ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

নৌপথে আর কতো লাশের ভেলা?

প্রকাশিত: ০৬:২৭ এএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বরিশালের বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীতে ‘এমএল ঐশী’ নামের লঞ্চডুবির ঘটনায়  ১৮ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা আবারো প্রমাণ করলো নৌপথ এখনো কতোটা অনিরাপদ। নৌদুর্ঘটনা রোধে নানা রকম উদ্যোগের কথা বলা হলেও যাত্রী নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। যে কারণে অহরহ দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেই চলেছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। নইলে এ ধরনের মৃত্যুর মিছিল বাড়তেই থাকবে। নিরীহ নিরপরাধ মানুষগুলো লঞ্চ মালিকের লাভ ও লোভের বলি হয়ে লাশের ভেলা হয়ে নদীতে ভাসবে।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বানারীপাড়া উপজেলার সন্ধ্যা নদীতে অর্ধশতাধকি যাত্রী নিয়ে এমএল ঐশী-২ নামের লঞ্চটি ডুবে যায়। এতে ১৮ জন যাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিরা নিখোঁজ। নদীর স্রোতে এবং ঘাট এলাকায় ভাঙনের কারণে লঞ্চটি ডুবে গেছে এমনটি বলা হলেও এটি ছিল একটি ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চ। বিস্ময়কর ঘটনা হচ্ছে ট্রলারের কাঠামো পরিবর্তন করে এমএল ঐশীকে লঞ্চ বানানো হয়েছে। যাত্রীবাহী লঞ্চটির কোনো রুট পারমিট নেই, এমনকি সার্ভে সনদও নেই। এটি গোপনে বানারীপাড়া থেকে উজিরপুর নৌরুটে যাত্রী পরিবহন করছিল। প্রশ্ন হচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায় এ ধরনের একটি ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চ কিভাবে চলাচল করছিল? এগুলো দেখার কি কেউ নেই? নাকি গণহারে মৃত্যুর মিছিলে শরীক হয়ে নিরীহ যাত্রীরা এভাবে জীবন দিয়েই কর্তৃপক্ষের ক্ষমাহীন দায়িত্বহীনতার মাশুল দিয়ে যাবে?  

নৌদুর্ঘটনা নতুন নয়। প্রাণহানির ঘটনাও যেন অনেকটা রুটিন বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতিবছর নৌ-দুর্ঘটনায় ২০৭ জন জীবন হারাচ্ছেন। নৌ, সড়ক ও রেল খাত রক্ষা জাতীয় কমিটির হিসাব মতে, ১৩ বছরে নৌ-দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুই হাজার ৬৮৮ এবং নিখোঁজ হয়েছেন এক হাজার বাইশ জন। মানুষের জীবনের কোনো মূল্য থাকলে এভাবে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘায়িত হতো না। দায়িত্বে অবহেলা ও দুর্নীতির কারণে দেশে প্রতিবছর নৌ-দুর্ঘটনা বাড়লেও তা দেখার যেন কেউ নেই। নৌ মন্ত্রণালয় অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে নানা কথা বলে কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছু একটা হয় না। নাহলে দুর্ঘটনায় এতো প্রাণহানি ঘটে কী করে?

নৌপথগুলোতে ফিটনেসবিহীন নৌযান চালানো দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু নৌপথে ফিটনেসবিহীন নৌযানের ছড়াছড়ি। এছাড়া প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যতিরেকেই চলে অধিকাংশ নৌযান। এসব তদারকির  জন্য রয়েছে নৌপরিদর্শক। এছাড়া ১ম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের নিয়মিত পরিদর্শন করার কথা রয়েছে। এরপরও দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এ অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন। লঞ্চডুবির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নৌপথ নিরাপদ হোক-এটিই দেখতে চাই আমরা।

এইচআর/এবিএস

আরও পড়ুন