পণ্যের দাম বাড়ানোর একি কৌশল!
আমাদের দেশে যে কোনো উসিলায়ই বাড়ে পণ্যমূল্য। যখন কোনো উসিলা থাকে না তখন মুনাফালোভী সিন্ডিকেট নিজেরাই পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। সে সুযোগে ইচ্ছেমত বাড়িয়ে দেন পণ্যের দাম। এদের কোনো নীতি-নৈতিকতা কাজ করে কিনা সন্দেহ। মুনাফালোভী চক্রের বিরুদ্ধে তেমন কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকায় তারা অবাধে চালিয়ে যান তাদের অপতৎপরতা। আর এতে সাধারণ মানুষের পকেট কাটা যায়। পকেট ভারী হয় অসাধু ব্যবসায়ীদের। কিন্তু এভাবে চলতেই থাকবে?
পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর এক অভিনব পন্থা নিয়ে সহযোগী একটি দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- পণ্যের দাম বাড়াতে লাইটারেজ জাহাজকে `গুদাম` বানিয়ে সাগর-নদীতে ভাসিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। দেশের ৪১টি ঘাটে পণ্য নিয়ে ভাসছে ৯৬৬টি লাইটারেজ জাহাজ। ১৬ দিন থেকে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে ভাসছে জাহাজগুলো। এসব জাহাজে ডাল, চিনি, গমসহ বিভিন্ন ধরনের ১৬ লাখ টন পণ্য রয়েছে। পণ্য গুদামজাত করলে সরকারের নজরদারিতে পড়তে হয়। টনপ্রতি গুনতে হয় ৬০ থেকে ৬৫ টাকা ভাড়াও। তাই লাইটারেজ জাহাজের গোপন হ্যাজেই মাসের পর মাস পণ্য রাখছেন কিছু ব্যবসায়ী। এভাবে পণ্য ভাসিয়ে রেখে বাজার অস্থির করা হয়। পণ্যের দাম বাড়লে সুযোগ বুঝে আস্তে আস্তে লাইটারেজ থেকে পণ্য খালাস করেন তারা। এদিকে লাইটারেজ জাহাজকে এভাবে গুদাম বানানোয় ব্যাহত হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসের কার্যক্রম। চাহিদা মতো লাইটারেজ না থাকায় বন্দরের বহির্নোঙরে তৈরি হয়েছে পণ্যবোঝাই জাহাজের জট।
নিয়ম অনুযায়ী একটি লাইটারেজ জাহাজে পণ্য থাকার কথা সাত থেকে আট দিন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ১৬ দিন থেকে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে পণ্য নিয়ে ভাসছে ৯৬৬টি জাহাজ। এর মধ্যে `গুদাম` হিসেবে ব্যবহৃত সর্বাধিক ১৫৮টি জাহাজ রয়েছে নারায়ণগঞ্জ ঘাটে। পণ্য গুদামজাত করলে বাজার মনিটরিং কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। তাছাড়া গুদামে ভাড়ায়ও দিতে হয়। এজন্য পণ্য মজুদের এই অভিনব পন্থা! এতে শুধু পণ্যের দামই বাড়ছে না, বন্দরের স্বাভাবিক কাজও ব্যাহত হচ্ছে। বাজারে চিনির দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে মিল মালিকরা দাম বাড়াচ্ছেন চিনির। খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে গত এক মাসে মণপ্রতি চিনির দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। অথচ লাইটারেজ জাহাজে ভাসা পণ্যের মধ্যে আছে চিনির কাঁচামালও। বাড়ছে ভোজ্য তেলের দামও। এ অবস্থায় অবিলম্বে এই পণ্য খালাসের ব্যবস্থা করতে হবে। যারা এই উপায়ে পণ্য মজুদ করছেন তাদের বিরুদ্ধেও নিতে হবে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা। পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কোনো অবস্থায়ই যেন দাম বাড়াতে না পারে সিন্ডিকেটধারী ব্যবসায়ীরা সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
এইচআর/পিআর