আফসানার মৃত্যুরহস্য উদঘাটন করুন
আফসানা ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকায় এসেছিল ইঞ্জিনিয়ার হতে। কিন্তু রাজধানীর মিরপুরের সাইক ইনস্টিটিউটের স্থাপত্যবিদ্যার শেষ বর্ষের এই শিক্ষার্থীর জীবন প্রদীপ নিভে গেল। তার মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে মেনে নিতে পারছে না পরিবার। তাদের দাবি, আফসানাকে হত্যা করা হয়েছে। এ ধরনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা পরিবার তো বটেই, যে কারো জন্য মেনে নেয়া কঠিন। তাই এই মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করা অত্যন্ত জরুরি।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী জানা যাচ্ছে যে, গত শনিবার বিকেলে দুই যুবক অটোরিকশায় আফসানাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। জরুরি বিভাগে তাকে রেখে সিএনজি ভাড়া মেটানোর কথা বলে তারা পালিয়ে যান। ওই দিন রাতেই অপরিচিত মোবাইল থেকে তার মাকে ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়। খবর পেয়ে তার মা ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকার আত্মীয়দের বিষয়টি জানান। পরে গভীর রাতে স্বজনরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে তার লাশ শনাক্ত করেন। তার গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া উপজেলার কানিকশালগা গ্রামে।
আফসানা মিরপুরের মানিকদীতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বান্ধবীদের সঙ্গে থাকতেন। পরিবারের অভিযোগ, আফসানাকে তেজগাঁও কলেজ ছাত্রলীগের নেতা রবিন ও তার সহযোগীরা হত্যা করেছেন। এখন ‘আত্মহত্যার নাটক’ সাজিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল ঢাকা ও ঠাকুরগাঁওয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে। ঢাকার সমাবেশ থেকে আগামী শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্র ইউনিয়ন।
উল্লেখ্য, আফসানা ছাত্র ইউনিয়নের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
আফসানার মৃত্যুরহস্য উদঘাটন অত্যন্ত জরুরি। এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। এটা দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটেরই একটা অংশ। এর আগে তনু, মিতুসহ আরও অনেকেই খুনের শিকার হয়েছেন। কোনোটিরই সুরাহা হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে দেশটা অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হবে। একটি মেয়ে রাজধানীতে পড়তে এসে এভাবে অকালে চলে যাবে- এটা নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটেও ভয়ানক ব্যাপার। আফসানার যদি স্বাভাবিক মৃত্যুই হতো, তাহলে যারা তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল তারা তাকে রেখে পালিয়ে গেল কেন? এই মৃত্যুর পেছনে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতার নাম এসেছে। তাই ঘটনাটি যেন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে এ ধরনের মৃত্যুরহস্য উদঘাটন ও দোষীদের শাস্তির কোনো বিকল্প নেই।
এইচআর/আরআইপি