প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন তিনি
শিশু চিকিৎসার পথিকৃৎ জাতীয় অধ্যাপক এমআর খানের মহাপ্রয়াণ বাংলাদেশের চিকিৎসা জগতের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। শুধু চিকিৎসার ক্ষেত্রেই নয় মানবকল্যাণব্রতী হিসেবেও তিনি ছিলেন প্রবাদপ্রতীম। বর্ণাঢ্য তার কর্মজীবন। তিনি চলে গেলেও তার অনুকরণীয় জীবনাদর্শ পথ দেখাবে। আমরা এই পরোপকারী চিকিৎসকের বিদেহি আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তার পরিবার ও স্বজনদের প্রতি রইলো গভীর সমবেদনা।
গত শনিবার বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে তার প্রতিষ্ঠিত ঢাকা সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এমআর খান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৮ বছর। গতকাল সোমবার জানাজা শেষে বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা জেলার রসুলপুরস্থ পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ১৯২৮ সালের পহেলা আগস্ট সাতক্ষীরার রসুলপুর গ্রামে আলহাজ্ব আব্দুল বারী খান ও মা জায়েরা খানমের ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন এমআর খান। পড়াশুনায় মেধাবী ছিলেন এমআর খান। ১৯৪৩ সালে এ স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করে চলে যান কলকাতায়। ভর্তি হন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে। ১৯৪৫ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করেন। ১৯৪৬ সালে ভর্তি হন কলকাতা মেডিকেল কলেজে। ১৯৫২ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করার পর সাতক্ষীরায় ফিরে আসেন তিনি। ১৯৫৬ সালে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য তিনি লন্ডনে পাড়ি জমান ও বৃটেনের এডিনবার্গ স্কুল অব মেডিসিন-এ ভর্তি হন। সেখান থেকে একই সালে ডিপ্লোমা ইন ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন ডিটিএমঅ্যান্ডএইচ ডিগ্রি লাভ করেন। স্কুল অব মেডিসিন লন্ডন থেকে ডিপ্লোমা ইন চাইল্ড হেলথ ডিসিএইচ ডিগ্রিও লাভ করেন তিনি। ১৯৭৮ সালে এডিনবার্গ থেকে ফেলো অব রয়েল কলেজ অ্যান্ড ফিজিশিয়ানস এফআরসিপিসহ অনেক ডিগ্রি লাভ করেন জাতীয় এ অধ্যাপক।
এরপর প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) কর্মজীবনের সূচনা হয় তার। সেখানে শিশুস্বাস্থ্যবিষয়ক কোর্স চালু করেন। বস্তুত তার হাত ধরেই এদেশে শিশুদের চিকিৎসার পথ সুগম হয়। চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি জন্ম দেন বহু প্রতিষ্ঠানের। এগুলোর মধ্যে রয়েছে শিশুস্বাস্থ্য ফাউন্ডেশন, শিশুস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং ঢাকা সেন্ট্রাল হাসপাতালসহ ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বেশ কটি শিশু হাসপাতাল, প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও ইনস্টিটিউট। প্রভিডেন্ড ফান্ডের অর্থ দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন দুস্থ মা ও শিশুদের জন্য এমআর খান-আনোয়ারা ট্রাস্ট।
মানবসেবার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন স্বাধীনতা পদক, একুশে পদকসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা। অসংখ্য মানুষের প্রেরণার উৎসও ছিলেন তিনি। তার দেখানো পথে অগ্রসর হয়েই আমরা এই মানবহিতৈষীর প্রতি জানাতে পারি শ্রদ্ধা ও সম্মান।
এইচআর/পিআর