প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন
এটা খুবই দুঃখজনক যে সরকারি বেসরকারি নানা উদ্যোগের পরও বাল্যবিয়ে বন্ধ হচ্ছে না। গণমাধ্যমে প্রায়ই বাল্যবিয়ের খবর আসে। এরসঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে জেল-জরিমানারও বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বাল্যবিয়ে থেমে নেই। বাল্যবিয়ে সমাজের জন্য অভিশাপ। কাজেই যে কোনো মূল্যে এটা বন্ধ করতে হবে।
লক্ষ্মীপুর সদরে কলেজছাত্রীকে (১৬) বাল্যবিয়ে দেয়ার অভিযোগে ইউপি সদস্য ও কাজিসহ ৫ জনের প্রত্যেককে এক হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় ভুয়া জন্মসনদ তৈরি ও সরবরাহের দায়ে চন্দ্রগঞ্জ বাজারের পিসি প্লাস নামের একটি কম্পিউটারের দোকান সিলগালা করা হয়। বুধবার রাত ১০টার দিকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান এ আদালত পরিচালনা করেন। অর্থদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের কাজি মাহবুব আলম, তার সহকারী শাহাব উদ্দিন, ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) মাহবুব আলম ওরফে সেলিম মোল্লা, বর মামুন হোসেন ও তার বাবা মোশারফ হোসেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর ভুয়া জন্মসনদের মাধ্যমে চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের দেওপাড়া গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে মামুনের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক কলেজছাত্রীর বিয়ে হয়। ওই ছাত্রীর বয়স ১৬ বছর ৬ মাস হলেও চন্দ্রগঞ্জের কাজি মাহবুব ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে বিয়ে রেজিস্ট্রি (নিবন্ধন) করেন। জরিমানাপ্রাপ্তদের যোগসাজসে এ বাল্যবিয়ে সম্পন্ন হয়। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ও জরিমানাপ্রাপ্তদের স্বীকারোক্তিতে এ জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আইন অনুযায়ী পুরুষের বিয়ের বয়স ২১ বছর, নারীর ১৮ বছর। ব্যতিক্রম হলে বিয়ের সঙ্গে জড়িত বর-কনের অভিভাবক, আত্মীয়, স্থানীয় কাজিসহ সবার শাস্তির বিধান রয়েছে। জড়িত পুরুষদের এক মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। বর ও কনে দুজন নাবালক হলে তাদের কোনো শাস্তি হবে না। বর সাবালক ও কনে নাবালিকা হলে ছেলের এক মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা এক হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
কন্যাশিশুরাই বাল্যবিয়ের শিকার হয় বেশি। দারিদ্র্য, অসচেতনতা, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, যৌন হয়রানি ও কন্যাশিশুর প্রতি নেতিবাচক মনোভাবের কারণে কন্যাশিশুদের বিয়ে হচ্ছে বেশি। পাশাপাশি ভুয়া জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে বয়স বাড়ানোর ঘটনাও ঘটছে। দেখা যায়, সন্তান জন্ম দেওয়া ও লালন-পালন করা অল্প বয়সী মায়েদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এই অবস্থায় মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়ছে।
নানা ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে-এমন স্বপ্ন দেখছি আমরা। কিন্তু বাল্যবিয়ে এর মধ্যে বিরাট এক বাধা। এ সমস্যা সমাধানে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে সবচেয়ে বেশি। বিয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে গেল-এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া আর্থ সামাজিক নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ জন্য বাল্যবিয়ে বন্ধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা ও মানসিকতার পরিবর্তনও অত্যন্ত জরুরি।
এইচআর/এবিএস