কাঙালের ধন চুরি!
‘এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি/ রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি’- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কবিতার বাস্তব উদাহরণ যেন সরকারের ‘হতদরিদ্রদের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির’ আওতায় ১০ টাকা কেজি চাল বিতরণ কার্যক্রমের অনিয়ম। সরকারের একটি জনকল্যাণমুখি উদ্যোগ কিছুসংখ্যক লোভী ও স্বার্থান্বেষীর কারণে কিভাবে ভেস্তে যায় তার জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে ১০ টাকা কেজি চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম। অনিয়ম বন্ধে খাদ্যমন্ত্রী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলেন। অনিয়ম এতোটিই ব্যাপকতা লাভ করেছে যে সংসদেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। এখন দেখার পালা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
গত ৭ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু কিছু দিন না যেতেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই কর্মসূচির চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ আসছে গণমাধ্যমে। প্রকৃত পক্ষে যারা এই চাল পাওয়ার কথা তাদের অনেকেই তা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে ধনাঢ্য এবং প্রভাবশালী অনেকেই এই কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এই কর্মসূচির আওতায় দেশের ৫০ লাখ লোককে মাসে ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা। সে অনুযায়ী চাল বিতরণ শুরুও হয়েছে। এরপর আশা করা গিয়েছিল প্রকৃত দরিদ্ররা চাল পাবে। এবং চালের দামও কমে আসবে। কিন্তু হয়েছে উল্টোটা। চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম হওয়ায় মোটা চালের দাম বেড়ে গেছে। অভিযোগ আছে ডিলাররা চাল মজুত করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চাল বিতরণে নানা অভিযোগ প্রতিদিনই গণমাধ্যমে আসছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম জানান- অনিয়মের অভিযোগে ২২ জনের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা হয়েছে। তাদের মধ্যে কুমিল্লায় তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বিশেষ ক্ষমতা আইনে। অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে শেরপুরের দুজন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জামালপুরের সরিষাবাড়ী ও মেলান্দহের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। ৪৪ জনের ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে। ওজনে কারচুপিসহ বিভিন্ন অভিযোগে মোট ৯ জনকে জরিমানা করা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে। বগুড়ার শাজাহানপুরে কালোবাজারে চাল বিক্রির অভিযোগে তিনজনকে সাজা দেওয়া হয়েছে।
গরিবের চাল নিয়ে কোনো ধরনের অনিয়ম দুর্নীতি মেনে নেওয়া যায় না। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার বিকল্প নেই। স্থানীয় সাংসদসহ জনপ্রতিনিধিদের এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। ১০ টাকার চাল নিয়ে চালবাজি বন্ধ করতে হবে যে কোনো মূল্যে।
এইচআর/পিআর