মাছে-ভাতে বাঙালির একি দশা!
‘জল আছে যেখানে, মাছচাষ সেখানে’- স্লোগানে শুরু হয়েছে সাত দিনব্যাপী জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ। গতকাল বুধবার রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট কমপ্লেক্সে এই মৎস্য সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মৎস্য সপ্তাহের স্লোগানটি ভাল। কিন্ত জলই যদি না থাকে তাহলে মাছ থাকবে কোত্থেকে। জলের আধার হচ্ছে নদী-নালা-খাল-বিল। কিন্তু নদী দখল দূষণে হারিয়ে যাওয়ায় প্রাকৃতিকভাবে মাছের উৎপাদন অনেক কমে গেছে। এখন মাছ উৎপাদনে একটি বিপ্লব ঘটলেও তা হয়েছে নিছক বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে। কাজেই মাছে-ভাতে বাঙালিকে প্রাকৃতিক মাছের স্বাদ দিতে হলে নদী-নালা-খাল-বিল বাঁচাতে হবে সবার আগে। তবেই মৎস্য সপ্তাহ বা এ ধরনের যে কোনো আয়োজন সার্থকতা পাবে।
এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, দেশে ৫৪ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ প্রায় বিলুপ্ত, ২৮ প্রজাতির মাছ চরম বিপন্ন এবং ১৪ প্রজাতির মাছ সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। এর প্রধান কারণ বাংলাদেশ এখন প্রায় খাল-বিল-নদী-নালা শূন্য। খাল-বিল ভরাট করে চলছে নানা স্থাপনা তৈরির মহোৎসব। প্রশ্ন হচ্ছে, খাল-বিল না থাকলে মাছ থাকবে কোত্থেকে? আর যেসব নদী অবশিষ্ট রয়েছে, সেগুলোতে দূষণের মাত্রা এত বেশি যে মাছের পক্ষে বেঁচে থাকা কঠিন। বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর অবস্থা সঙ্গীন।
পৃথিবীর আশ্চর্যতম এক নদীর নাম হালদা। চট্টগ্রামের এই নদীতেই মাছ একটি বিশেষ সময় ডিম ছাড়ে। অথচ দখল দূষণে এই নদীও মৃতপ্রায়। হালদা দখল করে হচ্ছে ইটভাটা, বসতবাড়ি। এটা এক আত্মঘাতী প্রবণতা। যেখান থেকে শত শত মণ মাছের ডিম উৎপাদন হয় সেখানে এখন মাছের এক মণ ডিম পাওয়াও দুস্কর। এটা মনে রাখা দরকার হালদা নদী বাঁচলেই প্রাকৃতিক মাছের বিশাল এক ভাণ্ডার রক্ষা পাবে। এছাড়া প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা, জাটকা নিধনের কারণে রূপালি ইলিশও বিলুপ্তির পথে।
কৃষিজমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে এই কীটনাশক বৃষ্টির পানি বা সেচের মাধ্যমে বিল, জলাশয়গুলোতে গিয়ে পড়ে এবং মাছের বেঁচে থাকার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এভাবে প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণে আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে মাছ। বর্তমানে মৎস্যচাষিরাও এমন প্রজাতির মাছ চাষ করছেন, যেগুলো অতি অল্প সময়ে দ্রুত বর্ধনশীল। বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক শুধু সেইসব মাছ চাষের কারণে এবং উন্মুক্ত জলাশয়ে দেশি মাছ চাষ করার ব্যাপারে অনীহার কারণেও আমরা হারিয়ে ফেলছি দেশীয় নানা মাছ। চাষের এসব মাছে কোনো স্বাদ নেই। অথচ ছোট-বড় নানা দেশি মাছের স্বাদ সে তো অতুলনীয়।
হারানো নদী পুনরুদ্ধার, নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, নদীদূষণ রোধ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, মৎস্যচাষিদের দেশীয় মাছ চাষের ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করে এ অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে-এটিই দেখতে চায় দেশের মানুষ।
এইচআর/আরআইপি