জঙ্গি দমনে সফল অভিযান
সরকার যে জঙ্গি দমনে জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে তা আবারো প্রমাণিত হলো গতকাল র্যাব-পুলিশের পৃথক অভিযানে ১২ জঙ্গি নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে। শারদীয় দুর্গোৎসব চলছে। সামনে আশুরা। এরমধ্যে নানা রকম নাশকতার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। তাজিয়া মিছিলে গতবারের নাশকতার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। পূজায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও নেয়া হয়েছে সব ধরনের ব্যবস্থা। বিশেষ করে জঙ্গি হামলা ঠেকাতে প্রশাসন বদ্ধ পরিকর। এরই অংশ হিসেবে জঙ্গি আস্তানায় হানা দেয়া হয়েছে। সফল এই অভিযানের পর স্বস্তি নেমে এসেছে জনমনে। জঙ্গি দমনে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।
কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের সফল অভিযানের পর জঙ্গিরা একটি বার্তা পেয়েছিল। সেটি হচ্ছে সরকার যে কোনো মূল্যে জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটনে বদ্ধপরিকর। গতকালের সফল অভিযানে জনমনে এই ধারণা আরও পোক্ত হলো যে মানবতাবিরোধী জঙ্গিদের কোনো রেহাই নেই। গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও সাভারে চার আস্তানায় র্যাব ও পুলিশের পৃথক অভিযান চালানো হয়। এতে নব্য জেএমবির ১২ জঙ্গি নিহত হয়েছে। গতকাল শনিবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত এসব অভিযান চালানো হয়। এর মধ্যে গাজীপুর সদরের নোওয়াগাঁওয়ের পাতারটেক এলাকায় পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছে সাতজন। তার আগে সদরের হাড়িনালের লেবুবাগান এলাকার একটি বাড়িতে র্যাবের অভিযানে নিহত হয়েছে দুই জঙ্গি। আর টাঙ্গাইল সদরের কাগমারা মির্জা মাঠ এলাকায় র্যাবের অভিযানে নিহত হয়েছে দুজন। সন্ধ্যায় আশুলিয়ায় র্যাব অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে আবদুর রহমান ওরফে নাজমুলকে। নব্য জেএমবির অর্থ জোগানদাতা হিসেবে চিহ্নিত রহমান রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। আশুলিয়ার আস্তানা থেকে ৩০ লাখ টাকাসহ অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে। প্রায় ৯ ঘণ্টার অভিযানে গাজীপুরের দুই আস্তানা থেকে একে টোয়েন্টি টু রাইফেল, নাইন এমএম পিস্তল, বিস্ফোরক, গুলি, চাপাতি, গ্যাস সিলিন্ডার ও ল্যাপটপ জব্দ করা হয়েছে। গুলশান হামলার পর এ নিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে গত তিন মাসে পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে ৩৩ জঙ্গি নিহত হলো।
জঙ্গি দমনে এ ধরনের অভিযান নিঃসন্দেহে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি বড় সাফল্য। যখন একের এর এক জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটছে এবং দেশের মানুষ যখন জঙ্গিবাদের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে চাচ্ছে তখন জঙ্গিদের অপতৎপরতা অঙ্কুরেই নষ্ট করে দেওয়া স্বস্তির বিষয়। আমরা এই সফল অভিযানের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিনন্দিত করি। ভবিষ্যতে এভাবেই সকলের সহযোগিতায় সব অপতৎপরতা রুখে দেওয়া সম্ভব হবে বলেও আশা করি।
জঙ্গিদের বাড়িভাড়া না দেওয়ার ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছিল। এরপরও বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিদের বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ঘটনা বিস্ময়কর। এ ব্যাপারে বাড়িওয়ালাদের সতর্ক থাকতে হবে। ভাড়াটিয়ার তথ্য যাচাই-বাছাই করে তবেই বাড়িভাড়া দিতে হবে। প্রয়োজনে জঙ্গি আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধেও নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলে বাংলাদেশকে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে হবে। যুদ্ধাপরাধের বিচারে সাফল্য দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। এখন এই উগ্রবাদীরাও হালে পানি পাবে না যদি জনমানুষকে সচেতন করে তোলা যায়।
এইচআর/এবিএস