নির্যাতিত হচ্ছেন পুরুষও!
শিরোনাম শুনে আপনার হাসি পেতেই পারে। তবে বিষয়টি হেসে উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়। চারপাশে একটু ভালো করে দেখলেই বুঝবেন, এটি কেবলই হাসি-ঠাট্টা করে বলা হয়নি। সত্যিকার অর্থেই বাড়ছে পুরুষ নির্যাতন। শারীরিকভাবে হয়তো নয়, তবে মানসিকভাবে নির্যাতিত পুরুষের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছেই। পুরুষেরা হয়তো নিজের পৌরুষের অহংকারে বা লোকলজ্জার ভয়ে তা প্রকাশ করেন না, আর সেই সুযোগটাই লুফে নিচ্ছেন কিছু সুযোগসন্ধানী নারী।
বেশিরভাগ বিয়ের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বরের যতটুকু দেনমোহর দেয়ার সাধ্য অথবা কনে যতটুকু পাওয়ার যোগ্য তার থেকে কয়েকগুণ বেশি করে দেনমোহর ধরা হয়। দেনমোহর ধার্য করা উচিৎ কনের শিক্ষাগত যোগ্যতা, রূপ, গুণ, আর্থিক ও সামাজিক অবস্থান ও বরের সামর্থ্য’র সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা করা হয় না। বিয়ের পরে যেন সহজে বিয়ে না ভাঙে তাই জোর করে দেনমোহরের বোঝা বরের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। বাসর রাতে পা ধরে মাফ পাওয়া যাবে- মনে করে বরও হয়তো তা মেনে নেয়। কিন্তু মাফ আসলে মেলে না। যে বিয়ের শুরুই হয় দর-কষাকষি দিয়ে, তা মূলত সুফল বয়ে আনে না। বরং সবকিছুর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেনমোহর ধার্য করা হলে এবং তা বিয়ে চলাকালীনই পরিশোধ করা হলে সেটাই স্বস্তিদায়ক এবং বাস্তবসম্মত। দুঃখজনক হলেও সত্যি, কিছু কনের অভিভাবককে দেখে মনে হবে, বিয়ে আসলে বিয়ে নয়, যেন ব্যবসা!
স্ত্রী নির্যাতনের খবর আমরা অহরহই পেয়ে থাকি। এবং তা এতই বেশি যে তার আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় পুরুষ নির্যাতনের খবরগুলো। আসলে পুরুষ নির্যাতনের সব খবর সব সময় খবরও হয় না। আইনগত সুবিধা এবং সংবাদের বাজারমূল্য এখনও এদেশের নারীদের একতরফা দখলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, একজন নারী তার বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ আনলেই অভিযুক্ত পুরুষটি এবং তার পরিবারকে (যদি তারা প্রভাবশালী না হন) হয়রানি করা হচ্ছে। এসব অভিযোগ যে সবসময়ই সত্যি হয়, এমন কিন্তু নয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশল হিসেবে নারী নির্যাতনের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। সবচেয়ে হাস্যকর মামলাটি হচ্ছে `বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের মামলা`। এখানে বিয়ের `প্রলোভন` দেখিয়ে যে কাজটি করা হচ্ছে এবং মেয়েটিও তাতে সম্মত থাকছে, পরবর্তীতে মেয়েটিকে বিয়ে না করলেই সেটি কেন ধর্ষণ হবে? মেয়েটি তো সম্মতই ছিল। বিয়েই যদি সমাধান হয় তবে বিয়ের প্রলোভনে না পড়ে বিয়ের পরেই শয্যাসঙ্গী হওয়াই তো উচিত।
বিবাহিত পুরুষদেরও তাদের স্ত্রীর অত্যাচারে নিরীহ জীবনযাপন করতে দেখা যায়। ওখানে গেলে কেন, ওটা করলে কেন, অমুক ভাবীর এই জিনিসটা আছে আমার নেই কেন, শাড়ি-চুড়ি-গয়নার বায়নায় স্বামী বেচারার হয় দফারফা। কিছু স্ত্রী মনে করেন, তাদের স্বামী এটিএম মেশিন, চাপ দিলেই টাকা বের হয়ে আসবে! অধিকাংশ পুরুষই খারাপ হন পরিবারের সদস্যদের চাহিদার যোগান দিতে গিয়ে। স্ত্রী যদি স্বামী সামর্থ্য অনুযায়ী যা এনে দেয় তাতেই সন্তুষ্ট থাকেন, তবে সন্তানরাও সেটাই শিখবে। স্ত্রী যদি স্বামীকে ঘুষ খেতে কিংবা দুর্নীতি করতে বাধা দেন, তবে সংসারের শান্তির জন্য হলেও স্বামীটি সেসব কাজ থেকে বিরত থাকবেন।
একবার কর্তা ব্যক্তির কাছে এক লোক একটি কাজের জন্য গেল। তার পিএস জানালেন, স্যার ঘুষ ছাড়া কাজ করেন না। তবে ঘুষ খান ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে। যেমন আগামীকাল স্যারের স্ত্রী অমুক শপিং মলে শপিং করতে যাবেন। এবং শপিং শেষে কাজপ্রার্থী লোকটি যদি তার সমস্ত কেনাকাটার বিল পরিশোধ করেন তবেই লোকটি কাজটি পেতে পারেন। তাই হলো। পরদিন কর্তা ব্যক্তির স্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে গ্যাটগ্যাট করে যা মন চায় কিনে আবার গাড়িতে চড়ে ফিরে গেলেন। তিনি একবারও ভাবলেন না, এই টাকা কার, এই টাকা কীসের, যে জিনিসগুলো নিয়ে যাচ্ছি- তাতে আমার কতটুকু অধিকার, কত মানুষের অশ্রু, ঘাম আর রক্তমাখা এই টাকা!
নারী নির্যাতন কিংবা পুরুষ নির্যাতন- সম্পূর্ণ বিষয়টিই আসে মানবিকতার অভাব থেকে। নির্যাতন আমরা চাই না। সেটা নারী নির্যাতন আর কিংবা পুরুষ নির্যাতন যাই হোক না কেন। চাই আমাদের সম্পর্কগুলো মানবিক হোক। নারী পুরুষকে এবং পুরুষ নারীকে বুঝতে পারুক। একে অপরের ভালোবাসার মূল্য দিক। আবেগকে সম্মান জানাক। পরস্পরের জন্য সম্মানীয় একটি অবস্থান তারা তৈরি করুক। সংসার, সমাজ তৈরি হয় উভয়ের ত্যাগ এবং ভালোবাসার মাধ্যমে; লোভ কিংবা ঈর্ষা থেকে নয়।
লেখক : কবি, সাংবাদিক
এইচআর/এমএস