দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ কবে?
বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) কর্তৃক ২০১৭ এর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশে দুর্নীতির যে চিত্র উঠে এসেছে তা অত্যন্ত হতাশাজনক। দুর্নীতির ধারণা সূচক (করাপশান পারসেপশন ইনডেক্স বা সিপিআই) ২০১৬ অনুযায়ী সূচকের ০-১০০ এর স্কেলে বাংলাদেশে স্কোর ২৬। তালিকায় নিম্নক্রম অনুযায়ী ১৭৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫ তম। আগের চেয়ে দুই ধাপ উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩তম। ২০১৪ সালে ছিল ১৪তম, ২০১৩ সালে ছিল ১৬তম এবং ২০১২ সালে ছিল ১৩তম স্থানে ছিল। গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
এর আগে এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল- ‘সরকার ও সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কিছু কিছু দুর্নীতি বিরোধী উদ্যোগ স্বত্ত্বেও প্রয়োগ ও চর্চার ঘাটতির ফলে প্রকটতর হয়েছে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ। দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান দুদকের কার্যকারিতা ও স্বাধীনতা খর্ব করার অপপ্রয়াস যেমন অব্যাহত রয়েছে তেমনি দুদকের নিজস্ব সক্রিয়তা, দৃঢ়তা ও নিরপেক্ষতার ঘাটতি রয়েছে চলমান। এছাড়াও সরকারের নীতি কাঠামো দুর্নীতি সহায়ক, দুর্নীতিতে লাভবান ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয়দানকারী মহলের করাভূত হওয়ার ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে।’
টিআইএর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে একথা বলা যাবে না। দুই ধাপ অগ্রগতি হলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী দুর্নীতি কমেনি। এটা খুবই হতাশাজনক। একদিকে উন্নয়ন অগ্রগতি হচ্ছে, কিন্তু দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি সর্বজনবিদিত। এ নিয়ে কোনো জরিপ বা কোনো সংস্থার প্রতিবেদনের প্রয়োজন হয় না। যদিও এ ধরনের জরিপ নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন তোলে ক্ষমতাসীন মহল। সমস্যা স্বীকার না করলে তার সমাধান হওয়াটাও কঠিন। এ জন্য সমস্যা সমাধানের আগে তা স্বীকার করতে হবে। দুর্নীতির শিকড় সমূলে উপড়ে ফেলতে হলে দুর্নীতি বিরোধী সর্বাত্মক একটি কার্যক্রম চালাতে হবে। দুর্নীতিবাজ যতোই শক্তিশালী হোক না কেন তার বা তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সংসদ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরো কার্যকর করতে হবে। সর্বত্র একটি জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারলেই দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। সর্বোপরি দুর্নীতি বিরোধী একটি পরিবেশ সৃষ্টিতেও সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে যার যার অবস্থান থেকে।
এইচআর/আরআইপি