বিজয়ের মাসে আরো একটি জয়
বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে যুদ্ধাপরাধ বিচারে আরো একটি রায় এলো। এবার একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শরীয়তপুরের ইদ্রিস আলী সরদারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ফায়ারিং স্কোয়াডে বা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার দণ্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের আদেশে। বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে গতকাল সোমবার এ আদেশ দিয়েছেন।
ইদ্রিসের বিরুদ্ধে মোট চারটি অভিযোগ ছিল। এক ও দুই নম্বর অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে, তিন নম্বর অভিযোগে তাকে দেয়া হয়েছে আমৃত্যু কারাদণ্ড। এছাড়া ৪ নম্বর অভিযোগে তাকে ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। এই রায় স্বস্তিদায়ক। আইনের আরো ধাপ আছে। সেগুলো পার করে যাতে মানবতাবিরোধী এই অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা যায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। তাছাড়া ইদ্রিস আলী পলাতক রয়েছে। ফলে তাকে গ্রেফতার করা না গেলে রায় কার্যকর করা যাবে না। এ জন্য যথাশীঘ্র তাকে গ্রেফতার করতে হবে।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারে দোষীরা শাস্তি পাচ্ছে। এর মধ্যদিয়ে যুদ্ধাপরাধ বিচারে কলঙ্কমোচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে একসাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। স্বাধীনতা অর্জনের ৪৫ বছর পর যুদ্ধাপরাধের বিচার ছিলো একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। কেননা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই সপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে দেশ আবার পরিচালিত হয় মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ স্রোতে। এসময় জেলে আটক যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় সরাসরি স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী সংগঠন নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামীকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন সামরিক শাসক জিয়া। শুধু তাই নয় যুদ্ধাপরাধী রাজাকার, আলবদর, আল-শামসরা রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়।
যুদ্ধাপরাধী শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী করেন জিয়া। এরই ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়া নিজামী, মুজাহিদের গাড়িতে তুলে দেন শহীদের রক্তখচিত লাল-সবুজ পতাকা। কিন্তু সবদিন সমান যায় না। অবেশেষে ঘাতকের দিন শেষ হতে থাকে। জনরায় নিয়ে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি যুদ্ধাপরাধ বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল গঠন করেন। এরপর একে একে গ্রেফতার করা হয় চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের। ইতিমধ্যেই চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা কাদের মোল্লা, এম কামারুজ্জামান, আলী আহসান মুজাহিদ এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে জাতি একে একে কলঙ্কমোচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ ফিরে আসছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারায়।
যুদ্ধাপরাধের বিচারের মধ্য দিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসছে জাতি। অপরাধ করলে যে কেউ পার পায় না এই বার্তাটিও পৌঁছে যাচ্ছে সমাজে। এরমধ্য দিয়ে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে। গণতন্ত্র আরো মজবুত ভিত্তি পাবে। শোষণ, বঞ্চনাহীন অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাও সম্ভব হবে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে আমাদের লক্ষ্য হোক সেই দিকে।
এইচআর/পিআর