ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হোক বিশ্ব ইজতেমা

প্রকাশিত: ০৬:১৭ এএম, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে আগামীকাল আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। আগামী ২০ জানুয়ারি শুরু হবে তিনদিন ব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। দ্বিতীয় পর্বে যোগ দেবেন দেশের ১৬টি জেলার মুসল্লিরা। গত শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আম-বয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হয় বিশ্ব তাবলীগ জামাতের বার্ষিক ইসলামিক মহা-সম্মেলন বিশ্ব ইজতেমা। দেশ-বিদেশ থেকে এরই মধ্যে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা আসতে শুরু করেছেন ইজতেমা মাঠে। স্থান সংকুলানের জন্য গত কয়েক বছর ধরে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবারও শান্তিপূর্ণভাবে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রতি বছর এই সমাবেশ নিয়মিত আয়োজিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার রমনা পার্কসংলগ্ন কাকরাইল মসজিদে তাবলিগ জামাতের বার্ষিক সম্মেলন বা ইজতেমা প্রথম অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামে তৎকালীন হাজি ক্যাম্পে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। তখন এটা কেবল ইজতেমা হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রতিবছর ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে টঙ্গীর পাগার গ্রামের খোলা মাঠে ইজতেমার আয়োজন করা হয়। ওই বছর স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অংশ নেওয়ায় ‘বিশ্ব ইজতেমা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহরানপুর এলাকায় ইসলামী দাওয়াত তথা তাবলিগের প্রবর্তন করেন । একই সঙ্গে এলাকাভিত্তিক সম্মিলন বা ইজতেমারও আয়োজন করেন। বাংলাদেশে ১৯৫০-এর দশকে তাবলিগ জামাতের প্রচলন করেন মাওলানা আবদুল আজিজ। বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় মারকাজ বা প্রধান কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদ থেকে এই সমাবেশ কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করা হয়। পুরো সমাবেশের আয়োজনই করে থাকেন এক ঝাঁক ধর্মপ্রাণ মুসলমান স্বেচ্ছাসেবক- আর্থিক, শারীরিক সহায়তা দিয়ে প্রথম থেকে শেষাবধি তারা এই সমাবেশকে সফল করতে সচেষ্ট থাকেন।

এবছরও যথাযথভাবে বিশ্ব ইজতেমা পালনের সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইজতেমা ময়দানের প্রায় ১শ ৬০ একর জমির উপর নির্মিত সুবিশাল প্যান্ডেলের খুঁটিতে নম্বরপ্লেট, খিত্তা নম্বর, জুড়নেওয়ালি জামাতের কামরা, তাশকিল কামরা, হালকা নম্বর বসানো হয়েছে। সুস্পষ্টভাবে বয়ান শোনার জন্য পুরো মাঠে শব্দ প্রতিধ্বনিরোধক প্রায় সাড়ে ৩শ বিশেষ মাইক বসানো হয়েছে। যাতায়াতের জন্য বিশেষ ট্রেন, বাস সার্ভিসসহ নানা রকম উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইজতেমায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য মোতায়েন রয়েছে বিপুলসংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।

৫২ তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনে উত্তরের হিমেল হাওয়া আর কনকনে শীত উপেক্ষা করে লাখো মুসল্লি  বয়ান, তাশকিল, তাসবিহ-তাহলিলে কাটাচ্ছেন। শীত বস্ত্র মুড়িয়ে ইজতেমার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন তারা। বার্ধক্যজনিক অসুস্থতায় গতরাতে আরও এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে প্রথম পর্বের ইজতেমায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৭  জনে। শীতের কারণে যেন মুসল্লিদের কোনো রকম অসুবিধা না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া ইজতেমা শেষে সবাই যেন নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে সে পদক্ষেপও নিতে হবে।  

কোনো রকম বৈষয়িক লাভের আশা না করে, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দ্বীনের মেহনত করে ইজতেমা ময়দানে হাজির হেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। তারা ইজতেমা ময়দানে উপস্থিত থেকে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগিতে সময় পার করবেন। ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে এমন এক সময় যখন বাংলাদেশ তো বটেই সারা বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এ অবস্থায় মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি, সৌভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠায়ই হোক সকলের লক্ষ্য।

এইচআর/পিআর

আরও পড়ুন