ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

কালো তা সে যতই কালো হোক…

প্রকাশিত: ০৪:১৪ এএম, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬

ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা সম্ভবত হীনম্মন্যতায় বেশি ভোগে। আমি কখনো কোন ছেলেকে মোটা বলে, কালো বলে, চুল কম বলে, দেখতে অসুন্দর বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে দেখিনি যতটা মেয়েদেরকে দেখেছি। এর কারণ হিসেবে ধরে নিতে পারি সমাজ আর সামাজিক মানুষদের অভিমতকে। কিন্তু যে মেয়েরা সব তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ঘর থেকে বেরিয়ে পাহাড়ে উঠছে, সাঁতার কাটছে, দেশ-বিদেশ ঘুরছে তাদের কাছে সমাজের এই গুরুত্ব ভয়াবহ লাগে। তার মানে বাইরে বাইরে মেয়েরা আর যতই স্মার্ট সেজে থাকার ভান করুক বা স্মার্টনেস দেখাক মানসিক শক্তি তাদের এখনো আসে নি। মানুষের কথায় তাদের এখনো অনেক কিছু যায় আসে। নিজের আত্মবিশ্বাস এখনো শক্ত হয়ে পায়ের তলায় জমাট বাঁধেনি।

তারা এখনো বোঝেনি নিজেদের এই হীনম্মন্যতা তাদেরকে সবার কাছে করুণার পাত্র করে তোলে। তারা নিজেরা ভাবে এবং কথা বলার সময় প্রকাশ পায় দেখতে খারাপ লাগা মানেই মোটা লাগছে বা কালো দেখাচ্ছে ধরে নেয়। একটা ভাল পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে সেক্ষেত্রে। নিজেকে মোটা দেখতে যদি আগ্রহী না হোন তবে মোটা হবেন না, ব্যস মানুষের আর কিছু বলবার থাকবে না। আপনি মোটাও থাকবেন, মোটা স্বাস্থ্য ঢাকার জন্য বিভিন্ন কসরত করে ছবি তুলবেন এতে করে মানুষ আপনাকে নিয়ে পেছনে হাসে সেটা বুঝতে বস্তা বস্তা বই পড়তে হয় না। এতই যদি সমস্যা হয় তো পরিশ্রম করেন, খাবার-দাবারে ভারসাম্য আনেন, রুটিন মাফিক চলাফেরা করেন তারপর স্বাস্থ্য কমিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে মানুষের সামনে দাঁড়ান।

আমি যদি মোটা হোন, যদি অসুন্দর হোন বা কালো হোন তো হলেন। আপনার আমার চেহারার উপর আমাদের নিজেদের কোন হাত তো নাই, কাটা-ছেঁড়া হলে ভিন্ন প্রসঙ্গ অবশ্য। তো আপনি যাই হোন, কনফিডেন্টলি আপনি তাই। মানুষ মোটা বলতে অসুন্দর যদি বোঝে তো বুঝুক, আপনি মোটা হয়েও যদি নিজেকে সুন্দর লাগছে অনুভব করেন তাহলে আপনি সত্যিই সুন্দর। নিজেকে নিয়ে মানুষের মন্তব্যের চেয়ে আপনার নিজের মন্তব্যের গুরুত্বই সবচেয়ে বেশি। এতে লজ্জা পাওয়ার কিছু নাই। আর লজ্জা পেতে হলে সবার আগে আপনার লজ্জা যাতে পেতে না হয় তার সব রকম ব্যবস্থা করে তারপর ব্যর্থ হয়েছি বলেই লজ্জা পান কিন্তু নিজেকে নিয়ে বা নিজের অস্তিত্ব নিয়ে কোন লজ্জা নয়।

আমার এক বন্ধুর উচ্চতা ৫ফিট ১ ইঞ্চি আর ওজন ৮৬ কেজি। ওর পছন্দের কাজই হচ্ছে খাওয়া। ওকে খেতে দেখলে আমারই ভয় লাগে, কবে না জানি খেতে খেতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায়। তাকে জিজ্ঞেস করলাম ‘দোস্ত তুই যে মোটা এতে কি তোর ভাল লাগে? মানে তোর কি লজ্জা লাগে নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে?’ সে গলা টানটান করে বলে ‘একটু শুকাইতে পারলে আরো বেশি খাইতে পারতাম বলে মাঝেমাঝে দুঃখবোধ হয় কিন্তু লজ্জা পাওয়ার কি আছে? আমি তো তোর চেয়ে দেখতে সুন্দর; তুই শুকনা হইয়াও আমার মতো সুন্দর হইতে পারিস নাই’। আমি তার কথা শুনে হো হো করে হাসলাম। ঠিকই তো, সে মোটা হয়েও যদি চলাফেরায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, মানুষের সামনে মোটা হিসেবে দাঁড়াতে যদি তার কোন সমস্যা না থাকে তো সেটাই তার চরিত্র আর ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করে। সে আত্ববিশ্বাসের সাথে হাঁসফাঁস করতে করতে মানুষের সামনে এসে দাঁড়ায়, সবার চেয়ে ভাল কাজ করে, সবার সাথে একসাথে বসে খায়- ঘুমায়; কোনদিন তাকে এক ফোঁটাও নিজেকে হা হুতাশ করতে দেখিনি। বুঝেছি, এটাই তার ব্যক্তিত্ব। তাকে সে হিসেবে সম্মান করতে পেরে সবাই নিজেরাই সম্মানিত বোধ করি আমরা।

সেদিন দিদিকে জিজ্ঞেস করলাম ‘দিদি তুমি যে মোটা এ জন্য কি তোমার হীনম্মন্যতা কাজ করে?’ দিদি বলল ‘হীনম্মন্যতা  কাজ করলে তো সেটা কাজ করার আগেই জিমে ভর্তি হয়ে যেতাম। আমি নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট না হলে নিজে কোনকিছু ধারণ করি না, লালনও করি না। আমি মোটা কারণ আমার এভাবেই থাকতে ভাল লাগে।’

আমার আরেক নারী বন্ধু অফিস শেষ করে আমাকে প্রায়ই আড্ডা দেয়ার জন্য ডাকে। আমরা আড্ডা দিই, খাই, ছবি তুলি তারপর ছবি তোলা শেষ হলে নিজেকে কালো লাগছে বলে মন খারাপ করে আর ছবি তুলবে না বলে ঘোষণা দেয়। নামী-দামি স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিতে পড়ে এসে মানুষ এইটুকু জ্ঞান অর্জন করেছে ভেবে আমারও মন খারাপ হয়।

কালো একটা রং, কালো দেখালেই চেহারা খারাপ দেখাচ্ছে এমন ধারণার জন্ম কে কবে দিয়েছিল? গরীব, অসহায় আর কালো কি একইরকম অপারগতার কথা বলে। গরীব বা অসহায় যেমন এক প্রকার দৈন্যতা, কালো বা মোটা হওয়াও কি ঠিক তাই? যারা কালো তারা তাহলে অসুন্দর? কালো রঙ তাদের অপারগতা, অক্ষমতা এরকম কিছু? –উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ, যারা কালো রং বা স্বাস্থ্য মোটা হওয়াকে দৈন্যতার অংশ বানিয়েছে তারা মানুষ হয়ে জন্মেছে বলে নিজেও লজ্জিত। যারা মানুষ হিসেবেই লজ্জিত তাদের চেহারা কালো বা ধলো যাই হোক, শরীর মোটা বা চিকন যাই হোক তারা আজীবন লজ্জিতই থাকবে। যতই তারা মনে করুক প্রগতির পথে পুরুষের সমকক্ষ হয়ে চলছে, তারা হয়ত চলছে তবে চলছে নিজের সংকটাপন্ন  অস্তিত্ব নিয়ে। তারা নিজেরা নিজ হয়ে উঠতে পারেনি, হয়ে উঠতে এখনো বহুকাল।

লেখক : সাংবাদিক।

এইচআর/পিআর

আরও পড়ুন