দায় পুলিশকেই নিতে হবে
রাজধানীর বাড্ডায় তরুণী ধর্ষণের প্রধান আসামি রুবেলের (২৬) নিম্ন আদালতের বিচারকের খাস কামরা থেকে পালানোর ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। গত রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এর এক ফাঁকে বিচারকের খাস কামরা থেকে সে পালিয়ে যায়।
রুবেল কোনো সাধারণ আসামি নয়। প্রায়ই সে স্থানীয় তরুণীদের উত্ত্যক্ত করতো। সুযোগ পেলেই করতো ধর্ষণ। কিন্তু লোকলজ্জা, হুমকি ও মারধরের ভয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে সাহস পেতো না ভুক্তভোগীরা। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ও মামলা আছে। ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও প্রতারণাসহ কমপক্ষে ২০টি অভিযোগ রয়েছে বাড্ডার ‘ত্রাস’ বলে পরিচিত রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ গত ২৫ অক্টোবর রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় এক গারো তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। পরে বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব-১।
রুবেলের বিচারের দাবিতে তার পরিবার তো বটেই মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সোচ্চার। ধর্ষণের মতো আলোচিত মামলার এ রকম একজন আসামি পুলিশ পাহারায় আদালতে জবানবন্দি দিতে গিয়ে পালিয়ে যাবে- এটা মেনে নেওয়া যায় না। দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। ২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে আসামি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছিল। তারও আগে ২০১৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যা করে জেএমবির তিন সদস্যকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। সুতরাং দুর্ধর্ষ আসামিদের ক্ষেত্রে এ ধরনের আশঙ্কা থাকেই। এ কারণে পুলিশকে যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই আদালত আসামি আনা-নেওয়া করা উচিত। এ ব্যাপারে পুলিশের নিশ্চয়ই প্রশিক্ষণও রয়েছে। তারপরও এ ধরনের ঘটনা কী করে ঘটলো- সেটি ভাবনার বিষয়।
এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে বাড্ডা থানার এসআই এমরান উল হাসান ও কনস্টেবল দীপকচন্দ্র পোদ্দারকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যায় তাদের বরখাস্ত করা হয়। আসামির পালিয়ে যাওয়ার দায় পুলিশ কিছুতেই এড়াতে পারে না। এজন্য দায়িত্বশীলদের দায় নিতে হবে। তবে সেটা হতে হবে দৃষ্টান্তমূলক। যাতে ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। আর যে কোনো মূল্যে তরুণী ধর্ষণের প্রধান আসামি রুবেলকে আইনের আওতায় এনে তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
এইচআর/পিআর