ইতিহাসের অপেক্ষায়...
চমৎকার আবহাওয়া এখানে আজ বিকেলে। হালকা রোদ আর মৃদুমন্দ হিমেল বাতাস। বাংলাদেশের হেমন্তের বিকেলের কথা মনে পড়ছে। আমি আর আমার বন্ধু কার্ল লেকের পাশে হাঁটতে এসেছি।
লেকের পাশঘেঁষে সাইপ্রাস আর পাইন গাছের সারি। রোদ আর ছায়ার খেলার মাঝে হাঁটছি আমরা। আমি কার্লকে বাংলাদেশের হেমন্ত উৎসবের সঙ্গে এখানকার ‘ফল ফেস্টিভালের’ মিলগুলো নিয়ে আলাপ করছি।
আমেরিকাজুড়ে চলছে উৎসব। নতুন ফসল তোলার পুরনো প্রথা থেকে এ উৎসবের শুরু। খানিকটা আমাদের নবান্নের মতো। বড় বড় খড়ের গাঁদা, বড় বড় মিষ্টি কুমড়ো দিয়ে সাজানো মেলা। তার সঙ্গে প্রচলিত খাবার আর ভুট্টা, কুমড়োর তৈরি নানা পদের খাবার। পাশে চলে সঙ্গীতের উচ্ছ্বাস, জীবনের উচ্ছ্বাস।
কার্ল একজন চমৎকার মানুষ। কার্লের জন্ম বোস্টনে। বড় হয়েছে সেখানে।
কার্ল একজন বিত্তশালী মানুষ হলেও তার কোনো বহিঃপ্রকাশ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে অভিনব এক কাজ শুরু করেছিল সে। বড় বড় কনসার্টের আলোকসজ্জার কাজটি করে সে। তাই নিয়েই বিশাল রাজত্ব তার। আমেরিকা ছাড়াও সারা দুনিয়ার ২০টি বড় শহরে তার বিশাল সব গুদাম ভর্তি কেবল আলোকসজ্জার জিনিসপত্র। হাজার খানেক লোকের রুটি-রুজির ভার তার। বিমানবহরে তার আলোকসজ্জার জিনিসপত্র সারা দুনিয়ায় বড় বড় গানের দলগুলোর সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। তাদের সঙ্গে কার্লও ঘোরে।
সাধারণ আমেরিকানদের সঙ্গে কার্লের বিরাট পার্থক্য। সে সারা দুনিয়া ঘুরছে বলে তার জীবনবোধ আলাদা। নিজেকে ‘বিশ্বমানব’ বলে সে।
এবারের আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে তার বিশেষ উৎসাহ নেই। তবে সে ভোট দেবে আগামীকাল। ও একজন রিপাবলিকান। তবে সে ভোট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দিচ্ছে না।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম কেন?
ও হেসে বললো, এবারের নির্বাচনটা কোনো সাধারণ নির্বাচন নয়। এটি মন্দের সঙ্গে ভালো, আঁধারের সঙ্গে আলোর নির্বাচন। এটি বর্ণবৈষম্য প্রতিহতের, নারী স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার অর্জনের নির্বাচন। এটি ধর্মীয় স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখার নির্বাচন। এটা সংখ্যালঘুদের টিকে থাকবার নির্বাচন। এটি সচেতন আমেরিকানদের টিকে থাকার নির্বাচন। ‘সচেতন’ কারা জানতে চাইলেই সে হেসে বললো `Masses are Asses` ।
কার্লের মতে, গত আট বছরে এদেশে উন্নতি যেমনটি হবার কথা ছিল তেমনটি হয়নি। অবৈধ অধিবাসীদের নিয়ে রাজনীতি হয়েছে তবে সমাধান হয়নি। একটি দুর্বল স্বাস্থ্যনীতি করায় অনেক মানুষ স্বাস্থ্য বীমার প্রকৃত সুবিধা পায়নি। অনেক ছোট ছোট ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। সরকার তার ক্ষমতা আর ব্যাপ্তির পরিসীমা বাড়িয়েই চলছে। সরকারের খরচ বাড়ছে। অনেকেরই ট্যাক্স বাড়ছে। মধ্যবিত্তের ওপর চাপ বাড়ছে। অনেক মানুষ কাজ হারাচ্ছে। মানুষের কাজের পরিসীমা কমছে, রোবট বাড়ছে। এখনও কাজ চলে যাচ্ছে এ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে।
ও আরো বললো, দেখ, হিলারি ধোয়া তুলসি পাতা নয়। সে নির্বাচিত হলে তার ট্যাক্সের বোঝা বেড়ে যাবে। তবে আমেরিকানদের সময় এসেছে সারা বিশ্বকে দেখার যে, তারা এখনো এতো নিচে নেমে যায়নি। তাদের বোধশক্তি এখনো পুরোপুরি লোপ পায়নি।
সে মনে করে, ট্রাম্পের একটা চূড়ান্ত ভরাডুবি হবে।
অরলান্ডোর বাংলাদেশিরা দল বেঁধে হিলারিকে ভোট দেবেন। যদিও তারা সংখ্যালঘুদের মাঝেও লঘিষ্ঠ। গত রাতে এক নেমন্তন্নে গিয়ে মনে হল তারা ভীত। অধিকাংশ অধিবাসীই কমবেশি উদ্বিগ্ন এবারের নির্বাচন নিয়ে।
এবারের নির্বাচনে এদেশের প্রচলিত রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা ভঙ্গ হচ্ছে বারবার। ট্রাম্প সাহেব আর তার সমর্থকরা সংবাদমাধ্যম আর তার বিরোধী দলের প্রতি ক্ষুব্ধ। ট্রাম্প বর্ণবাদ উসকে দিয়েছেন একথা বলছে অনেকেই। ধর্মীয় অসহনশীলতা বিশেষ করে মুসলমানদের প্রতি তার বিদ্বেষ সবার পরিচিত। নির্দিষ্ট অঞ্চলের অধিবাসী যেমন- মেক্সিকানরাও বাদ যায়নি তার রোষানল থেকে।
আমাদের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে রেকর্ডসংখ্যক ভোটার আজকের আগেই তাদের ভোট দিয়েছেন এবং তা হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে। ভোট শুরু হয়ে গেছে। সব জরিপেই বলা হচ্ছে হিলারি জিতবে।
কয়েক ঘণ্টা পরই আমরা দেখতে পারবো তা। আমার মনে হয় আজ একটা ইতিহাস তৈরি হবে।
এসএইচএস/এইচআর/আরআইপি