১০ টাকার চাল নিয়ে অনিয়ম বন্ধ হোক
হতদরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা কেজি চাল বিতরণ সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ‘হতদরিদ্রদের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির’ আওতায় কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ কার্যক্রম গত মাসে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু কিছু দিন না যেতেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই কর্মসূচির চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ আসছে গণমাধ্যমে। প্রকৃত পক্ষে যারা এই চাল পাওয়ার কথা তাদের অনেকেই তা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে ধনাঢ্য এবং প্রভাবশালী অনেকেই এই কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এই চাল দেওয়া হচ্ছে ভর্তুকি দিয়ে। সেটি যদি যাদের প্রাপ্য তাদের না দিয়ে অন্যদের দেওয়া হয় তাহলে এর লক্ষ্য ব্যাহত হবে একদিকে, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থেরও শ্রাদ্ধ হবে। সে কারণেই কোনো অবস্থায়ই যেন চাল নিয়ে কোনো রকম অনিয়ম না হতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো মূল্যে।
ঠাকুরগাঁয়ের রানীশংকৈল উপজেলায় হতদরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির তালিকায় আ.লীগ নেতা প্রভাষক সফিকুল আলমের নাম থাকায় এলাকায় আলোচনার ঝড় উঠেছে। এ ধরনের আরো অভিযোগ এসেছে গণমাধ্যমে। দরিদ্র পরিবার নির্বাচন করার দায়িত্ব যাদের তারা তাহলে কি করছেন? নিয়ম অনুযায়ী কর্মসূচিতে নারীপ্রধান পরিবার বেশি প্রাধান্য পাবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে দরিদ্র পরিবার নির্বাচন করার কথা। প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কারা দরিদ্র পরিবার নির্বাচন করছে? সরকারের একটি মহৎ কর্মসূচিকে কারা কালিমালিপ্ত করছে? এদের খুঁজে বের করা অত্যন্ত জরুরি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্মসূচি উদ্বোধনের সময় বলেছিলেন, ‘কেউ না খেয়ে থাকবে না।’ সেটিই স্বাভাবিক। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশে প্রতিটি নাগরিক তার অধিকার নিয়ে বাঁচবে- এটি রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। কারণ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা একটি রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এটা খুবই আশার কথা। পরিকল্পনা মাফিক চললে যে অনেক কিছু করা সম্ভব তার প্রমাণ তো আমরা ইতিমধ্যেই পেয়েছি। উত্তরাঞ্চল এক সময় ছিল মঙ্গাপীড়িত। অভাব অনটন লেগেই থাকতো। এখন মঙ্গা বলে কিছু নেই। ভবিষ্যতে হয়তো এমন দিন আসবে যেদিন আর কাউকে ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) কার্ড বা স্বল্পমূল্যে চাল দিতে হবে না। এ জন্য পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে। যে অঞ্চলে যে ধরনের ফসল ফলে সেখানো সে ধরনের ফসল উৎপাদনের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। আর সে অনুযায়ী শিল্প-কারখানাও গড়ে তুলতে হবে। কৃষক যাতে ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কৃষিজমি রক্ষাও নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ।
মনে রাখা প্রয়োজন কোনো বিশেষ ব্যবস্থা বা প্রণোদনা চিরদিনের জন্য নয়। এ জন্য প্রতিটি মানুষকেই স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে নিতে হবে বিশেষ উদ্যোগ। বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ হতে চলেছে। এ দেশে কেউ না খেয়ে থাকবে-এটা ভাবাও যায় না। একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ পেতে হলে প্রত্যেকের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।
এইচআর/এবিএস