বিশ্ববিদ্যালয় যেন রণক্ষেত্র না হয়
সাংঘর্ষিক ছাত্র রাজনীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্থিরতা লেগেই আছে। সর্বশেষ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংঘর্ষের জের ধরে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। যদিও সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ক্লাশ-পরীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এবং ২৫ ডিসেম্বর হল খুলে দেয়া হবে। এর আগে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হাত বোমার বিস্ফোরণের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। গত বুধবার সকালে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় ক্যাম্পাসের ফুড কোর্টের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবু সাঈদ আকন্দের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান সমর্থিত গ্রুপকে ধাওয়া দেয়। এর পরই তারা শাহপরাণ হলের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এ সময় তারা আবাসিক হলটির বেশ কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে রাতেই দুই পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে সমঝোতা করার চেষ্টা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে রাত ১২টার দিকে শাহপরাণ হল, বঙ্গবন্ধু হল ও সৈয়দ মুজতবা আলী হলে পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও হাতবোমা উদ্ধার করে। এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির পরই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা আসে।
স্বস্তির বিষয় যে বিশ্ববিদ্যালয় ত্বরিৎ খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এখনো শঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। যে কোনো সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। গৌরবময় ইতিহাস থাকলেও ইদানীং যেন পথ হারিয়েছে ছাত্ররাজনীতি। যে কারণে জাতীয় স্বার্থ ত্যাগ করে দলীয় ও সঙ্কীর্ণ স্বার্থে আত্মকলহে লিপ্ত থাকছে অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন। লেজুড়বৃত্তিক মানসিকতাও প্রবল। এখন আর ছাত্রদের কল্যাণের জন্য ছাত্ররাজনীতি নয়। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে প্রভাবপ্রতিপত্তি বিস্তারের মাধ্যমে রাতারাতি সম্পদশালী হওয়া, সম্মান, যশ, খ্যাতির দিকে ঝুঁকছে অনেকেই। এ কারণে নিঃস্বার্থপরতা বিদায় নিয়েছে। হল গুলোতে অস্ত্রের ঝনঝনানি। সামান্য কারণে রক্তারক্তির মতো ঘটনা ঘটছে। দীর্ঘদিন ধরে নেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের একক আধিপত্যও রীতিমত কালচারে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে উপাচার্য নিয়োগ থেকে শুরু করে সব কিছুতেই দলীয় বিবেচনা কাজ করায় ছাত্ররা লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন।বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখেতে হবে যে কোনো মূল্যে। বিশ্ববিদ্যালয় যেন রণক্ষেত্র না হয়। অর্থনৈতিকভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রদের সুষ্ঠু রাজনীতি চর্চার মধ্যদিয়েই আগামীর বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। এই বোধ তাদেরকে তাড়িত করুক এটাই প্রত্যাশা।
এইচআর/পিআর