ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

ভয়কে জয় করতে হবে

প্রকাশিত: ০৩:৫১ এএম, ০১ আগস্ট ২০১৬

আমেরিকান ক্লাবে যারা সংবাদ সম্মেলন কাভার করতে গিয়েছেন আগে বা এখনও তারা জানেন, কঠিন নিরাপত্তার বেড়াজাল। সাত/আট বছর আগে দেখতাম, একজন একজন করে সাংবাদিককে সব চেক টেক করে একটা করে স্টিকার লাগিয়ে দেয়া হতো পোশাকের সঙ্গে। ছাপ্পা মারা হয়ে ভেতরে ঢুকতে হতো। আমরা সাংবাদিকরা এটাকে সহযোগিতাই করতাম। একটা দেশের সিকিউরিটি কনসার্নকে সহায়তা না করার কোন কারণ তো নাই। তখন এসব জঙ্গী বা গুলশান এটাকের মতো ঘটনা বাংলাদেশিরা কল্পনা পর্যন্ত করতে পারতো না। তবু তো আমরা সহযোগিতা করেছি।

আর এখন গুলশান এটাকের পর অবস্থা যে কতটা ভয়াবহ তা নিশ্চয় সহজেই অনুমেয়। মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক বাড়িয়ে তোলার জন্যই তো বিভিন্ন মিশনের কর্মকাণ্ড। কূটনীতির ভাষায় এখন বলে, ‘পিপল টু পিপল কানেকশন।’ এর সাথে অর্থ-বাণিজ্য থাকে, রাজনীতিক নানান হিসাব থাকে। গুলশান এটাকের পর অনেক হিসাব-নিকাশই পাল্টে গেছে। সন্ধ্যার পর গুলশান দুই এর ঐদিকটায় গেছেন কেউ? একটা হলি আর্টিজান এটাক একটা এলাকাকে কিরকম মৃত এলাকায় পরিণত করেছে ভাবা পর্যন্ত যায় না। ঐ এলাকার ১৬০০ প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সুন্দর, ছায়া-ছায়া, গোছানো একটা এলাকা, বিদেশিদের জন্য একটু নিঃশ্বাস ফেলার জায়গাটা কেমন অচেনা এখন।

আগের সপ্তাহেই বলেছি, বেশ কয়েকটা মিশন তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। এই সপ্তাহেও সেই ধারা অব্যাহত। তার মধ্যে মরার উপর খাড়ার ঘা ২৭ জুলাই ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে বিজ্ঞপ্তি দিল, ব্রিটিশ কাউন্সিলের কর্মকাণ্ড বন্ধ করা হচ্ছে আপাতত: । এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললাম, বললেন, বাড়ি বসে কাজ করছি। একসময় ব্রিটিশ কাউন্সিলে মুভি দেখতে যেতাম। ভালো নাটকের শো ও হতো। জানিনা এখন আর এসবের চল আছে কি না।আরেকটা মিশনের ক্লাবে একজন কর্মকর্তা চায়ের দাওয়াত দিয়েছিলেন, যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়ার পর তিনি জানালেন, স্যরি, ক্লাবে হবে না। ওখানে মিশনের কর্মকর্তা ছাড়া সবার প্রবেশ নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। ভদ্রলোক হাসতে হাসতে বললেন, ক্লাব এখন কাঁচাবাজার হয়ে গেছে বিদেশিদের। যতটুকু যা করার এর মধ্যেই তারা করছেন। বাংলাদেশিদের প্রবেশ বন্ধ। আরেক মিশনের কর্মকর্তা জানালেন, তাদের সকল কূটনীতিকের বাড়িতে পুলিশ প্রহরা বসেছে। তা বসুক। কিন্তু গুলশানের ১৬০০ প্রতিষ্ঠান উঠিয়ে দেওয়া, ঐ এলাকায় জনপরিবহন চলতে না দেওয়া সর্বোপরি একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে লাভটা কার হচ্ছে?

আমার পরিচিত এক ভদ্রমহিলা বাসায় নাস্তা বানিয়ে গুলশানের ইংরেজি স্কুলের ক্যান্টিনগুলোতে সার্ভ করতেন, তার ব্যবসা বন্ধ এখন। স্কুলই আজ খোলা তো কাল বন্ধ থাকছে। আর ১৬০০ প্রতিষ্ঠান বন্ধর যে অর্থনৈতিক ক্ষতি তার হিসাব নিশ্চয়ই অর্থনীতিবিদরা করছেন। এইটাই কি জঙ্গীরা চেয়েছিল? শংকিত চিত্ত? আমরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো, আমাদের স্বাভাবিক চলাফেরা বাধাগ্রস্থ হবে, কূটনীতিকরা জরুরি অবস্থা থাকা দেশগুলোয় যেভাবে চলাফেরা করবে, সেভাবে এখানেও চলাফেরা করবে এবং ধীরে ধীরে তাদের মঞ্জিলে মকসুদে যাওয়া সহজ হবে।

‘পিপল টু পিপল কানেকশনে’র বারোটা বেজে তেরোটায় ঝুলছে অনেক আগেই। বাইরে থেকে কৃত্রিমভাবে কোনো সমাধান করা বা পুলিশ চেকপোস্ট দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হয় কি না জানা নেই। কিন্তু আপাতত: এই ভয়ের পরিবেশ থেকে মুক্তি দেয়ার অনুরোধ সরকারের প্রতি। আমি তো বলি, রাজউকের অনুমোদন ছাড়া যদি এতোদিন এতোগুলো প্রতিষ্ঠান দোকানপাট চলতে পারে আরও কিছুদিন চলুক না। জোর করে স্বাভাবিকতা যেমন আনা যায় না অস্বাভাবিকতাও না। সবকিছু এইরকম বিরানভূমিতে  পরিণত করে ছাপ্পামারা সিকিউরিটিওয়ালাদের আমরা আরও একটু উস্কে দিচ্ছি কেন?

লেখক : কূটনীতিক রিপোর্টার, ডিবিসি নিউজ

এইচআর/আরআইপি

আরও পড়ুন