ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

কেউ ভোলে না কেউ ভোলে

প্রকাশিত: ০৩:৪৮ এএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আজ থেকে পঁচিশ বছর আগের কথা।
আমি তখন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ছাত্র সংসদের টানা তিন বারের মত সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছি। মেডিক্যাল কলেজকে `শিল্পকলা একাডেমী" বানানোর জন্য আমাকে দোষারোপ করা হয়েছে। সে সুনামের (বদনামের) ঝুড়ি মাথায় নিয়ে আমার সাধ হলে মেডিক্যাল কলেজের প্রথমবারের মতো "কলেজ দিবস`` করার।

আমার মতো পাগলের পাগলামি উস্কে দেবার মতো আরও একজন ছিলেন সে সময় আমাদের ক্যাম্পাসে। তিনি হলেন আমাদের প্রচণ্ড পছন্দের একজন শিক্ষক, অধ্যাপক চৌধুরী বি মাহমুদ। আমাদের মেডিক্যাল কলেজকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন তিনি। প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে তিনি মনে প্রাণে নিজের সন্তান মনে করতেন।
‘কলেজ দিবসের’ পরিকল্পনাটা তাকে খুলে বললাম। সারাদিনের অনুষ্ঠান। কলেজের বর্তমান ছাত্রছাত্রী আর প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা তাদের উপস্থিতিতে মুখরিত করবে ক্যাম্পাস। বিশাল আনন্দ মিছিল হবে। "যেমন খুশি তেমন সাজবে" সবাই। দুপুরে "খাটি চাটগাইয়া মেজবান"। বিকেল থেকে মিলনায়তনে বর্তমান আর অতীতের সব ছাত্রছাত্রীর আনন্দ উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর স্মৃতি চারণ।
দুজনে মিলে হই হই করে চলে গেলাম আমাদের তখনকার শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ অধ্যাপক নুরুন নবী স্যারের কাছে। তিনিও খুব উৎসাহিত হলেন। আমাদের সাথে যোগ হলেন অধ্যাপক আব্দুল মান্নান শিকদার, এল এ কাদেরি, ইমরান বিন ইউনুস, সুলতান উল আলম, আবুল বশর, বোরহান উদ্দিন আহমেদ, মমতাজ বেগমসহ আরও অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা।
দিন-ক্ষণ ঠিক নিয়ে বহু বিতর্ক হোল। সবাই মিলে ঠিক করলেন আমাদের প্রিয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের প্রথম " কলেজ দিবস` এর দিন-৬ই ডিসেম্বর, ১৯৯১।
তারপর সব এক ইতিহাস।
বিশাল উৎসাহ-উদ্দীপনা। আমাদের অল্প বাজেটে বিশাল এক উৎসব হোল। এখন ও মনে পড়ে উৎসবের আগের দিন আমাদের মেজবান কমিটির সদস্য রেজা আর সুমন কিনে এনেছিল বিশাল দুই মেজবানের গরু। সারা রাত ধরে সংসদে চলেছিল মেজবানের প্রস্তুতি। কি দিনই না ছিল তখন!
দীর্ঘ পঁচিশ বছর পর আবার হচ্ছে "কলেজ দিবস"। বিশাল এর ব্যাপ্তি। সামাজিক যোগাযোগের এ স্বর্ণযুগে সারা দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে আমরা সবাই আজ উৎসবের জোয়ারে ভাসছি।
পঁচিশ বছর আগে আমি কয়েকটি স্বপ্নের কথা বলেছিলাম। সে কথাগুলো আজও বলতে চাই।
আমাদের "কলেজ দিবস" টি যেন প্রতি বছর ই উদযাপিত হয়।
এ সময় আমাদের কলেজে একটি " ছাত্র কল্যাণ বিষয়ক বিভাগ" শুরু করা জরুরি। সেখানে কয়েকজন পূর্ণকালীন কর্মচারী থাকা উচিত। তারা কলেজের প্রাক্তন ছাত্রদের নানা বিষয়ে প্রশাসনিক সয়াহতা করবেন, কলেজ দিবস উদযাপনে সহায়তা করবেন, দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রাক্তন ছাত্রদের সংগঠনের সাথে সম্পর্ক রাখবেন। তারা একটি "ছাত্র কল্যাণ ও ছাত্র বৃত্তি তহবিল" চালু করবেন, যেখানে প্রাক্তন ছাত্ররা নিয়মিত দান করতে পারবেন। তারা দেশে বিদেশে ছড়িয়ে থাকা প্রভাবশালী প্রাক্তন ছাত্রদের সাথে যোগাযোগ করে বর্তমান ছাত্র ছাত্রীদের জন্য উচ্চ শিক্ষা, গবেষণা ও পারস্পরিক সহযোগিতার পথ খুলে দেবে। ইচ্ছুক বিত্তশালী প্রাক্তন ছাত্রদের জন্য "কলেজ উন্নয়ন তহবিল" চালু করার প্রকল্প ও তারা নিতে পারেন। সে তহবিল থেকে নতুন ভবন, নতুন প্রযুক্তি, নতুন শিক্ষাদান পদ্ধতির জন্য অনুদান গ্রহণ করা যাবে।
আমাদের এ আনন্দ উৎসব যেন নিছক আনন্দেই শেষ না হয়ে যায়।আমাদের এ উৎসবের মাঝে আমরা আমাদের প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কে যেন আর অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি সেটিই যেন হয়।
আমাদের প্রিয় দুটি শিক্ষক যারা আমাদের প্রথম ‘কলেজ দিবস’টিকে বাস্তবে নিয়ে এসেছিলেন, অধ্যাপক চৌধুরী বি মাহমুদ এবং অধ্যাপক নুরুন নবী আজ তারা আমাদের মাঝে নেই। আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
আশা করি আমাদের উৎসবের রঙে রঙিন সব ছাত্র ছাত্রী আজকের এ দিনে
তাঁদের কথা মনে করবেন, প্রথম "কলেজ দিবসের` স্বপ্ন যারা সার্থক করেছিল তাঁদের মনে করবেন।
"কেউ ভোলে না, কেউ ভোলে......"

লেখক : ডা. বিএম আতিকুজ্জামান, পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিভাগীয় প্রধান, ফ্লোরিডা হাসপাতাল, ফ্যাকাল্টি, কলেজ অব মেডিসিন, সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটি

এইচআর/পিআর

আরও পড়ুন