প্রধানমন্ত্রী পারেন অথচ…
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী। আর তিনি সবাইকে তা নিজেই জানিয়ে দিলেন। বললেন ‘ঘর থেকে বের হওয়ার সময় নিজের ঘরের সুইচ (বিদ্যুতের) নিজেই বন্ধ করি।’ যারা বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী নন তাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন- ‘অনেক কর্মকর্তা নিজেকে বড় ভেবে বিদ্যুতের সুইচ বন্ধ করেন না।’ তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন ‘নিজের কাজ নিজে করায় কোনো লজ্জা নেই।’ গতকাল বুধবার রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে (আইসিসিবি) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মূলত সাশ্রয়ী মনোভাব গড়ে তুলতেই প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের পদক্ষেপের কথা বলেছেন। তিনি এর আগেও এ ধরনের কথা বলেছেন। ইতোপূর্বে বিদ্যুত সাশ্রয়ে মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি অফিসে কর্মকর্তাদের স্যুট-টাই না পরতে নির্দেশনা জারি করেছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিসভার বৈঠকে সরকারি অফিসে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-কর্মকর্তাদের গরমে আনুষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতা ছাড়া স্যুট-টাই না পরার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তারই আলোকে এ ধরনের নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল। এবারও প্রধানমন্ত্রী একই ধরনের মনোভাব নিয়ে অপচয় বন্ধের তাগিদ দিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এই উপলব্ধি অত্যন্ত বাস্তবসম্মত এবং প্রশংসার দাবিদার। সত্যি বলতে কি, আমাদের মধ্যে সাশ্রয়ী মনোভাবের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। কে কত ব্যয় করতে পারলো, কে কত দামী পোশাক পরতে পারলো তার একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে সমাজে।
বিদ্যুত ব্যবস্থার এখন উন্নতি হয়েছে তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। দেশের অনেক অঞ্চল এখনও বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আসেনি। যেখানে বিদ্যুত আছে সেখানেও সারাক্ষণ বিদ্যুত থাকে না। চাহিদা এবং উৎপাদনের সঙ্গে সমন্বয় না হওয়ায় এই অবস্থা। একদিকে যেমন বিদ্যুতের সঙ্কট অন্যদিকে এর অপব্যবহারও রয়েছে । কেউ বাতি জ্বালানোর বিদ্যুত পায় না। আবার কেউ বিদ্যুত নিয়ে বিলাসিতায় মেতে ওঠে। যেখানে একটি বা দু’টি বাল্ব হলেই চলে সেখানে অনেক বাতি জ্বালানো হয়। অহেতুক আলোকসজ্জাও করা হয়। গরমের সময়ও মোটা কাপড় পরে এয়ারকুলার চালিয়ে রাখা হয়। অফিস-আদালতে লোকজন না থাকলেও অনেক সময় ফ্যান ঘুরে, বাতি জ্বলে। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় নিজহাতে ফ্যান, লাইটের সুইচ বন্ধ করার কথা ভাবতেও পারেন না অনেকে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী যে বললেন ‘আমি প্রধানমন্ত্রী হয়েও নিজহাতে সুইচ বন্ধ করি’- এটাই আসলে গৌরবের ব্যাপার। অপচয় করার মধ্যে কোনো বাহাদুরি নেই। শুধু পানি বা বিদ্যুতের ক্ষেত্রেই নয় পানি, গ্যাসসহ সকল ক্ষেত্রেই যদি মিতব্যয়ী হওয়া যায় তাহলে সমাজে এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। কথায় বলে, বিন্দু বিন্দু করেই সিন্ধু হয়। কোনো কিছুরই নিয়মবহির্ভূত এবং অপব্যবহার ভালো নয়।
এইচআর/আরআইপি