সীমান্তহত্যা বন্ধ হোক
টেকনাফের নাফনদীর বাংলাদেশ জলসীমায় মাছ ধরার সময় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী’র (বিজিপি) গুলিতে নুরুল আমিন (২৬) নামে বাংলাদেশি এক জেলে নিহত হওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। সীমান্তে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড মেনে নেয়া যায় না।
গতকাল সোমবার বেলা নয়টার দিকে টেকনাফ সদরের মৌলভীপাড়া সীমান্ত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নুরুল আমিন অন্য এক সহযোগী নিয়ে গতকাল সোমবার সকালে নাফনদীতে মাছ শিকারে যায়। তারা বাংলাদেশি জলসীমায় মাছ ধরছিল। বেলা নয়টার দিকে হঠাৎ বিজিপি তাদের নৌকা লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নুরুল আমিন নৌকাতেই মারা যায়। পরে নৌকা নিয়ে তার সহযাত্রী তীরে ফিরে আসে। খবর পেয়ে স্বজনরা এসে নূরুল আমিনকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মিয়ানমারের সীমান্তে হত্যা বন্ধ নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। কিন্তু দুঃখজনক যে এখনো তা চলছে। বিশেষ করে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি গুলি চালাতে কার্পণ্য করছে না। এটা কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। নিরস্ত্র মানুষের ওপর এভাবে গুলি চালানো কোনো অবস্থায়ই প্রতিবেশিসুলভ আচরণের মধ্যে পড়ে না।
মিয়ানমারের সাথে রয়েছে বাংলাদেশের সীমান্ত। সীমান্ত থাকলে যে সমস্যা হয় সেই সমস্যার অনেকগুলোই আছে মিয়ানমারের সঙ্গে। বিশেষ করে এতদিন স্বৈরশাসকরা মিয়ানমারের ক্ষমতায় থাকায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কও ছিল না তেমন। এখন শান্তিতে নোবেল জয়ী নেত্রী সু চির নেতৃত্বে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা শুরু হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের এটাই উপযুক্ত সময়। এ অবস্থায় হত্যাকাণ্ড চললে তা সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সীমান্তে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান সমস্যা তো রয়েছেই, মিয়ানমারের কয়েক লাখ মুসলমান অধিবাসী কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এই সমস্যাগুলো কোনো দেশের জন্যই মঙ্গলজনক নয়। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরকে কেন্দ্র করে জঙ্গি তৎপরতা, মাদক, চোরাচালান, মানবপাচারসহ নানা রকম অপরাধী চক্র গড়ে উঠেছে। সীমান্তবর্তী ওই অঞ্চলে সন্ত্রাসের বিস্তার রোধে রোহিঙ্গা সমস্যাটি সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া সম্পর্ক উন্নয়ন হলে বাণিজ্য ও বিনিয়োগেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় আঞ্চলিক সহযোগিতা ছাড়া এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব। এজন্য প্রতিবেশিদের সহযোগিতার মনোভাবে নিয়েই এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে যে কোনো মূল্যে। আমরা আশা করবো মিয়ানমার সীমান্তে বিজিপি কর্তৃক বাংলাদেশি হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত হবে। এবং দোষীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে।
এইচআর/পিআর