শোক হোক শক্তি
আগস্ট শোকের মাস। বেদনার মাস। এই মাসেই আমরা হারিয়েছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্রের নির্মম ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সপরিবারে জীবন দিতে হয় বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারী এই নেতাকে। কিন্তু শত্রুরা যা ভেবেছিল তা হয়নি। সপরিবারে হত্যা করে তার নাম নিশানা মুছে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হলেও বাঙালি জাতির রক্তে মিশে আছে বঙ্গবন্ধুর নাম। লোকান্তরে থেকেও তিনিই জাতির চলনে মননে নিরন্তর অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছেন। তাই আগস্ট বেদনার মাস হলেও এই মাসেই শোককে শক্তিতে পরিণত করে বাঙালি তার চেতনাকে নতুন করে শানিত করে।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালোরাতে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী, তিন ছেলেসহ পরিবারের ১৬ জনকে হত্যা করে। তবে দেশের বাইরে থাকায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। এই হত্যার ধারাবাহিকতা ঘাতকরা চালিয়েই যাচ্ছে। তাদের ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট জাতির জনকের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা করা হয়। ফলে ২৪ আগস্ট আমরা হারাই মহিলা নেত্রী, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী আইভী রহমানসহ অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে।
নানা ষড়যন্ত্রের পরও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার জন্য এখন উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ এখন ২৮ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। ঘাতকদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। তবে অনেকেই পলাতক থাকায় এখনো তাদের দণ্ড কার্যকর করা যায়নি। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করতে হবে। এছাড়া যুদ্ধাপরাধের বিচারও চলছে। চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের অনেকেরই ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। বাকিদেরও বিচার চলছে। এর মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও কলঙ্ক মোচনের দিকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
এ বছর আগস্ট এসেছে এমন এক সময় যখন দেশ হিংস্র জঙ্গিবাদের থাবায় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, এরই মধ্যে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একটি গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে জঙ্গিবাদের ভয়াল থাবা থেকে বাংলাদেশ অচিরেই মুক্ত হবে- এমন আশা করা যায়।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা, দারিদ্র্য, দুর্নীতি ও বৈষম্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক উন্নতসমৃদ্ধ বাংলাদেশ। যার যার অবস্থান থেকে দেশের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে দেশ গঠনে ভূমিকা রেখে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারলেই তার প্রতি প্রকৃত অর্থে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা সম্ভব হবে। আমাদের লক্ষ্য হোক সেই দিকে।
এইচআর/আরআইপি