কারাগার হোক সংশোধনাগার
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সব বন্দিকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এ স্থানান্তর প্রক্রিয়া রাত সোয়া ১০টার শেষ হয়। সকাল থেকে শুরু হওয়া এ স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় মোট ৬ হাজার ৫১১ আসামিকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। এটা খুবই স্বস্তির বিষয় বন্দিদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। কেরানীগঞ্জের নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারটি প্রায় ১৯৪ একর জায়গা নিয়ে নির্মিত। এর ধারণক্ষমতা প্রায় ৬ হাজার।
নানাদিক থেকেই কেরানীগঞ্জের কারাগারটি বন্দিদের জন্য উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়েছে। অপরাধীরা যাতে সংশোধনাগার হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে সে পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। যারা দীর্ঘদিনের জন্য বন্দি থাকবে তাদের রোজগারের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এছাড়া বন্দিরা যাতে মানবিক জীবনযাপন করতে পারে, পরিবারের সঙ্গে বৈধভাবে ফোনে যোগাযোগ রাখতে পারে সেজন্য সরকারি টেলিফোনের মাধ্যমে মাসে একবার কথা বলার সুযোগ দানের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এতে বন্দিরা অনেকটাই পরিবারের সান্নিধ্য পাবে। এতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পথও তৈরি হবে। এছাড়া বিচারাধীন বন্দিরা ভিডিও কলের মাধ্যমে আদালতে হাজিরা দিতে পারবে। বন্দিদের আদালতে আনা-নেওয়া অনেক ঝুঁকির কাজ। এতে অনেক ঝামেলাও পোহাতে হয়। এ অবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার করে যদি হাজিরা নিশ্চিত করা যায় সেটি হবে অত্যন্ত ভালো একটি পদক্ষেপ।
কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে বেশকিছু কথা বলেছিলেন, যা প্রণিধানযোগ্য। রাজধানীর বাইরে দেশের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে সুরক্ষিত সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত কারাগার উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখি। জাতির পিতা আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছেন। আমাদের লক্ষ্য এই কারাগার যেন একটি সংশোধনাগার হিসেবে বন্দিসেবা দিতে পারে। যারা জঘন্য অপরাধী তাদের কথা আমি বলব না, যাদের মানুষ হবার সুযোগ রয়েছে তাদের যেন সংশোধনের সুযোগটা করে দিতে পারি।’
কথায় আছে পাপকে ঘৃণা কর পাপীকে নয়। প্রধানমন্ত্রী এই নীতির প্রতিধ্বনি করেছেন তার বক্তব্যে। অপরাধমুক্ত সমাজের কথা এখনো আমরা চিন্তা করতে পারি না। তাই বিশ্ব অচিরেই কারাগারমুক্ত হবে এমন সম্ভাবনাও কম। বিশেষ করে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থায় অপরাধের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। মানুষ অপরাধ করলে তাদেরকে গ্রেপ্তার ও বন্দি করা হয়। তবে তা হতে হবে অবশ্যই মানবিক। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (পুরাতন) ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দি রাখা হয়েছে। এটা নিয়ে অনেকদিন ধরেই কথা হচ্ছিলো। তাছাড়া দুইশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চালু থাকা কারাগারটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। এসব বিবেচনায় নতুন কারাগার নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।
কারাগার উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘যাদের মানুষ হবার সুযোগ রয়েছে তাদের যেন সংশোধনের সুযোগটা করে দিতে পারি।’ এই বক্তব্যের মাধ্যমে কারাগারকে সংশোধনাগার বানানোর যে তাগিদ দিয়েছেন জেল কর্তৃপক্ষকে এই নীতি ও আদর্শের আলোকে চলতে হবে। কেরানীগঞ্জে কারাগারকে কেন্দ্র করে যেন নতুন কোনো সিন্ডিকেট গড়ে উঠতে না পারে সেদিকে কঠোর নজদারি রাখতে হবে। দেশের সকল কারাগার হয়ে উঠুক সংশোধনাগার। কারাগারের প্রয়োজনীয়তাও একদিন ফুরিয়ে আসুক- আপাতত অবাস্তব মনে হলেও ভবিষ্যতের জন্য এই প্রত্যাশাও আমাদের থাকলো।
এইচআর/পিআর