সড়কে কি মড়ক লাগলো?
প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। সড়ক-মহাসড়কগুলো যেন পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। এতে অসংখ্য জীবন যাচ্ছে। প্রতিকারহীনভাবেই চলছে এই দুর্ঘটনা নামক ‘হত্যাযজ্ঞ’। এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। মৃত্যুর মিছিল যেন আর দীর্ঘ না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো মূল্যে।
সড়ক-মহাসড়কে যেন মড়ক লেগেছে। মাত্র ৩৫ ঘণ্টার ব্যবধানে দেশের সড়কে প্রাণ গেল ৩৬ জনের। আজ ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সকাল সাড়ে ৮টায় নরসিংদীতে। এ ঘটনায় ১১ জন নিহত হয়েছেন। আর শুক্রবার রাতে ফরিদপুরে ঘটেছে আরেক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ফরিদপুরের নগরকান্দায় গ্যাস সিলিন্ডারবাহী কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষের পর আগুন ধরে যাওয়ায় ১৩ জন দগ্ধ হয়ে মারা যান। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে রোববার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত নরসিংদী, ফরিদপুর, গাজীপুর, নাটোর, মাগুরায় মোট ছয়টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গাজীপুরেই দুটি দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৭২ জন।
এ ধরনের মর্মান্তিক মৃত্যু কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের কোনো না কোনো স্থানে প্রতিদিনই কারও না কারও জীবন প্রদীপ নিভে যাচ্ছে ‘দুর্ঘটনা’ নামক দানবের হাতে। এক হিসাবে দেখা যায়, গত ১৫ বছরে দেশে প্রায় দেড় লাখেরও বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এতে ৫০ হাজারের বেশি লোক প্রাণ হারায়। আহতের সংখ্যা এর চেয়েও কয়েকগুণ বেশি। সড়ক দুর্ঘটনাজনিত কারণে প্রতিবছর দেশের ক্ষতি হচ্ছে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ শতাংশ। চালকের বেপরোয়া গতিই এই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এছাড়া নাজুক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামোগত সমস্যা, পরিকল্পনা ও নীতির দুর্বলতা, অসচেতনতা ইত্যাদি বিষয় সড়ক দুর্ঘটনা ত্বরান্বিত করছে। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কর্তৃপক্ষকে সেসব সমস্যা দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, এক বছরে প্রায় ২০ হাজার ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ হাজার মানুষ নিহত হয়। আহত হয় এক লাখ। এদের বেশিরভাগই পঙ্গুত্ববরণ করে।
সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য সমন্বিত ও আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা জরুরি। দুর্ঘটনা রোধে চালক ও পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। যানবাহনের উচ্চগতি দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। জেব্রা ক্রসিং ও ফুটওভার ব্রিজ ছাড়া রাস্তা পারাপার বন্ধ করতে হবে। যথাযথ পরীক্ষা ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া যাবে না। ফুটপাথগুলো দখলমুক্ত করে পথচারী চলার উপযোগী করতে হবে। তুলে দিতে হবে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন। রাস্তা চলাচলে আইন অমান্যের জন্য আরও কঠিন শাস্তি ও জরিমানা আদায় করতে হবে। তাছাড়া রাস্তায় যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং, ফুটপাথ দখল করে ব্যবসাবাণিজ্য পরিচালনা, একই রাস্তায় নছিমন-করিমনসহ বিভিন্ন গতির যানবাহন চলাচল, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি, চালকের মাদকাসক্তি ইত্যাদি কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। তাছাড়া দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তির কখনো কোনো শাস্তি পেতে হয় না। এ জন্য বেপরোয়াভাবে চলছে সবকিছু।
কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু ও সমন্বিত পদক্ষেপে দেশ দুর্ঘটনামুক্ত হবে এ প্রত্যাশা সকলের। দেশের মানুষ সড়কে নিরাপত্তা চায়। তারা এ ধরনের করুণ মৃত্যু আর দেখতে চায় না।
এইচআর/এমএস