ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

সবটাই তাদের হতে পারে না

প্রকাশিত: ০৪:০৩ এএম, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কোনো সন্দেহ নেই যে বাংলাদেশের মোবাইল বিপ্লবে বিদেশি টেলিকম অপারেটরদের বিরাট অবদান আছে। অবকাঠামো নির্মাণ থেকে সেবাদান পর্যন্ত তারা চমৎকার ব্যবসাও করতে পেরেছেন। এখন  বাংলাদেশের ব্যবহার উপযোগী জনসংখ্যার প্রায় সবার হাতেই মোবাইল রয়েছে। দেশের শতকরা ৯৮ ভাগ ভূখণ্ড মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় রয়েছে। মোবাইলে সেবার সম্প্রসারণ হয়েছে এবং টাকা পয়সার লেনদেন থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় তথ্য পাবার জন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক একটি বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।

বিদেশি টেলিকম অপারেটররা প্রধান দুটি বিষয়ে অহংকার করে থাকে। প্রথমত তারা সরকারকে বিপুল রাজস্ব প্রদান করে এবং দ্বিতীয়ত তারা বিপুল বিদেশি বিনিয়োগ করেছে। দুটিই সত্য কথা। তবে তারা একবারও বলে না যে, তাদের বিনিয়োগের চাইতে বড় বিনিয়োগটা বাংলাদেশের জনগণের। তারা তাদের জাতীয় সম্পদ তরঙ্গ তাদেরকে ব্যবহার করতে দিয়েছে বলেই বাতাস বেচে তারা আমাদের পকেট খালি করতে পারে।

অন্যদিকে এখন প্রশ্ন ওঠেছে যে তাদের অহংকারের দুটি কারণেই কি তাদের হাতে পুরো দেশ জিম্মি হতে পারে?  এমন কি হতে পারে যে, আমাদের খানাপিনা, থালাবাসনতো বটেই চেটেপুটে হাতের কব্জিও খেয়ে ফেলবে তারা। এমনকি হতে পারে যে তারা গাছেরটা খাবে তলারটাও কুড়াবে?  তাদের কি নিজেদের হিসাব নাই যে তাদের বিনিয়োগ টাকা আনা পাইতে শতকরা কত ভাগ ফেরত গেছে?

খুব ছোট করে হলেও আমরা আমাদের বিদেশি মোবাইল অপারেটরদের সব কিছু গিলে খাবার কু-ইচ্ছা নিয়ে আলোকপাত করতে চাই। তারা যদিও এখনও ভয়েস কল থেকেই সবচেয়ে বেশি রাজস্ব পায় তবুও এটি বোধহয় ভাবার সময় হয়েছে যে দুনিয়া থেকে এক সময়ে মোবাইল ফোনের ভয়েস কল বিদায় নেবে। এখনই ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ যারা ব্যবহার করেন তারা বস্তুত ভয়েস কলের ধার ধারেন না। ফলে আমি মনে করি যে, তাদের নজর এখন ইন্টারনেটে থাকা উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইন্টারনেট তাদের ইচ্ছার বলী হয়েছে। তারা তাদের ইচ্ছামতো ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণ করছে। ইচ্ছামতো প্যাকেজ বানাচ্ছে। ওরা কিনছে ব্যান্ডউইদথ-আর বিক্রি করছে ডাটা।  

অনেকেই হিসাব করে দেখেছেন যে তারা ডাটা প্যাকেজ বানিয়ে দেশের কোটি কোটি ইন্টারনেট গ্রাহককে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সরকার দফায় দফায় ব্যান্ডউইদথ-এর দাম কমালেও এই অপারেটররা ইন্টারনেটের দাম কমায়নি। তাদের স্বেচ্ছাচারী এইসব প্যাকেজের ক্ষেত্রে বিটিআরসির নিয়ন্ত্রণ থাকার কথা। বস্তুত বিটিআরসির নির্ধারণ করার দায়িত্ব যে ইন্টারনেটের দাম কি হবে। কিন্তু বিটিআরসি এই মূল্য নিয়ন্ত্রণে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এই সংস্থাটি দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না। বরং বিদেশি অপারেটরদের ইচ্ছায় পুরো দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা জিম্মি হয়ে রয়েছে। অন্য দিকে থ্রিজি নামক প্রযুক্তি প্রয়োগের কথা থাকলেও যে মানের ব্যান্ডউইদথ ব্যবহারকারীদের পাবার কথা সেটি কেউ পাচ্ছে না। ওরা প্যাকেজ তৈরি করে ৫১২ কেবিপিএস-এর আর আমরা গতি পাই ২ কেবিপিএস। লক্ষণীয় যে এসব অপারেটরদের কারও ব্যান্ডউইদথভিত্তিক আনলিমিটেড প্যাকেজ নাই।                                                                                                                             
তারা কেবল ইন্টারনেটের গ্রাহকদেরকেই ঠকাচ্ছে না, তারা দেশের বিকাশমান ভ্যালু এডেড সেবার পুরোটা গিলে খেতে চাইছে। শুরুতে ওরা ভ্যালু এডেড সেবার নামে পাইরেসিতেই লিপ্ত ছিলো। তখন তারা গানের শিল্পী থেকে শুরু করে সৃজনশীল সঙ্গীত খাতের কপিরাইট লঙ্ঘন করে রিং টোনের ব্যবসা করেছে। বস্তুত বাংলাদেশে ডিজিটাল পাইরেসির জন্ম হয়েছে তাদের হাতে। দিনে দিনে দেশে যখন ডিজিটাল সেবাদানকারীদের জন্ম হতে থাকে তখন তারা তাদের সাথে রাজস্ব ভাগাভাগির উদ্যোগ নেয়। সেই সময়েই একটি ভ্যাস নীতিমালা তৈরির জন্য বিটিআরসির পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হয়। আমি পরম শ্রদ্ধার সাথে বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম জিয়া আহমদ শেলীর কথা স্মরণ করতে পারি, যিনি অতি দ্রুত নীতিমালাটি প্রণয়নের জন্য কাজ করছিলেন। কিন্তু তার অকাল মৃত্যুর পর বিটিআরসির সকল তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায়। বিদেশি অপারেটররা তাদের স্বেচ্ছাচারিতার কাজটি চালানোর জন্য বিটিআরসির এই নীরবতা সহায়ক হয়।

বিষয়টিকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফেোর্সের সভায় উত্থাপন করার পর সেই কমিটি নীতিমালা না হওয়া পর্যন্ত আধাআধি হারে রাজস্ব ভাগাভাগি করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কদিন আগে ভ্যাস-এর শেয়ার  মোবাইল অপারেটররা ৫০:৫০ কে ৭০ (ওদের): ৩০ করতে চেয়েছিলো। তবে সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপের ফলে সেটি সরাসরি করতে না পারলেও এইসব অপারেটরদের কেউ কেউ এমনকি এখনও সরকারের আদেশ অমান্য করে কনটেন্টপ্রদানকারীদেরকে শতকরা ২০ ভাগ দিয়ে নিজেরা ৮০ ভাগ নিয়ে নিচ্ছে।  ভ্যালু এডেড সেবাদানকারীদের নানা অভিযোগ আছে এদের বিরুদ্ধে। ধারণা  চুরি করা থেকে নিজেরা এই ব্যবসায় যুক্ত হওয়া পর্যন্ত সকল কিছুতেই তারা স্বেচ্ছাচারী আচরণ করে থাকে।

সর্বশেষ যে বিষয়টি তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতকে আতঙ্কিত করেছে সেটি হচ্ছে, এই বিদেশি টেলিকম অপারেটররা নিজেরা ই-কমার্স ব্যবসায় লিপ্ত হচ্ছে। প্রথমত এই প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স হচ্ছে মোবাইল কানেকটিভিটি প্রদান করা। ই-কমার্স ব্যবসা করা তাদের লাইসেন্সের আওতায় পড়া উচিত নয়। এটির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নেটওয়ার্ক নিরপেক্ষতা নিয়ে। অপারেটররাই যেহেতু নেটওয়ার্ক প্রদান করে সেহেতু তারা যদি নিজেদের ই-কমার্স সাইটকে নেটওয়ার্কে প্রবেশগম্যতা সহজ করে দেয় ও প্রতিদ্বন্দ্বীকে নেটওয়ার্ক প্রবেশগামীতার জন্য  বাধাগ্রস্ত করে তবে একটি অসম প্রতিযোগিতার চরম পরাকাষ্ঠা আমরা দেখতে পাবো।

সার্বিকভাবে আমরা এটি বলতে চাই যে বিদেশি টেলিকম অপারেটরদের কাজ হচ্ছে নেটওয়ার্ক সেবা প্রদান করা। তারা যদি সকল ব্যবসাতেই যুক্ত হতে চায় এবং নিজেরাই সব নিয়ন্ত্রণ করতে চায় তবে দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতের বিশাল অংশ বিকশিত হতে পারবে না। অন্যদিকে তারা যদি তারহীন ইন্টারনেটের ক্ষেত্রটিকে স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হতে না দেয়, যদি ইন্টারনেট সেবা যথাযথ না হয় এবং সেটি যদি জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মাঝে না আসে তবে আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি সেটি সফল হবে না।

লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ,  কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার-এর জনক।

[email protected], www.bijoyekushe.net, www.bijoydigital.com

এইচআর/পিআর

আরও পড়ুন