রত্যক্ষ রাজনীতি শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। এ সময় গোপালগঞ্জে গঠন করেন মুসলিম ছাত্রলীগ এবং তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সেই সময়কার ছাত্র আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। প্রচণ্ড জনপ্রিয় এ নেতা একদিকে যেমন ভালো সংগঠক ছিলেন, অন্যদিকে ছিলেন এক অসাধারণ বক্তা। অনলবর্ষী বক্তৃতা দিয়ে তিনি সভা-সমাবেশে মানুষকে গভীরভাবে আকৃষ্ট ও প্রভাবিত করতে পারতেন। আন্দোলন ও সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান সহজাত গুণ হলেও একজন নিবেদিত রাজনৈতিক কর্মী হিসেবেও তাঁর সুখ্যাতি ছিল।

অক্লান্ত পরিশ্রম করতে পারতেন বঙ্গবন্ধু। দিনের বেলা সাংগঠনিক কাজ আর রাতের বেলা রাজনৈতিক পাঠ গ্রহণ করেছেন দিনের পর দিন। রাজনৈতিক কাজে তাঁর ক্লান্তি ছিল না।

পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর বাঙালির প্রতি পাকিস্তানি শাসকদের নিপীড়ন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, মাতৃভাষা রক্ষার জন্য ভাষা আন্দোলন, তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনসহ বাঙালির সামগ্রিক মুক্তির জন্য ৬ দফা ও অসহযোগ আন্দোলন এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রাদেশিক আইনসভায় আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রভৃতি অর্জনগুলোর বেশিরভাগই অর্জিত হয়েছিল তাঁর নেতৃত্বে।

মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে তাঁর সভাপতিত্বে ১৯৪৮ সালের ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সাধারণ ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। ভাষা আন্দোলন ও শোষিত বাঙালির পক্ষে কথা বলতে গিয়ে তাকে বাববার কারাবন্দি হতে হয়েছে। দিনের পর দিন বিনা বিচারে কারাবন্দি রাখা হলেও আন্দোলন থেকে একবিন্দুও সরে আসেননি তিনি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেলে বসেই অনশন করেছেন। সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের আমলে আন্দোলন ও সংগ্রাম থেকে সরে আসার শর্তে মুক্তিলাভের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন ঘৃণাভরে।

ঐতিহাসিক আগরতলা মামলার আসামি হিসেবে বন্দি শেখ মুজিব প্যারোলে মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। পরবর্তীতে জনতার দাবির মুখে তাঁকে কারাগার থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী। জনগণের প্রতি তাঁর আস্থা ছিল অত্যন্ত দৃঢ়। অগ্নিঝরা আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৬৯ সালে এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই পূর্ব বাংলার নামকরণ করেছিলেন ‘বাংলাদেশ’।

বাঙালি জাতির চূড়ান্ত মুক্তির লক্ষ্যে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দিলে মিথ্যা আগরতলা যড়যন্ত্র মামলা দেয় পাকিস্তানি শাসকরা। ওই সময় তাঁকে দমিয়ে রাখতে পাকিস্তানের কারাগারে সেলের ভেতরেই খোঁড়া হয়েছিল কবর। তবু বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব থেকে বঙ্গবন্ধু পিছপা হননি। নীতিতে ছিলেন অটল। বাঙালির মুক্তির জন্য জীবনবাজি রেখেছিলেন তিনি।

পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ যখন জমিদার, জোতদার, ব্যবসায়ী ও নবাবদের প্রতিষ্ঠান হয়ে পড়ে, যখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি চরম বিমাতাসুলভ ও বৈষম্যমূলক আচরণ করতে থাকে মুসলিম লীগ, সে সময় বাধ্য হয়ে প্রতিক্রিয়াশীল মুসলিম লীগ থেকে তিনি বেরিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠালগ্নেই যুক্ত হন দলের সঙ্গে। পরবর্তী সময়ে তাঁর বলিষ্ট নেতৃত্ব, সংগ্রাম ও আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে তিনি সাধারণ জনগণের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণির কণ্ঠস্বরে পরিণত করেন আওয়ামী লীগকে। একপর্যায়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে মহানায়কে পরিণত হন শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৭১ সালে স্বনামধন্য বিদেশি সংবাদমাধ্যম নিউজউইক শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে যথার্থ মূল্যায়ন করেছে। ম্যাগাজিনটি শেখ মুজিবকে ‘poet of politics’ উপাধি দেয়। এছাড়া, বিবিসি বাংলা জরিপে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি তালিকায় তিনি প্রথমস্থান অধিকার করেন মানুষের ভোটে। কিউবার বিপ্লবী নেতা প্রয়াত ফিদেল ক্যাস্ট্রো বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেছেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি’। ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় তিনি হিমালয়ের মতো।

এইচআর/বিএ

আরও পড়ুন