ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

সংঘাতময় পরিস্থিতিতে গণমাধ্যম

প্রকাশিত: ০৫:৩৭ এএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

গ্লোবাল ফোরাম ফর মিডিয়া ডেভেলপমেন্ট- জিএফএমডি’র চতুর্থ সম্মেলন হয়ে গেলে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায়। প্রায় ৫০টি দেশের ১৮০টির মতো সংগঠনের তিনশোরও বেশি প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২০ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত আলোচনা করেছেন পরিবর্তিত বিশ্বে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে। প্রতি চার বছর পর পর এই সম্মেলনে উঠে আসে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জনগণের তথ্য জানার অধিকারে, দুর্নীতি প্রতিরোধে, দেশে দেশে সুশাসন নিশ্চিত করতে গণমাধ্যম কতটা কি করতে পারছে তা আলোচনা করা। আলোচনা হয় ভবিষ্যতের পথনির্দেশনা নিয়েও।  
 
বার বার আলোচনায় উঠে এসেছে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের ভূমিকা, তাদের নিরাপত্তার বিষয়গুলো। বিশেষ করে বর্তমানে যেভাবে উগ্রবাদ মাথাচারা দিয়ে উঠেছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আলোচনা হয়েছে সামাজিক মাধ্যমের আবির্ভাবে গণমাধ্যমের নতুন সংগ্রামের কথা নিয়েও। প্রথাগত মাধ্যমে যে গেট কিপিং ধারণা আছে, নন-মিডিয়া গেট কিপারের ধারণা কি হবে তাও উঠে আসে বিতর্ক আর আলোচনায়।  
 
আগে এমনটা কেউ ভাবেনি। এখন সামাজিক গণমাধ্যম সাংবাদিকতার ধরন বদলে দিয়েছে। উন্নয়ন সংস্থাগুলো থেকে যারা প্রতিনিধিত্ব করেছে তারা বলার চেষ্টা করেছেন গণমাধ্যম শুধু দূর থেকে ওয়াচডগ বা পর্যবেক্ষকের ভূমিকা রেখে যাবে কেবল তা নয়, সময় এসেছে নতুন করে সহযোগিতার সাংবাদিকতা নিয়ে ভাবা। গণতন্ত্রের বিকাশে সাংবাদিকদের সাহায্য করতে হবে রাজনীতিকেই, এমনটাই জোরালোভাবে বলা হয়েছে এবার জাকার্তা ফোরামে।  

গণতান্ত্রিক সমাজে সবাই বিশ্বাস করে এমনভাবে যে, মিডিয়া স্বাধীন এবং সত্য তুলে ধরা ও তা প্রকাশে দায়িত্বশীল। ক্ষমতাশালী গোষ্ঠী দেখাতে চায়, মিডিয়া কেবল তার কথাই বলছে। আর দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের এই দুনিয়ায় সাংবাদিকদের ঝুঁকি এখন আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি।

গণতন্ত্রের সংকটে যেমন সাংবাদিকরা কাজ করতে গিয়ে বিপদে পড়েন, তেমনি পড়তে হচ্ছে উগ্রবাদের উত্থানে। গণমাধ্যম কর্মীদের নিরাপত্তা তাই আজ বড় ভাবনা। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবনা একেবারে নেই বললেই চলে। দ্বন্দ্ব, সংঘাত আর সহিংসতায় এসব সাংবাদিক কাজ করেন সবচেয়ে কম লজিস্টিকস সাপোর্ট নিয়ে। এর বাইরে রয়েছে তার জীবনের ঝুঁকি, অর্থাৎ তার কিছু হলে খুব কম সংখ্যক প্রতিষ্ঠানই তার বা তার পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে থাকে।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে কি করণীয়, নেই সে সম্পর্কিত কোন প্রশিক্ষণ। নেই সম্পাদকীয় নীতিমালা ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ। বরং দেখা যায় রিপোর্টার কিংবা বার্তা কক্ষের উপর রাজনৈতিক চাপ পরিস্থিতিকে গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য আরো নেতিবাচক করে তুলছে।  

গণমাধ্যম নিয়ে যারা কাজ করেন তারা বললেন, দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতিতে এমনিতেই নানা ধরনের মেরুকরণ আর নীতি নৈতিকতা নিয়ে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানকে চিন্তিত থাকতে হয়, চিন্তিত থাকতে হয় মাঠ পর্যায়ে তার কর্মীর নিরাপত্তা নিয়ে। তখন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপ গণমাধ্যমের কর্মীদের জীবন আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।

গণমাধ্যম কর্মীদের নিরাপত্তা আজ শুধু তাদের নিজস্ব বিষয়। সম্মেলনে উপস্থিত নানা দেশের গণমাধ্যম কর্মী ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সমাজের সকলের ভাবনায় থাকতে হবে যে, একদিকে সহিংসতা মোকাবেলা করে জনগণের জন্য তথ্য দেয়ার কাজটি করতে সাংবাদিকদের জন্য রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা দরকার, কোনভাবেই বৈরিতা নয়। কারণ মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধান স্বীকৃত। আর এই বাস্তবতায় বিভিন্ন পক্ষের সহযোগিতার কোন বিকল্প নেই। গণমাধ্যমের উন্নয়ন রাষ্ট্রীয় নীতিতেই থাকতে হবে।  

আবার সাংবাদিকদের নিরাপত্তার প্রশ্নে গণমাধ্যম নিজেরও প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ থাকতে হবে।  আর যে সুপারিশগুলো এসেছে সেগুলো এরকম:

-    সব পক্ষকে মানতে হবে যে, গণমাধ্যম কর্মিদের নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
-    স্থানীয় পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিতে হবে সব পরিকল্পনায়।
-    এ ক্ষেত্রে গবেষণা ও মূল্যায়ন ধর্মী কাজ করতে হবে।
-    নানা স্তর, গোষ্ঠি ও বিভাগের সাথে নিয়মিত মত বিনিময়।
-    দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা করা।
-    গণমাধ্যমের উন্নয়নের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা।
-    সাংবাদিকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেয়া।
-    গুণগত মান সম্পন্ন গণমাধ্যম উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া।

syed

এইচআর/এমএস

আরও পড়ুন