ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

বদরুলরা কেন বদলে যায়?

প্রকাশিত: ০৪:৩৮ এএম, ১০ অক্টোবর ২০১৬

কৃষক ও দিনমজুর বাবার পাঁচ সন্তানের দ্বিতীয় বদরুল সুনামগঞ্জের ছাতকের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এসে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হতে পেরেছিল। তার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে যে সে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিল এবং এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফল করেছিল।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হওয়া কোনো সহজ ব্যাপার নয় এবং বদরুল সেটা পেরেছিল। ‘মর্নিং সোজ দ্য ডে’ হলে মর্নিংটা তার খারাপ ছিল না।বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৮-০৯ সেশনে ভর্তি হয়ে তার ২০১২ সালে গ্রাজুয়েশন হয়ে যাবার কথা।কিন্তু দেখা গেল বদরুল ২০১২ সালে তার কথিত প্রেমিকা খাদিজা বেগম নার্গিসকে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের ঘোপাল নামক স্থানে উত্যক্ত করতে যেয়ে স্থানীয় জনগণের কাছে গণ-পিটুনির শিকার হয়েছে যাকে সে জামায়াত-শিবিরের আক্রমণ বলে চালিয়ে দিয়ে ক্যাপিটালাইজ করেছে এবং ছাত্রলীগের একটি পদ বাগিয়ে নিয়েছে।

দেখা যাচ্ছে মোটামুটিভাবে ২০১০ সাল থেকেই বদরুলের স্বাভাবিক শিক্ষার্থী জীবন থেকে স্খলন ঘটেছে। ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বদরুলের জীবন এক বল্গাহীন, দায়িত্বহীন, লক্ষ্যভ্রষ্ট জীবন। বড়ভাই দর্জি-দোকানির সামান্য আয়ে অতি কষ্টে মা দিলারা বেগম বদরুলকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত নিয়ে আসতে পেরেছেন। কত স্বপ্ন দেখছেন ছেলেটিকে নিয়ে। আজ দুঃখিনী মায়ের সারা জীবনের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল।

যখন বদরুল একটার পর একটা সেমিস্টার ড্রপ দিচ্ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নানাবিধ বিশৃঙ্খল কাজ-কর্মে যুক্ত হয়েছিল, তখন তাকে নিবৃত্ত করার কেউ ছিল না। সামান্য রাজনৈতিক ক্ষমতা তাকে আরও বেপরোয়া করে তুলেছিল। তার  পরিবার, গ্রাম, তার হল, তার বিভাগ, তার বিশ্ববিদ্যালয়, তার সংগঠন- কেউ তাকে রুখতে পারে নি। অথচ প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব দায়িত্ব ছিল।

বদরুলের জীবন থেকে দেখা যায় সে ক্রমশ বদলে যাচ্ছিল এবং তাকে বাধা দেবার কেউ ছিল না। তাকে নিবিড়ভাবে দেখভালের দায়িত্ব কেউ নেয় নি। একজন যুবকের হৃদয়ে প্রেম আসবে এবং সে প্রার্থিত প্রেমিকাকে পেতে চাইবে- এতো খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। প্রেমে প্রত্যাখ্যান, প্রেমে পড়ার মতোই স্বাভাবিক। এই সহজ স্বাভাবিক বিষয়টি বদরুল সহজভাবে কেন নিতে পারলো না? কারণ ততদিনে ক্ষমতা এবং বখাটেপনা তার মস্তিষ্কে  এক ‘ফল্স ইগো’ তৈরি করেছে, যেই ইগো কিছুতেই কোনো প্রত্যাখ্যান মেনে নেবার জন্য প্রস্তুত নয়। খাদিজার প্রত্যাখ্যান তাই তার রক্তাক্ত হৃদয়ে এক অপমানের শেল হয়ে বিঁধেছে এবং খাদিজাকে সে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছে। এর সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক সামান্য।

মূল বিষয় হলো অপমানিত ইগো। সে তার ইগোকে জয়ী করতে চেয়েছে। বদরুল যদি অন্য একটা স্বাভাবিক নিরীহ ছেলে হতো, তাহলে সে হয়তো এটা মেনে নিত। কিন্তু সে ইতোমধ্যেই বখে যাওয়া, উদ্যত, নিষ্ঠুর এক যুবক।  সময় মতো ব্যবস্থা নিলে, সাহায্য করলে বদরুলের এই বখে যাওয়া হয়তো ঠেকানো যেত। বদরুলের এই অপরাধের যথাযথ শাস্তি প্রয়োজন। কারণ সমাজে শাস্তিহীনতার সংস্কৃতি অপরাধী তৈরিতে সহায়তা করে। খাদিজার জন্য প্রার্থনা। আশা করি মৃত্যুর দুয়ার থেকে সে ফিরে আসবে।

লেখক: বিভাগীয় প্রধান, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

এইচআর/এবিএস

আরও পড়ুন