পুঁজিবাজারে আশার আলো
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নতুন করে আশার আলো তৈরি করেছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। আর ঈদ-পরবর্তী পুঁজিবাজারে প্রতিদিনই বেড়েছে সূচক ও লেনদেন। এরপর এক কার্যদিবস বাজার নেতিবাচক থেকে, পুঁজিবাজারের গতি তার পরের কার্যদিবসেই পরিবর্তন হয়ে ঊর্ধ্বমুখী হতে দেখা যায়। আর এই ঊর্ধ্বমুখী থাকার প্রবণতা দুই স্টক এক্সচেঞ্জেই অব্যাহত রয়েছে।
বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বাজারের দিকে ঝুঁকছেন। বেড়েছে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ। যার কারণে দেশীয় বিনিয়োগকারীরাও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আশাবাদী হচ্ছেন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণেই শুধু নয়, অর্থনীতির অন্য খাতেও ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতি রয়েছে। ডিএসইর হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ১৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ। আলোচিত সময়ে বিদেশি লেনদেন হয়েছে ৬ হাজার ৩৯৭ কোটি ১ লাখ টাকার শেয়ার। গত বছর একই সময়ে এর পরিমাণ ছিলো ৫ হাজার ৪৬৭ কোটি ৯১ লাখ টাকার শেয়ার। আর এ কারণে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ১৭ শতাংশের কাছাকাছি। আর বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাজারে আগ্রহ প্রকাশ করায় দেশি বিনিয়োগকারীরাও লেনদেন বাড়িয়েছেন। এতে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা যেমন বাড়ছে, তেমনি লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে।
পুঁজিবাজারে জুন ক্লোজিংয়ের কারণে ২৮ অক্টোবরের মধ্যে কোম্পানিগুলোর অডিট শেষ করতে হবে। তাই অক্টোবর মাসই ডিকলারেশনের মাস। এজন্য এ মাসে পুঁজিবাজারে লেনদেন বাড়াটাই স্বাভাবিক। বাজার ভালো রয়েছে, বাড়ছে লেনদেন ও সূচকও। ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স, এনবিএফআই, বহুজাতিক কোম্পানি ছাড়া সব কোম্পানির জুন ক্লোজিং এ মাসেই। আর এ মাসে কোম্পানিগুলো তাদের ডিকলারেশন দেয়ায় কোম্পানিগুলোর প্রতি বিনিয়োগকারীদেরও আগ্রহ বাড়ছে। বিনিয়োগকারীরা ভালো সংবাদের আশা করছে। আর অনেক কোম্পানির ভালো সংবাদে কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের চাহিদা তৈরি হয়েছে। এতে বাজারেও এর একটি ভালো প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এদিকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো থাকায় এই বাজার নেতিবাচক হওয়ার তেমন কোনো কারণ নেই। আর বিনিয়োগকারীদের ভয় কেটে যাওয়ার কারণে পুঁজিবাজার আগামী মার্চ পর্যন্ত ভালো থাকার কথা।
চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে ধারণা করছে বিশ্বব্যাংক। আর এর একটা প্রভাব পুঁজিবাজারেও থাকবে। বাজারের ঊর্ধ্বগতির প্রবণতা বাড়তে থাকলে ডিএসইর সূচক ছাড়াতে পারে ৫০০০ পয়েন্ট, যা এই বাজারে বিনিয়োগকারীদের অনেক দিনের প্রত্যাশা। দেশে হঠাৎ করে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো বিপর্যয় না থাকলে দুই স্টক এক্সচেঞ্জেরই সূচক ও লেনদেন বাড়ার কথা। আর এখন এমন বড় কোনো আইপিও বাজারে আসছে না যে তারা বাজার থেকে টাকা তুলে নিয়ে যাবে। যা পুঁজিবাজারে নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। এদিকে ইন্ডিয়া-পাকিস্তানের সম্পর্ক অবনতি হলেও তার বড় কোনো প্রভাব পুঁজিবাজারে নেই। এখন পর্যন্ত এই বড় দুটি দেশের যুদ্ধ লাগার মত কোনো আশঙ্কা তৈরি হয়নি। তাই আপাত দৃষ্টিতে পুঁজিবাজারে বিদেশি ও দেশীয় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ও অবস্থা দেখে স্বাভাবিকভাবেই ধারণা করা যায় পুঁজিবাজারে আবারও আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে।
এদিকে ব্যাংকগুলোতে প্রচুর অলস অর্থ পড়ে থাকায় ব্যাংকের ইন্টারেস্ট রেট অনেক কমে গেছে। সামনে আরো কমবে বলে ধারণা করা যায়। আর ব্যাংকের ইন্টারেস্ট রেট কমলে স্বাভাবিকভাবে ব্যাংকে টাকা না রেখে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী হবে। এতে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তবে একটানা বাজার বেড়ে যাওয়ায় গত রোববার বাজারে বিক্রির চাপ ছিল বেশি। আর এতে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক কমেছে। সকালে সূচকের পতনে লেনদেন শুরু হয় এবং শেষ পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। দিনশেষে প্রধান সূচক ২৫ পয়েন্ট, শরিয়া সূচক ৮ ও থার্টি সূচক ২২ পয়েন্ট কমেছে। সূচকের সঙ্গে কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। গত রোববার লেনদেন হয় ৫৫৯ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। লেনদেন হওয়া মোট ৩২৪টি কোম্পানির মধ্যে দাম বাড়ে ৮৩টির, কমে ২০২টির ও অপরিবর্তিত আছে ৩৯টি কোম্পানির দাম। টাকার অংকে লেনদেনের শীর্ষ কোম্পানির মধ্যে দিনশেষে টপ টেনে স্থান করে নেয়- বিএসআরএম লি., সিঙ্গার বিডি, বিএসআরএম স্টিল, এমজেএল বিডি, এনবিএল, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, আর্গন ডেনিমস, একমি ল্যাবরেটরিজ লি., ইউনাইটেড পাওয়ার এবং এসআইবিএল।
লেখক : বিজনেস এডিটর, এটিএন বাংলা। একাধারে সাংবাদিক, লেখক, সংবাদপাঠিকা এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালক। এছাড়াও অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার বিষয়ে রয়েছে তার সংবাদ ও টেলিভিশন টক শো। সদস্য, এফবিসিসিআই। কো-চেয়ারম্যান এসএমই, পাট, ইয়াং এন্টারপ্রাইনার ও পুঁজিবাজার বিষয়ক স্টান্ডিং কমিটি । বর্তমানে এশিয়ান প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশনের সার্টিফাইড প্রশিক্ষক এবং উদ্যোক্তা।
এইচআর/আরআইপি